সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৪ পূর্বাহ্ন

জাকাত দারিদ্র্য দূর ও সম্পদ বৃদ্ধি করে

মো: রফিকুল ইসলাম:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২১

জাকাত : রাসূল সা: প্রদর্শিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি। অন্য দিকে জাকাত প্রদানের ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যখন বাড়বে তখন মানুষ নিজের মৌলিক চাহিদা মিটানোর জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য বাজার থেকে ক্রয় করে। ফলে টাকা চক্রাকারে পুনরায় ধনীদের কাছে চলে যায়। এভাবে ক্রয়-বিক্রয় করতে করতে দরিদ্র জনগণ স্বাবলম্বী হন এবং ধনীরা পণ্য বিক্রি করে লভ্যাংশ দ্বারা সম্পদ বৃদ্ধি করে থাকেন।
ধনীরা বা সম্পদের মালিকরা যদি জাকাত দেয়া বন্ধ করে দেন তাহলে সমাজে ক্রয়ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে আসবে। ফলে সম্পদের বৃদ্ধিও কমে যাবে। জাকাত প্রদানের ফলে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা যখন বাড়ে, তখন সাথে সাথে জনগণের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে সরবরাহও বৃদ্ধি পায়। সরবরাহ বাড়াতে হলে উৎপাদনও বাড়াতে হবে। উৎপাদন বাড়ানোর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এই কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দরিদ্র্য ও বেকারত্ব দূর হবে।
কৃপণ ও লোভী লোকেরা জাকাত দিতে পারে না। লোভ ও কৃপণতা মানুষের অন্তরাত্মাকে সঙ্কীর্ণ ও সঙ্কুচিত করে দেয়। পক্ষান্তরে জাকাত মানুষের এ সঙ্কীর্ণতাকে ধুয়েমুছে পরিচ্ছন্ন করে তার অন্তরকে করে দেয় মুক্ত মহান। জাকাত ধনীদের পক্ষ থেকে দান বা অনুগ্রহ নয়। বরং জাকাত পরিশোধ করা বিত্তবানদের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য বা ফরজ। ‘আর তাদের ধন-দৌলতে বঞ্চিত ও সাহায্য প্রার্থীদের অধিকার বয়েছে’ (সূরা আল-জারিয়াত-১৯)। আল্লাহর সাহায্যকারী প্রকৃত ইসলামী সরকারের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তারা হচ্ছে সেইসব লোক যাদের আমি রাষ্ট্রক্ষমতা দান করলে তারা-১. সালাত কায়েম করবে ২. জাকাত ব্যবস্থা চালু করবে ৩. সৎ কাজের আদেশ করবে এবং ৪. অন্যায় ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে (সূরা হজ-৪১)।
মুসলমানদের স্বতন্ত্র ও ব্যক্তিগতভাবে জাকাত দান করতে বলা হয়নি। এ ছাড়া আর একটি আয়াতে জাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারীদের জন্য জাকাতের অর্থের একাংশ নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় মুসলমানদের রাষ্ট্রপ্রধান বা ইমাম সবার কাছ থেকে জাকাত আদায় করবে এবং সমষ্টিগতভাবে তা খরচ করবে। হুজুর সা: এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে ইসলামী সরকার কর্তৃক জাকাত উসুল করা হতো এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে তা বণ্টন করা হতো।
প্রশ্ন হতে পারে, বর্তমানে ইসলামী রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠিত না থাকা অবস্থায় কিভাবে জাকাত পরিশোধ করবে। এমতাবস্থায় আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠাকারী ইসলামী সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জাকাত আদায় করে কুরআন নির্ধারিত খাতসমূহে তা বণ্টনের ব্যবস্থা করাই জাকাত আদায়ের সর্বোত্তম পন্থা। ব্যক্তিগতভাবে জাকাত দানের ক্ষেত্রে অনেক ফেতনা রয়েছে। এতে মনে প্রদর্শনেচ্ছা সৃষ্টি হতে পারে। জাকাত দানকে অনুগ্রহ বা করুণা বিবেচনা করা হতে পারে।
জাকাতের তাকিদ ও প্রেরণা: জাকাতের অসাধারণ গুরুত্ব ও মহব্বতের কারণে কুরআন পাকের ৮২ স্থানে এর তাকিদ করা হয়েছে। যেমন- সালাত কায়েম করো ও জাকাত দাও। কুরআন সুস্পষ্ট করে বলে যে, অন্তরকে পাক-পবিত্রকারী, সৎপথের পথিক হিকমতের গুণে গুণান্বিত, আল্লাহর সন্তুষ্টি, মাগফিরাত ও রহমত লাভকারী আখিরাতের চিরন্তন শান্তি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী ঐসব লোক যারা সন্তুষ্টচিত্তে হরহামেশা জাকাত দিয়ে থাকে।
জাকাত ব্যবস্থার উদ্দেশ্য: জাকাতব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে মুমিনের দিল থেকে দুনিয়ার মহব্বত ও তার মূল থেকে উৎপন্ন যাবতীয় ঝোপঝাড় ও জঙ্গল পরিষ্কার করে সেখানে আল্লাহর মহব্বত পয়দা করতে চায়। এটা তখনই সম্ভব যখন মুমিন বান্দা শুধু জাকাত দিয়ে সন্তুষ্ট থাকে না। বরঞ্চ জাকাতের সেই প্রাণশক্তি নিজের মধ্যে গ্রহণ করার চেষ্টা করে এবং মনে করে আমার কাছে যা কিছু আছে তা সবই আল্লাহর। জাকাতের ওই প্রাণশক্তি ও উদ্দেশ্য আত্মস্থ না করে কেউ আল্লাহর জন্য মহব্বত করতে পারে না। একই সাথে আল্লাহর হক জেনে নিয়ে তা পূরণ করার জন্য সজাগ ও মুক্তহস্ত হতে পারে না। জাকাত ব্যবস্থা আসলে গোটা ইসলামী সমাজে কৃপণতা, সঙ্কীর্ণতা, স্বার্থপরতা, হিংসা, বিদ্বেষ, মনের কঠিনতা এবং শোষণ করার সূক্ষ্ম প্রবণতা থেকে পাক-পবিত্র করে। তার মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা, ত্যাগ, দয়া-দাক্ষিণ্য, নিষ্ঠা, শুভাকাক্সক্ষা, সহযোগিতা, সাহচার্য প্রভৃতি উন্নত ও পবিত্র প্রেরণার সঞ্চার করে এবং সেগুলোকে বিকশিত করে।
জাকাতের মহত্ত্ব ও গুরুত্ব: ঈমানের পর প্রথম দাবিই হচ্ছে সালাত ও জাকাতের। প্রকৃতপক্ষে এ দুটি ইবাদত পালন করার অর্থ গোটা দ্বীন পালন করা। যে বান্দাহ মসজিদের মধ্যে আল্লাহর সামনে গভীর আবেগসহকারে তার দেহ ও মন বিলিয়ে দেয়, সে মসজিদের বাইরে আল্লাহর হক কিভাবে অবহেলা করতে পারে? ঠিক তেমনি যে ব্যক্তি তার প্রিয় ধন-সম্পদ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহর পথে সন্তুষ্টিচিত্তে বিলিয়ে দিয়ে মনের গভীরে শান্তি অনুভব করে, সে অন্য বান্দাদের হক কিভাবে নষ্ট করতে পারে? আর ইসলাম তো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ও বান্দার হকেরই বহিঃপ্রকাশ। এজন্য কুরআন সালাত এবং জাকাতকে ইসলামের পরিচায়ক এবং ইসলামের গভীরতার মধ্যে প্রবেশের সাক্ষ্য বলে গণ্য করে।
লেখক : ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ফার্মগেট, ঢাকা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com