রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সাঈদা শওকত জেনির গাড়ি আটকে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে তাকে যৌন ব্যবসায় জড়িত পাপিয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিজ-এফডিএসআর। গত বোরবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সংগঠনটির চেয়ারম্যান ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন ও মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুনের সই করা এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।
এই চিকিৎসক একজন রেডিওলজিস্ট। বিবৃতিতে বলা হয়, পতিতাবৃত্তির পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা পাপিয়ার সাথে পুলিশ ডা. জেনির তুলনা করেছে, যা একজন নারী চিকিৎসকের জন্য চরম অবমাননাকর।
এর আগে গত রোববার রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে সরকারি বিধিনিষেধের প ম দিনে ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়ে বাগবিত-ায় জড়ান চিকিৎসক, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তা, যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে ডা. জেনির গাড়ি আটকে তার পরিচয়পত্র দেখতে চান নিউমার্কেট থানার ওসি। ওই গাড়িতে এই চিকিৎসকের কর্মস্থল বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের স্টিকার লাগানো ছিল। তার গায়েও ছিল অ্যাপ্রোন। তবে ওসি চাপ দিতে থাকলে তর্কাতর্কি হয়। এর এক পর্যায়ে ওসি কাইয়ুম তাকে ভুয়া ডাক্তার বলে পাপিয়ার সঙ্গে তুলনা করেন বলে অভিযোগ চিকিৎসকের।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের প্রথম দিনেই প্রচুর সংখ্যক চিকিৎসক ডিউটিতে যাবার পথে একাধিক স্থানে পুলিশ কর্তৃক হেনস্তার শিকার হবার প্রেক্ষিতে এফডিএসআরের প্রতিবাদের মুখে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এ ধরনের হয়রানি বন্ধের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল। স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতরের পক্ষ থেকেও সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল। তারপর থেকে এ ধরনের হয়রানির সংখ্যা কমলেও লকডাউনের প ম দিনে, রোববার হাসপাতাল থেকে ডিউটি শেষে ফেরার পথে এলিফ্যান্ট রোডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত জেনি একদল পুলিশ কর্তৃক হেনস্তার শিকার হয়েছেন। ইতোমধ্যে এই ঘটনার আংশিক ধারণকৃত ভিডিও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, একদল পুরুষ পুলিশ একজন মহিলা চিকিৎসককে প্রকাশ্য রাজপথে হেনস্তা করছে। হাসপাতালে অসংখ্য কোভিড রোগীর চিকিৎসা শেষে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফেরার পথে পুলিশ ডা. সাঈদা শওকত জেনির গাড়ি থামিয়ে তার কাছে পরিচয় পত্র দেখতে চায়। এসময়ে নিজের পরিচয় ও গাড়িতে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক কর্তৃক ইস্যুকৃত মুভমেন্ট পাস, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সম্বলিত স্টিকার ও বিএসএমএমইউর লোগোসহ ডাক্তারের নামসহ অ্যাপ্রন দেখালে সবকিছুকে ভুয়া বলে পুলিশ ডা. জেনিকে চরমভাবে উত্যক্ত করে।
আংশিক ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে দাবি করে আরো বলা হয়, এই ঘটনার মাধ্যমে পুলিশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও চিকিৎসক সমাজকেও হেয় করেছে। এই ঘটনার কোনো ভিডিও করা হয়নি। অথচ ডা. জেনিকে হেনস্তা করার মাধ্যমে উত্তেজিত করে ঘটনার আংশিক ভিডিও করা হয়েছে যেখানে আমরা দেখেছি, পুলিশ ডা. জেনির কাছে অন্যায়ভাবে মুভমেন্ট পাস চেয়েছে। অথচ ডাক্তারদের মুভমেন্ট পাস লাগবে না বলে ইতিমধ্যেই নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, চিকিৎসকের পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী বীর বিক্রমের কন্যার পরিচয় দেওয়ার পরও পুলিশ যেভাবে উদ্ধত ভাষায় কথা বলেছে, তা যুগপৎ আমাদের ব্যথিত এবং ক্ষুব্ধ করেছে। আমরা ভাবতেই পারি না, একজন মহিলা চিকিৎসককে এতগুলো পুরুষ পুলিশ মিলে এমন ঔদ্ধত্যের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে? পুলিশের এই অন্যায়ের প্রতিবাদে সাহসের সঙ্গে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আমরা ডা. সাঈদা শওকত জেনিকে অভিনন্দন জানাই। পাশাপাশি করোনার এই দুঃসময়ে চিকিৎসক হেনস্তাকারী পুলিশদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে, মহিলাদের সাথে কথা বলবার জন্য রাজপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক মহিলা পুলিশ নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি। পুলিশের এই অন্যায়ের প্রতিবাদে সাহসের সঙ্গে রুখে দাঁড়ানোয়’ ডা জেনিকে অভিনন্দনও জানিয়েছে সংগঠনটি।