করোনা সংক্রমন প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত দেশব্যাপী লকডাউন মৌলভীবাজারে চলছে নামকাওয়াস্তে। লকডাউন এখন প্রায় কাগজে-কলমে। বাস্তবে এর তেমন কার্যকারিতা প্রতীয়মান হচ্ছেনা। অপ্রয়োজনে বাইরে বের না হবার নির্দেশনা থাকলেও জনচলাচল স্বাভাবিক সময়ের মতোই। বাস বা ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকলেও শহর ও শহরতলীতে স্বাভাবিকভাবেই যাত্রী পরিবহন করছে অটোরিক্সা, টমটম ও রিক্সা। আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুন তিনগুন ভাড়া। স্বাস্থ্য বিধি মেনে বাজার পরিচালনার নির্দেশনা থাকলেও প্রায় কেউই তা মানছে না। জরুরি সেবা ও পণ্যবাহী যান ছাড়া সব যানবাহনে জ্বালানি বিক্রি বন্ধ রাখার কথা থাকলেও জ্বালানি ফিলিং স্টেশনগুলো তা মানছে না। ইফতারের পূর্ব থেকে ভোররাত পযন্ত অবাধে জ্বালানি বিক্রি করা হচ্ছে ফিলিং স্টেশনগুলোতে। দুপুরের দিকে শহরে চৌমোহনায় পুলিশ প্রশাসন যানবাহন চেক করলেও তা মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য। জেলা প্রশাসন ঝটিকা মোবাইল কোট পরিচালনা করলেও লক ডাউন কার্যকরে তা তেমন কাজে আসছেনা। শহরে জনচলাচল ও যানবাহন চলাচলে লকডাউনের তেমন প্রভাব পরিলক্ষিত হয়না। বড় বড় বিপণী বিতানগুলোতে কৌশলে বেচা-বিক্রি চলছে প্রায় অবাধে। শহরের ব্যস্ততম বানিজ্যিক এলাকা সেন্টাল রোডের কিছু বড় বড় বিপনীবিতানের সম্মুখের প্রবেশপথ বন্ধ থাকলেও বিকল্প পথে ক্রেতাদেরকে ভিতরে ঢোকানো হচ্ছে কৌশলে। দেদারসে চলছে বেচা-বিক্রি। শহরের মাছবাজার ও কাচাবাজারে বিরাজ করে স্বাভাবিক সময়ের মতই গাদাগাদি অবস্থা। এয়াড়া, শহরের অলিগলিতে থাকা বিভিন্ন ছোট ও মাঝারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক সময়ের মতই বেচা-বিক্রি চলছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। এ তো গেলো শহরের চিত্র। শহরতলী ও গ্রামীন হাটবাজারগুলোতে বিরাজমান অবস্থা দেখে মনেই হয়না দেশে লকডাউন চলছে। এসব হাটবাজারগুলোতে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সাধারণ কেউই মানছেনা স্বাস্থ্যবিধি। প্রশাসনের নজরদারী তো দূরের কথা, কোন মোবাইল কোর্টও পরিচালিত হয়না এসব হাটবাজারগুলোতে। শহরের উপাশনালয়গুলোতে স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা মানা হলেও, শহরতলী ও গ্রামীন জনপদের কোন উপাশনালয়েই স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়না। এককথায়, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন লকডাউন কার্যকরে আপ্রাণ চেষ্টা চালালেও জেলাসদর ও উপজেলাসমুহে লকডাউনের অবস্থা হ-য-ব-র-ল। তা সত্তেও লকডাউন কার্যকরে প্রশাসনের তৎপড়তা অব্যাহত রয়েছে। উল্লেখ্য- মৌলভীবাজারে কোভিড ১৯ শনাক্তের হার ৩১ শতাংশ- যা দেশের মধ্যে সর্ব্বোচ্চ। এর আগে ছিলো ২২.২ শতাংশ। মৌলভীবাজারে কোভিড ১৯ প্রথম শনাক্ত হয় গত বছরের ৫ এপ্রিল। এরপর থেকে চলতি ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত এ জেলার ২ হাজার ২শ ২২ জন করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছেন। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। এবছর ফেব্রুয়ারীর শুরুতে জেলায় দৈনিক সংক্রমণের হার ছিল ৫ শতাংশের কাছাকাছি। কিন্তু, মার্চের শেষে এ হার ৩০ শতাংশের বেশী। টিকা গ্রহণেও উৎসাহ কমে এসেছে। ফলে, জেলায় প্রায় হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ।