সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে খাস কালেকশনের নামে দুর্নীতি: জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ নতজানু নীতির কারণে হাসিনা সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদ করেননি খেলাধুলা শরীরিক ওমানসিক বিকাশ ঘটায় : রেজওয়ানুল হক পাটগ্রামের দহগ্রামে বন্যা কবলিত পরিবারের মাঝে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ত্রাণ সহায়তা প্রদান কালীগঞ্জে জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস উদযাপন ফটিকছড়িতে হামলার পর উল্টো মামলা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ! লাকসামে ১৬৫ পরিবারকে স্পেন-বাংলাদেশ সোসাইটির নগদ অর্থ সহায়তা শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে নড়াইলে হরিলীলামৃত স্কুলের শিক্ষকদের সম্মানী প্রদান ফুলপুরে বন্যার মারাত্মক অবনতি রায়গঞ্জে জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস পালিত

পোলট্রি খামারিদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২১

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর গত বছরের মার্চের শেষদিকে দেশে লকডাউন শুরু হয়। দফায় দফায় এর মেয়াদ বাড়ানো হয়। দীর্ঘ এ লকডাউনের সময় লেয়ার মুরগি বিক্রি ৩৫ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি ৬০ শতাংশ এবং একদিনের মুরগি বিক্রি কমে গিয়েছিল প্রায় ৫০ শতাংশ। পোলট্রি খামার বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছিলেন একদিনের বাচ্চা উৎপাদনকারীরা। এক মাসের ব্যবধানে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত শতাধিক ফার্মে বাচ্চা উৎপাদন বন্ধ করতে হয়েছিল। এছাড়া নষ্ট করতে হয়েছিল প্রায় এক কোটি পিস একদিনের বাচ্চা। সব মিলিয়ে এ খাতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এদিকে চলতি মাসে ঘোষিত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সামনের দিনে কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় গত কয়েক দিনে একদিনের মুরগির বাচ্চার দাম কমে গেছে। এর প্রভাবে বাজারে মুরগির দামও কমতির দিকে। ডিমের দামও কমেছে। এতে ক্রেতার স্বস্তি মিললেও খামারিদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা শঙ্কা প্রকাশ করছেন, কঠোর লকডাউন হলে পাইকারি বাজার থেকে শুরু করে খুচরা বাজার-হাটে ক্রেতার উপস্থিতি ব্যাপক হারে কমবে। এ কারণে সব ধরনের পোলট্রি পণ্য বিক্রিতে ধস নেমে আসতে পারে।

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের লকডাউন ও সাধারণ ছুটিতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল পোলট্রি খাতে। ক্রেতাশূন্যতা ও বাজারে প্রবেশ করতে না পারায় লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগির বিক্রি কমে গিয়েছিল। একদিনের মুরগি বিক্রি ও ডিমের দামও কমে যায়। এ বছরও নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হওয়ায় এক সপ্তাহের লকডাউন চলমান থাকাকালেই আরো এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউনে যাওয়ার চিন্তা করছে সরকার। সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এ লকডাউনের মেয়াদ আরো বাড়তে পারে। এ অবস্থায় লকডাউন আতঙ্কে ভুগছেন দেশের পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও খামারিরা। তারা আবারো পোলট্রি খাতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। এজন্য লকডাউন হলে আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের (ডিএলএস) তথ্য বলছে, দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষ চাহিদার প্রায় ৪৫ শতাংশ সরবরাহ করছে পোলট্রি খাত। আত্মকর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দৈনিক ডিম উৎপাদন ছাড়িয়েছে ৪ কোটি ৬৬ লাখ পিস, দৈনিক মুরগির মাংস উৎপাদন তিন হাজার টন, একদিন বয়সী বাচ্চা প্রতি সপ্তাহে উৎপাদন হচ্ছে ১ কোটি ৮০ লাখ, দৈনিক পোলট্রি ফিড উৎপাদন হচ্ছে ৯ হাজার ৮৬৩ টন। খাতটিকে ঘিরেই দুই শতাধিক শীর্ষস্থানীয় করপোরেট প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আশির দশকে বছরে একজন মানুষ মাংস গ্রহণ করত মাত্র দুই কেজি আর এখন সেটি ছয় কেজিতে উন্নীত হয়েছে। আবার সেই সময়ে ডিম গ্রহণের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৮ পিস, এখন সেটি ১০৫ পিসে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে নিবন্ধিত খামার প্রায় ৭০ হাজার আর অনিবন্ধিত খামার প্রায় এক লাখ। ব্রিডার ফার্ম, হ্যাচারি, মুরগির খাবার তৈরির কারখানার মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। পোলট্রি শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে লিংকেজ শিল্প, কাঁচামাল ও ওষুধ প্রস্তুতকারক এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। সামনের দিনে দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ থাকলে পোলট্রি শিল্প বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
এ বিষয়ে বিপিআইসিসি সভাপতি ও প্যারাগন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মসিউর রহমান বলেন, গতবারের লকডাউনে আমাদের ২ টাকায় ডিম ও একদিনের বাচ্চা বিক্রি করতে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে একদিনের বাচ্চা মেরে ফেলতে হয়েছে। সেই পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সেজন্য আগে থেকেই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পোলট্রি খাতের উৎপাদিত পণ্যগুলো বাজারে প্রবেশের সব ধরনের সুযোগ ও সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন। আর জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো গেলে বাজারে পণ্যের চাহিদা তৈরি করা সম্ভব হবে।
জানা গেছে, এবার আগে থেকেই নানা উদ্যোগ নেয়া শুরু করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক ও খামারি এবং উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত মাছ, দুধ, ডিম ও পোলট্রি পণ্য বাজারজাত করার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে বাজারজাত সংকটে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত উৎপাদক, খামারি ও উদ্যোক্তাদের কথা মাথায় রেখে এবং ভোক্তাদের প্রাণিজ পণ্য প্রাপ্তির চাহিদা বিবেচনা করে এ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ৬ এপ্রিল বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত চলমান নিষেধাজ্ঞাকালে মাছ, হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু, দুধ, ডিম, মাছের পোনা, মুরগির বাচ্চা, পশু চিকিৎসা সামগ্রী, টিকা, কৃত্রিম প্রজনন সামগ্রী, মৎস্য ও পশু খাদ্য, ওষুধ ইত্যাদি পরিবহন এবং বিপণন কার্যক্রম নিশ্চিতকরণ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত ভার্চুয়াল সভায় সারা দেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় চালুর নির্দেশ দেয়া হয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com