বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশের ন্যায় নওগাঁতেও চলমান কঠোর নিষেধাজ্ঞা। এই লকডাউনে সবকিছুই স্বাভাবিক থাকলেও নওগাঁর অভ্যন্তরীন সকল রুটের বাস বন্ধ রয়েছে। এতে করে এই পেশার সঙ্গে জড়িত প্রায় ১২ হাজার বাস শ্রমিকদের দিন কাটছে অনেকটাই খেয়ে না খেয়ে। সহায়তা মিলছে না কোথাও থেকে। কঠোর লকডাউনের সময় যত গড়াচ্ছে, মানুষের ঘরের বাইরে বের হওয়ার প্রবণতাও ততো বাড়ছে। জরুরি প্রয়োজন না থাকলেও কেউ কেউ নানা অজুহাতে বের হচ্ছে। কোথাও কোথাও সড়কের চিত্র দেখে বোঝার উপায় নেই দেশে চলাচলে এমন কঠোর বিধি নিষেধ চলছে। শহরের সবখানে সিএনজি, অটোচার্জার ভ্যান, অটোরিক্সা, ব্যক্তিগত গাড়ীসহ অন্যান্য সকল যানবাহন চলাচল করছে। কিন্তু কঠোর বিধি নিষেধের কারণে সকল গনপরিবহন বন্ধ থাকায় বাস চালক, হেলপার ও সুপারভাইজাররা পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনানিপাত করছেন। এখন পর্যন্ত কর্মহীন হয়ে পড়া এসব শ্রমিকদের কপালে জোটেনি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা। সরকার, পরিবহন মালিক, শ্রমিক ইউনিয়ন কেউই পাশে দাঁড়ায়নি এসব পরিবহন শ্রমিকদের। জমানো টাকা যা ছিল, তা দিয়ে দিন পার করছেন। আগামী দিনগুলো কীভাবে পার করবেন, তা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না। এসব বেকার হয়ে পড়া হাজার হাজার শ্রমিকরা মালিক সমিতি কিংবা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে পাচ্ছে না কোন সহায়তা। তাই সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত আর্থিক সহায়তা প্রদানের দাবী কর্মহীন হাজার হাজার গনপরিহন শ্রমিকদের। সরেজমিনে গিয়ে শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, বসে-শুয়ে অলস সময় পার করছেন বাস শ্রমিকরা। অনেকেই বাসস্ট্যান্ডে চুলা বানিয়ে দুবেলা দুমুঠো খাবার চেস্টা করছেন। বাসচালক ও সুপারভাইজারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ন্যায় এবার চলা কঠোর লকডাউনেও এখন পর্যন্ত সাহায্যেরও হাত বাড়ায়নি কেউ। তারা বলছেন, কেউ আমাদের খবর নেয় না। জেলার প্রায় ১২ হাজার বাস শ্রমিক এখন অভাব-অনটনের মধ্যে জীবন যাপন করছে। বাসের চাকা ঘুরলে আমাদের পকেটে টাকা আসে, আমাদের আয় হয়। লকডাউনে সড়কে বাসও চলে না, আমাদের রোজগারও হয় না। সুপারভাইজার আব্দুল জলিল, চালক হাসান আলীসহ অনেকেই বলেন, সরকারি নির্দেশে গত ৫ এপ্রিল থেকে বাস চলাচল বন্ধ। সংসার চালানো নিয়ে খুব অশান্তির মধ্যে জীবনযাপন করছি। গত বছরও যখন লকডাউন চলছিল। তখন সরকার সহযোগিতা করার কথা জানায়। কিন্তু আমাদের সবার ভাগ্যে সেই সহায়তা জোটেনি। শেখ হাসিনা সরকারের কাছে আমাদের করজোরে অনুরোধ, আমাদেরকে বাঁচান। আমাদের জন্য কিছু অনুদান দিয়ে রক্ষা করেন। আমরা না পারি রিকশা-ভ্যান চালাতে না পারি কারো কাছে হাত পাততে। নওগাঁ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি এহসান রেজা রেনজা বলেন, এতোগুলো শ্রমিকদের আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা নিজেরাই অনেক বিপদের মধ্যে আছি। বাস চললেই আমাদের আয় হয়। সেই আয় থেকে আমরা ও শ্রমিকরা চলি। আমরা যতটুকু পারছি শ্রমিকদের জন্য করার চেস্টা করছি কিন্তু সামান্য এই সহায়তা শ্রমিকদের জন্য তেমন কিছুই নয় তাই আমরা সরকারি ভাবে সহায়তা চাচ্ছি। নওগাঁ জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক এসএম মতিউজ্জামান মতি বলেন, লকডাউন নামে দেশে নাটক চলছে। সবকিছুই চলছে অথচ শুধুমাত্র গনপরিবহনগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকারি যদি অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গনপরিবহনগুলো চলার অনুমতি দিতো তবুও শ্রমিকরা কিছুটা হলেও বাঁচতো। সরকারের ঘোষনা অনুসারে সহায়তা কবে আসবে কবে আমার শ্রমিক ভাইয়েরা তা পাবেন এটা অনেকটা অন্ধকারের মতো। আর শ্রমিকদের বিশাল চাহিদা সরকার কি পূরন করতে পারবেন? তাই সরকারের কাছে আমাদের জোরদাবী অনুদানের পাশাপাশি শত সাপেক্ষে গনপরিবহনগুলো চালু করা হোক।