সূতা, রং ও রাসায়নিকের মুল্য বৃদ্ধি হওয়ায় তাঁতসমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, এনায়েতপুর, তাঁত পল্লী বন্ধ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। তাঁত পল্লীতে বুননের খটখট শব্দ হারিয়ে যেতে বসেছে। কারণ হিসাবে তাঁতীরা বলছে সুতার মূল্য ৩ মাস পূর্বে যা-ছিল বর্তমানে দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে,পক্ষান্তরে উৎপাদিত কাপড়ের মূল্য বৃদ্ধি করতে পারছেনা ফলশ্রুতিতে তাঁতীরা পুঁজি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছে। স্থানীয় সুতা মিলের মালিকগণ দফায় দফায় ইচ্ছামতো সূতার মূল্য বৃদ্ধি করছে,কারণ হিসাবে তুলার মূল্য বৃদ্ধির কথা বলছে মিল মালিকরা। কিন্তু মজার বিষয় হল তুলার মূল্য বেড়েছে পাউন্ড প্রতি ২০-৩০ টাকা, কিন্তু সেই সুযোগ নিয়ে সুতার মূল্য বৃদ্ধি করেছে প্রতি পাউন্ডে ১৫০-২০০ টাকা। রং ও কেমিক্যালের মূল্যও কয়েক গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁতীদের কল্যাণে কোন পদক্ষেপ না নিলে তাঁতশিল্প ধংশ হয়ে যাবে। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে সুতা,রং ও রাসয়নিকদ্রব্যের দাম দ্বিগুন বৃদ্ধি হওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে স্থানীয় তাঁত মালিকদের। ৩ মাস পূর্বে যে কাপড়টি তৈরী করতে ৩০০টাকা পরন পড়তো,সেই কাপড়টি এখন তৈরী করতে ৬০০ টাকা পরণ পড়ছে,তাদের উৎপাদিত কাপড় সংশ্লিষ্ট উৎপাদনের উপকরনের মূল্য বেশী হলেও উৎপাদিত পণ্য বেশী দামে বিক্রি করতে পারছেন না। এ কারণে তাঁতের টানা শেষ হবার পরবর্তীতে ঐ তাঁতে সূতা দিয়ে তৈরী করা টানার কাজ আর করা সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে ঐ তাঁতটি বন্ধ হয়ে গেলো। এভাবে তাঁত পল্লীর তাঁত দিন দিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাঁত মালিকরা বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দিচ্ছেন তাদের তাঁত কারখানা। এ পর্যন্ত ৪০% তাঁত বন্ধ হয়েছে। এতে লক্ষাধিক তাঁত শ্রমিক বেকার হয়ে পরেছে। এদিকে সূতা, রং ও রাসায়নিক দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিতে তাঁত সমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, এনায়েতপুর,এলাকায় দের লক্ষাধিক (বিদ্যুৎ চালিত ও হস্তচালিত) তাঁত রয়েছে,এসব তাঁতে শাড়ী লুঙ্গী উৎপাদনের জন্য কাজ করছে প্রায় ২ লক্ষাধিকেরও বেশি তাঁত শ্রমিক। পর্যায়ক্রমে এসব তাঁত বন্ধ হয়ে গেলে এই ৩ লাখ তাঁতশ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। ইতিমধ্যে ৪০ ভাগ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে,লক্ষাধিক তাঁত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় তাঁতী সমিতির সভাপতি মোঃ মনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড করোনা কালীন সময়ে এবং বর্তমান সুতা,রং ও কেমিক্যালের ঊর্ধ্বমূল্যের বিষয়ে এ যাবৎ কোন সহযোগিতা বা তাঁতীদের কল্যাণে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন নাই। তাঁত বোর্ড গঠনের উদ্দেশ্যই হল তাঁতীদের কল্যাণ করা বা তাঁতীদের সমস্যার সমাধান করা,কিন্তু তার সামান্যতম পদক্ষেপও পরিলক্ষিত হচ্ছেনা, যাহা অত্যন্ত দুঃখজনক। চালা আদালত পাড়া গ্রামের তাঁত মালিক রুহুল আমিন,খুকনী গ্রমের তাঁত মালিক অনিক আহমেদ ও সোহাগপুর গ্রামের তাঁত মালিক শফিকুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানা, রং-সুতা ও তাঁত সরঞ্জামের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পেলে তাঁত শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। তাঁতীদের সমস্যা সমাধানে বা তাঁত শিল্পের উন্নয়নে তাঁতবোর্ড থাকলেও তাঁতীদের এই তাঁতবোর্ড কোন কাজেই আসছেনা। বেলকুচি,এনায়েতপুর এলাকা ঘুরে সাধারন তাঁতীদের সাথে কথা বলে জানা যায়,নিয়ম নীতি থাকলেও বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড গত দু’বছরে তাঁতীদের আমদানী কোন সুপারিশ ইস্যু করছেননা। তারা তাঁতঋণও পাচ্ছেনা,এমনকি করোনাকালীন কোন প্রনোদনাও পায়নি। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডে আমলা তান্ত্রিক জটিলতায় তাঁত শিল্পের উন্নয়ন কাজের পরিকল্পনা মাসের ফাইলে পরে থাকে। এতে তাঁতীরা ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এবিষয়ে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে, তাকে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক একরামুল হক রিজভী জানান,সরকারের সঠিক নজরদারি হলে তাঁত শিল্পকে আমুল পরিবর্তন করা সম্ভব বলে মনে করেন। তিনি বলেন,রং এবং সুতার বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করা দরকার। পাশাপাশি এ শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত,তাদেরকে সরকারি ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিলে তাঁত শিল্পের হারানো ঐতিহ্যে ফিরে পাবে। বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিসুর রহমান প্রতিবেদককে জানান,তাঁত শিল্পের সব সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রসাশন ও সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।