শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ধনবাড়ীতে আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে শুরু প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্ত যুদ্ধ দিবস পালিত মাধবদীতে জ্যান্ত কই মাছ গলায় ঢুকে কৃষকের মৃত্যু বদলগাছীতে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী কালীগঞ্জে কৃষক মাঠ দিবস ও কারিগরি আলোচনা লতিফ মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন নড়াইলের কালিয়া উপজেলার শ্রীনগর গ্রামে ভ্যানচালককে পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন বরিশালে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী মেলার উদ্বোধন হাতিয়ায় দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার ক্যাম্পাসে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বেলায়েত স্মৃতি কর্ণার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আমিরুল ইসলামের পক্ষে ছাত্রলীগের গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ

করোনাভাইরাসকে হাতিয়ার করে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২১

করোনাভাইরাসকে হাতিয়ার বানিয়ে স্বাস্থ্য খাতে চলছে একের পর এক দুর্নীতি। সূত্র মতে, দেশে করোনার প্রথম ঢেউ আঘাত হানলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসামগ্রী কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপিএম পদ্ধতিতে এক হাজার ২৮৫ কোটি ২২ লাখ ৪১ হাজার টাকার ১৯৬টি প্যাকেজ কেনা হয়। এর মধ্যে ৩৪৩ কোটি ২৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকার ৫৭টি প্যাকেজেই ঘটেছে অনিয়ম। গত বছরের জুন মাসে ৫৭টি প্যাকেজে কেনা মালপত্রের বিল দাখিল করার পরই আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তড়িঘড়ি করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহাদত হোসেনকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি সরকারি ক্রয়ে প্রচলিত বিধি-বিধান, পিপিএ ২০০৬, পিপিআর ২০০৮-এর নির্দেশনা অনুযায়ী প্যাকেজগুলো কেনা হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে। এতে বেরিয়ে আসে গুরুতর সব অনিয়ম। দৈনিক কালের কণ্ঠ গত ১০ এপ্রিল এ প্রসঙ্গে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে উল্লেখ্য করা হয়েছে,আর এসব অনিয়ম-দুর্নীতি বৈধতা দিতে চলছে নানা আয়োজন। করোনার প্রথম ঢেউ থেকে সারা দেশের মানুষকে রক্ষা করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৯৬টি প্যাকেজে এক হাজার ২২৫ কোটি টাকার স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনে। এর মধ্যে ৫৭টি প্যাকেজে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। এতে অর্থের পরিমাণ ৩৪৩ কোটি টাকারও বেশি। এসব পণ্য কেনার ক্ষেত্রে ক্রয়কারী কার্যালয়প্রধানের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। আনুষ্ঠানিক দর-কষাকষি, দরপত্র/প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির অনুমোদনÍকোনো কিছুই নেওয়া হয়নি। উপরন্তু অনুমোদিত বাজেটের অতিরিক্ত ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়েছে।

৫০ কোটি টাকার বেশি মালপত্র কিনলে তা অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন এবং সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। বিপুল অঙ্কের এসব পণ্য কেনায় একক মূল্য বা মোট মূল্য কোনোটিই উল্লেখ করা হয়নি। সুরক্ষাসামগ্রীর কোনো কোনোটির সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে পাওয়া যায়নি। ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। অনিয়ম-দুর্নীতি হলেও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরস ডিপোকে (সিএমএসডি) বিভিন্ন মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করছে। এত কিছুর পরও সরবরাহকারীদের ‘আস্থা অটুট রাখতে’ এখন ৩৪৩ কোটি টাকা পরিশোধ করার আয়োজন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ চিঠি দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সরকার গঠিত কমিটির তদন্তেও বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।
তবে এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও অডিট অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহাদত হোসেনকে কয়েকবার ফোন এবং মেসেজ দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
গুরুতর অনিয়মের ফিরিস্তি : তদন্ত কমিটি জেনেছে, প্যাকেজ কেনার ক্ষেত্রে পিপিআর ২০০৮ অনুসরণে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির (ডিপিএম) প্রাথমিক প্রক্রিয়াগুলোও অনুসরণ করা হয়নি। যেমনÍক্রয়কারী কার্যালয়প্রধানের অনুমোদন নেওয়া, আনুষ্ঠানিক দর-কষাকষি করা, দরপত্র/প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির সভা করা হয়নি। এসব প্যাকেজ কেনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড জারি করা হয়নি। কার্য সম্পাদন জামানত গ্রহণ করা হয়নি। কোনো সরবরাহ চুক্তি করা হয়নি। ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন চুক্তি স্বাক্ষর ছাড়া সরবরাহ আদেশও বিধিসম্মত হয়নি। সরবরাহের নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করা হয়নি। পণ্যের তালিকা থাকলে নির্ধারিত কোনো একক মূল্য ও মোট মূল্য উল্লেখ করা হয়নি। কোনো শর্ত যুক্ত করা হয়নি। কার্যাদেশের বিপরীতে অনেক ক্ষেত্রে সার্ভে ছাড়াই মালপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। এসব প্যাকেজ কেনার জন্য তখন কোনো বাজেট বরাদ্দও নিশ্চিত করা হয়নি। পাশাপাশি চাহিদাপত্রে সুনির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ বা সোর্স অব ফান্ড ছিল না। প্যাকেজ কেনার আগেই কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। চাহিদাপত্রে কোনো উৎসর উল্লেখ নেই।
তদন্ত কমিটি মনে করে, ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের আগে সরবরাহ আদেশ দেওয়া এবং মালপত্রের সার্ভে সম্পাদন ও অন্যান্য কাজ করে সে সময়ের পরিচালক অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ডেস্ক অফিসার, অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ক্রয় কার্যের সমন্বয়ক, সহকারী পরিচালক ও উপপরিচালক ক্রয় কার্যক্রমের বিভিন্ন ধাপ যথাযথ অনুসরণ না করে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন এবং অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তদন্ত কমিটি ১৬ জন কর্মকর্তাকে এসব অনিয়মের জন্য দায়ী করেছে।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক নোটে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিএমএসডির সংশ্লিষ্ট সবার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি লিখেছেন, ‘তদন্ত কমিটি কর্তৃক চিহ্নিত বিষয় যেমনÍচাহিদাপত্রে উৎসর উল্লেখ নেই, ক্রয় প্রস্তাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণ করা হয়নি, অনুমোদিত বাজেটের অতিরিক্ত ক্রয় কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিএমএসডির সংশ্লিষ্ট সবার কাছ থেকে যুক্তিসংগত বিস্তারিত ব্যাখ্যা চাওয়া হোক। সেই সঙ্গে করোনা মোকাবেলায় ক্রয় কার্যক্রমের বিষয়ে হাইকোর্ট যে নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন, এই বিষয়ে আগে ও বর্তমানে যে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে তাতে কনটেম্পট অব কোর্ট (আদালত অবমাননা) হয় কি না সে ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মতামত গ্রহণ করা হোক।’
অভিযুক্ত ১৬ কর্মকর্তা তদন্ত কমিটিকে যা বলেছেন : মন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক ১৬ জন অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী গত জানুয়ারি মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দেন। উল্লেখ্য, সিএমএসডির তখনকার পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল্লাহ মারা গেছেন। উনি ছাড়া বাকিরা তাঁদের লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, তাঁদের প্রত্যেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক তাঁর ডেস্ক-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সম্পাদনা করেছেন মাত্র। তিনি আরো বলেছেন, প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে মানুষকে রক্ষা এবং জরুরি ভিত্তিতে সেবা দিতে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ, ল্যাব স্থাপন, স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের সুরক্ষাসামগ্রী দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংগ্রহ করা চ্যালেঞ্জিং ছিল। তা ছাড়া কভিড-১৯ মোকাবেলায় ব্যবহৃত মালপত্রের সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রাখার বিষয়ে হাইকোর্ট এক রিট পিটিশনের ভিত্তিতে গত বছরের ২২ মার্চ নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তাই তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দ্রুততম সময়ে এসব কাজ করেছেন।
মালপত্র সরবরাহকারীদের যেভাবে টাকা দেওয়া হবে : নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কেনা এসব মালপত্র বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে এবং বর্তমানে তা ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত নিয়মবহির্ভূতভাবে যেসব পণ্য কেনা হয়েছে সেগুলোর সরবরাহকারীদের কোনো বিল পরিশোধ করা হয়নি। সিএমএসডি বলছে, সরবরাহকারীরা বিল পরিশোধ করার জন্য এখন নানাভাবে চাপ দিচ্ছে। তাই সমস্যাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি জানিয়ে স্বাস্থ্যসচিবকে গত ফেব্রুয়ারিতে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। চিঠিতে বলা হয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় কেনা এসব মালপত্র দিয়ে তৎকালীন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হয়েছে। তখন এসব পদ্ধতিগত ত্রুটি নিয়ে কোনো মহল থেকে কোনো ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়নি। এখন সরবরাহকারীরা বিভিন্ন মাধ্যমে সিএমএসডির ওপর তাঁদের বিল পরিশোধে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। এসব নিয়ে সিএমএসডির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে মাঝেমধ্যেই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনাকাক্সিক্ষত ও বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। আগের ব্যবস্থাপনার ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়ার কারণে সিএমএসডির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। গত সপ্তাহে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ অর্থ বিভাগকে পুরো বিষয় উল্লেখ করে অনিয়মের অর্থ পরিশোধে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় তহবিল কিংবা অপ্রত্যাশিত খাত থেকে তহবিল দেওয়ার অনুরোধ জানায়। প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরের বাজেটে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকার ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। আর অপ্রত্যাশিত খাতে চলতি বাজেটে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা আছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com