সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৮ অপরাহ্ন

রমজানের শিক্ষা ও তাৎপর্য

ইসলাম ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২১

ইসলামের মূল ভিত্তি ৫টি। কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাত। নামাজ, হজ, যাকাত যেমন ফরজ; ঠিক তেমনি রোজাও ফরজ। এই পাঁচটি ফরজ বিধানের কোনো একটিকে অস্বীকারকারী কাফের। পবিত্র রমজান মাসে ২৯ বা ৩০ দিন সুবহে সাদিকের পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো কিছু পান-আহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার নামই রোজা। রোজা ফারসি শব্দ। আরবি হচ্ছে সিয়াম। সিয়াম অর্থ বিরত থাকা।
মহানবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি শরীয়তের অনুমোদন কিংবা কঠিন ব্যাধি ব্যতীত রমজানের একটি রোজা ছেড়ে দিল, বিনিময়ে সারা বছর রোজা রাখলেও তার ক্ষতিপূরণ হবে না। (মিশকাত) তবে নারীদের জন্য মাসিক স্রাবের সময় ও সন্তান প্রসব পরবর্তী সময়ে রোজা রাখা হারাম। এই রোজা পরবর্তীতে কাজা করে নেওয়াই শরীয়তের বিধান। অপর এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলাই পরিহার করতে পারলো না, তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। অনেক রোজাদার এমন আছেন যারা ক্ষুধা-তৃষ্ণা ব্যতীত কিছুই অর্জন করতে পারে না। আবার এমন লোকের সংখ্যাও কম নয় যারা রাত জেগে ইবাদাত করে কিন্তু তাদের এই জাগরণটুকুই সার।
রোজা একমাত্র আল্লাহর জন্য। এর প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ দেবেন। রোজা রেখে অনেকে গীবত করে। এটা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। এ প্রসঙ্গে দুই নারীর রোজা বিষয়ে প্রিয়নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) বলেন, তারা হালাল বস্তু বর্জন করে রোজা রেখেছিল বটে, কিন্তু হারাম বস্তু দ্বারা সে রোজা তারা ভেঙে ফেলেছে। উল্লেখ্য, দুই নারী রোজা রেখে গীবত করেছিল।
সেহেরি: রমজান মাসের সেহেরি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেকে সেহেরি না খেয়ে রোজা রাখে এটি ঠিক নয়। এ প্রসঙ্গে প্রিয়নবী (সা.) বলেন, তোমরা সেহেরি খাও, কারণ সেহেরিতে যা খাওয়া হয় তাতে বরকত থাকে। অন্য হাদিসে আছে, সাহুরে বরকত আছে। কাজেই কখনও তোমরা সেহেরি খাওয়া ত্যাগ করো না। কিছু খাওয়া না গেলে এক ঢোক পানি হলেও পান করে নাও। কারণ যারা সেহেরি খায় তাদের প্রতি আল্লাহ রহম করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য কল্যাণের দোয়া করে।
ইফতার: ইফতার আরবি শব্দ যা অর্থ ভঙ্গ করা। রমজানে ইফতার করাও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। দিন শেষে যথাসময়ে সূর্য ডোবার পর রোজা ভঙ্গ করা। অন্তত একটি খোরমা বা খেজুর দ্বারা হলেও। রোজাদারকে ইফতার করানো হলে রোজাদারের পরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়। অবশ্য এতে রোজাদারের সওয়াবের কোনো কমতি হবে না। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে দেরি না করে ইফতার করা উত্তম।
তারাবি:ইফতারের পর তারাবির প্রস্তুতি। তারাবিহ আরবি তারবীহাতুন এর বহুবচন। এর মূল অর্থ বসা। এক সময়ে রমজানের রাতে এশার ফরজের পর বিতর নামাজের আগে যে ২০ রাকাত নামাজ পড়া হয়, তাকে তারাবি বলে। তারাবি নামাজের চার রাকাত পর বিশ্রামের জন্য বসাকে তারাবি বলার প্রচলন শুরু হয়। তারাবির নামাজ নারী-পুরুষ সবার জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা। দু’রাকাত করে ১০ সালামে ২০ রাকাত নামাজ পড়া হয়। রমজান মাসে তারাবির মধ্যে পুরো কুরআন খতম করা সুন্নতে মুআক্কাদা। তবে সেই কুরআন তেলাওয়াত স্পষ্ট ভাষায় পড়া উচিত। যাতে মুসুল্লিরা বুঝতে পারেন।
আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, কুরআন ধীরে ধীরে আবৃত্তি করো। সুতরাং ধীরে ধীরে তারতিলের সঙ্গে কুরআন তেলাওয়াত করা ফরজ। রমজানে তারাবির নামাজে কুরআন শরীফ শুনাইয়া চুক্তির মাধ্যমে এর বিনিময় নেওয়া জায়েজ নাই।
ইতিকাফ: জামে মসজিদে বালেগ পুরুষরা ইতিকাফ করবে। আর নারীরা নিজ বাসস্থানের এক কোণে ইতিকাফ করবে। অত্র মহল্লার যে কোনো একজন যদিও ইতিকাফে বসে তাহলে সবার পক্ষ থেকে এই ফরজে কিফায়া আদায় হয়ে যাবে, আর যদি কেউ ইতিকাফে না বসে তাহলে সবাই গুনাগার হবেন ফরজে কিফায়া আদায় না করার কারণে। ইতিকাফকারী শবে-কদর পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ইতিকাফকারীকে মসজিদের বাইরের লোকজনের সঙ্গে কথা বলা উচিত নয়। একান্ত জরুরি হলে বলা যায় অন্যথায় অযথা কথা বার্তা থেকে বিরত থাকা উচিত।
লাইলাতুল ক্বদর: পবিত্র কুরআনকে আল্লাহ পাক রমজান মাসে নাজিল করেছেন লাইলাতুল ক্বদরে। এ রাত হাজার মাস হইতেও উত্তম। হাজার মাস জাগ্রত থাকিয়া ইবাদত বন্দেগিতে কাটালে যে সওয়াব হবে এই একরাত্রে ইবাদাত করলে সেই পরিমাণ সওয়া পাওয়া যায়। লাইলাতুল ক্বদর নির্ধারণ করা কঠিন।
প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে- রমজান মাসের শেষ দশকের যে কোনো বেজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদর হতে পারে। তা ২৯ তারিখ দিবাগত রাতেও হতে পারে। আমাদের দেশের মানুষেরা ২৭ তারিখ রাত্রিকে বিধিবদ্ধ নিয়ম মনে করে ইবাদাত করে। এই রাতকেই তারা মনে করে লাইলাতুল ক্বদর। তবে কেউ-ই নির্দিষ্ট করে বলতে পারেন না লাইলাতুল ক্বদর কোন রাতে হবে। এ জন্য শেষ দশকের যে কোনো বেজোড় রাতে সন্ধার পর থেকেই ইবাদাত শুরু করা উচিত। রাত বেশি হলে আনুষ্ঠানিকভাবে ইবাদাত শুরু করার কোনো নিয়ম ইসলামে নেই।
ফিতরা: ম্পদশালী প্রতিটি ব্যক্তিই তার নাবালেগ সন্তানের পক্ষ থেকে নিজের ও সন্তানের ফিতরা আদায় করবে। ফিতরা ঈদের আগে দেওয়াই উত্তম। এর দ্বারা গরিব লোকজন ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারে। প্রত্যেক এলাকার উল্লেখযোগ্য খাদ্য শস্যের ১ কেজি ২৫০ গ্রাম পরিমাণের মূল্য নির্ধারণ পূর্বক গরিব-এতিম, মিসকিনকে বিনিময় ব্যতীত দান করে দেওয়াকে ফিতরা বলে।
কয়েকটি মাসআলা: রোজা অবস্থায় যদি কেউ ভুলে পানাহার করে ফেলে এতে রোজা নষ্ট হয় না। রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নেওয়া যায়। সেহেরি না খেতে পারলেও রোজা হবে তবে সেহেরি খাওয়া উত্তম। আতর ও ফুলের সুঘ্রাণ গ্রহণ করলে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না, তবে আগরবাতি জ্বালিয়ে কেউ যদি ইচ্ছেপূর্বক শুঁকতে থাকে আর ধোঁয়া কণ্ঠনালীতে প্রবেশ করে তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। রোজা রেখে দিনের বেলা স্বপ্নদোষ হলেও রোজা ভাঙে না। যদি কেউ ইচ্ছে পূর্বক স্ত্রী সহবাস করে তাহলে রোজার কাজা ও কাফফারা উভয়ই আদায় করতে হবে। যদি কেউ আত্ম-নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখেন তাহলে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে চুম্বন করতে পারবে জায়েজ আছে, আর অন্তর যদি দুর্বল হয় নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তাদের জন্য চুম্বন করা মাকরুহ।
চুম্বন করার কারণে কারও যদি বীর্যপাত হয় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। এমতাবস্থায় কাজা আদায় করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না। নারীরা রোজা রেখে সন্তানকে দুধ খাওয়ালে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। মুখের থু থু বা লালা গিলে ফেললে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। রোজা অবস্থায় মিসওয়াক করা জায়েজ আছে কিন্তু টুথপেস্ট, টুথ পাউডার, কয়লা ব্যবহার করা মাকরুহ।
শেষ কথা:রমজানের এক মাসের রোজার দ্বারা এই শিক্ষা পাওয়া যায় ধনী ব্যক্তিরা বুঝতে পারে উপবাস থাকলে কি কষ্ট হয়, সারা বছর যারা অনাহারে অর্ধাহারে থাকে কি পরিমাণ তারা কষ্ট করে তা অনুধাবন করা যায়। আর তাদের প্রতি অনুগ্রহের হাত প্রসারিত করা যায়। গরিব-দুঃখীরা না খেয়ে থেকে কী অবর্ণনীয় কষ্ট করে তা উপলদ্ধি করতে পারলে সমাজে শান্তি আনয়ন সম্ভব হয়।
মোদ্দা কথা আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য রমজানে রোজা রাখবো এবং সমস্ত ইবাদাত করবো। আল্লাহ আমাদের পবিত্র রমজানের শিক্ষা যথাযথ নেওয়ার তৌফিক দিন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com