সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ অপরাহ্ন

সরকারি কর্মচারী নাকি ঠিকাদার?

মতলব উত্তর প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২১

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীতে স্বাস্থ্য সহকারি পদে চাকুরী করেন মো. শাহজালাল। লাবাইরকান্দি গ্রামের গোলাম মাওলা (মালু খলিফা) এর ছেলে তিনি। লবাইরকান্দি মাদ্রাসায় তার লেখাপড়া। ২০১২ সালে তিনি স্থানীয় এমপির ডিও লেটারের মাধ্যমে চাকুরী পান। তখন থেকেই এমপির এপিএস পরিচয়ে ঠিকাদারী কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাই তার নিয়মিত কর্মস্থলে থাকতে হয় না। শুধু তাই নয় অনুসন্ধানে আরো অনেক তথ্য বেরিয়ে এসেছে শাহজালালের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, ঠিকাদারী নিয়ে ব্যস্ত থাকায় গত ৬ মাসে একদিনও কর্মস্থলে যাননি তিনি, তবুও বেতন উত্তোলন করছেন নিয়মিত। তার অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, দৈনিক হাজিরা খাতায় গত ৬ মাসে (নভেম্বর থেকে অদ্যবদি) তার কোন স্বাক্ষর নেই। নভেম্বরে আগের হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে তা আর দেখাতে পারেনি। হয়তো সেখানেও তার স্বাক্ষর নেই। সরকারী চাকুরী করেও তিনি এ উপজেলার একজন প্রভাবশালী ঠিকাদার। গত ১২ বছরে তিনি অন্তত ৩০ কোটি টাকার কাজ করেছেন বলে জানা গেছে। তবে তার স্ত্রীর ‘রিজভিআপ’ নামের লাইসেন্সে তেমন কাজ করেন না, তিনি সরকারী দলের প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদারদের লাইসেন্সে কাজ করেন। কখনো বা করেন সরকারী দলের প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদারদের সাথে পার্টনারশিপে কাজ। তবে কাজ দেখাশুনাতে তিনি খুবই ব্যস্ত থাকেন। স্বাস্থ্য বিভাগের উপজেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তারাই জানেন শাহজালাল নিয়মিত অফিস করে না বরং ঠিকাদারী নিয়ে ব্যস্ত থাকেন কিন্তু তার প্রভাবের কারনে এ বিষয়ে কখনো কেউ মুখ খুলেন না। গত ২০১২ সালে তৎসময়ের স্থানীয় এমপি’র অলিখিত এপিএস পরিচয়ে এই স্বাস্থ্য সহকারী শাহ জালাল নিজের কমিউনিটি ক্লিনিকে অফিস না করে তখন এলজিইডি, পিআইও সেকশনের কাজ ভাগ ভাটোয়ারা করার নামে নিয়মিত উপজেলাতেই থাকতেন। তখন এ বিষয়ে এক সংবাদকর্মী তার বিষয়ে নিউজ করতে চাইলে তখনকার এই স্বাস্থ্য সহকারী শাহজালাল কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে দিয়ে ৩ সংবাদকর্মীর সাথে অশোভন আচরন করার কারনে কেউ আর তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করতে সাহস করেনি। সেই স্বাস্থ্য সহকারীর প্রভাব যেনো দিন দিন বেড়েই চলছে। কৌশল হিসাবে তিনি যে যখন ক্ষমতায় আসেন তিনি সেই ক্ষমতাসীনদের কাছাকাছি থাকেন। শাহজালালের সহকর্মী অনেকেই তাকে চিনেন না। তার কয়েকজন সহকর্মীর সাথে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানায়, আমরা একসাথেই চাকুরীতে যোগদান করি। প্রথম থেকেই শাহজালাল একটু বেপরোয়া এবং প্রভাব কাটিয়ে চলে। আমরা অফিস করলেও তার অফিস করতে হয় না। এমনকি ওর ভাগ্যের চাকা এতই ঘুরেছে গত কয়েক বছরে ও কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। গত ৬ মাস অফিসে আসেননি, দৈনিক হাজিরা খাতায় তার কোন স্বাক্ষর নেই এবং সরকারী চাকুরী করে তিনি কিভাবে ঠিকাদারী করেন এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুসরাত জাহান মিথেন জানান, শাহজালাল অফিসে আসে না এবং ঠিকাদারী করে দু’টোই আমি জানি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো, তবে তার পক্ষে অনেক তদবীর আসে। তার অনিয়মের কথা সিভিল সার্জন মহোদয়ও জানেন। স্বাস্থ্য সহকারী শাহ জালালের ঠিকাদারী করার বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সাইফুল ইসলাম বলেন, দুর্গাপুর বাড়ী ঠিকাদার শাহজালালের এই মুহুর্তে দুইটি কাজ চলমান রয়েছে। একটি কালিপুর বাজারের মার্কেট, অপরটি দুর্গাপুরের দাশের বাজার মার্কেট নির্মাণ। দুইটি কাজের অর্থমূল্য ৩ কোটি টাকা। তবে ঠিকাদার শাহজালাল যে স্বাস্থ্য বিভাগে চাকুরী করেন তাও তিনি জানেন বলে জানান। শাহজালালের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির যত অভিযোগ, শাহজালাল প্রথমে কি ছিল বিভিন্ন সমিতি ও মানুষের কাছ থেকে কিস্তি, টাকা, নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়, এতিমখানায় পড়াশোনা করার সময় তার বাবা মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। বাবা মারা যাবার পর ঢাকায় চাকুরী করে মতলব এক্সপ্রেসে। ওই সময় যা বেতন পেতো তা দিয়ে তার সংসার চলতো, তারপর সাবেক এমপি ক্ষমতায় আসার পর সে দূর্গাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হয়। তারপর স্বাস্থ্য সহকারি পদে ১৬ হাজার টাকা বেতনে চাকুরী পায় শাহজালাল। তারপর পিছনে তাকাতে হয়নি শাহজালালের। প্রথমে ঠিকাদারীর লাইসেন্স করেন। তারপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বেনামে বরাদ্দ আনেন যা কিছু কাজ আর কিছু কাজ না করেই আত্মসাৎ করেন। লবাইরকান্দি (উত্তর ও দক্ষিণ পাড়া) ভূইয়াকান্দিসহ বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুৎ দেওয়ার বিনিময়ে প্রায় ১ কোটি টাকা লোপাট করে। এতিমখানার বরাদ্দ এনে লোপাট করে। লবাইরকান্দি খানকা শরীফের কাজ এনে কাজ না করেই অর্থ লোপাট, চাঁদপুর জেলা পরিষদ থেকে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম করে ৪ টি কবর পাকাকরণ কাজ আনেন যার মধ্যে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাও আছে সেই অর্থ লোপাট করেছে শাহজালাল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সরকারি ঘর যা এনে লোকের কাছে ঘরপ্রতি ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে লোপাট করে। সরকারি ঘর অসহায় গরীব দুঃখীদের না দিয়ে তার ভাইকে দিয়েছেন। ব্রীজ-কালভার্ড করার নামে ও অর্থ লোপাট করেছেন তিনি। এছাড়াও শাহজালালের বিরুদ্ধে জানা অজানা আরো অনেক দূর্নীতি রয়েছে। তবে এসব জেনেও তার কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না প্রভাবের কারণে। স্বাস্থ্য সহকারী শাহ জালালের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি তার কর্মস্থল সম্পর্কে এলোমেলো উত্তর দেন। তবে তিনি যে এই মুহুর্তে ৩ কোটি টাকার ঠিকাদারী কাজ করছেন তা অপকটে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি নিয়মিত ফিল্ডে কাজ করছি। সরকারি চাকুরীর যে বিধিবিধান তা মেনেই চলি। এবং কাজের বাইরের সময় ঠিকাদারী কাজ করি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com