‘নারিকেল, সুপারী, পানে ভরপুর – আমাদের ভূমি প্রিয় রায়পুর’। নারিকেল, পান আর সুপারীর সঙ্গে এখানে নতুন করে যোগ হয়েছে সয়াবিন। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার মেঘনা উপকূলবর্তী অঞ্চলে জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ ৫টি চর ও ৪টি ইউনিয়নে হাজার হাজার একর জমিতে সয়াবিনের চাষ হয়। ‘দিন বদলের’ ফসল হিসেবে খ্যাত এবার সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি অফিস। চর ইন্দুরিয়া, কানিবগা, জালিয়ারচর, চরঘাশিয়া, চর কাচিয়ার চরে এবং উত্তর চর আবাবিল, দক্ষিন চর আবাবিল, উত্তর চরবংশী ও দক্ষিন চরবংশী ইউনিয়নে এবার সয়াবিনের প্রচুর ফলন হওয়ার কারনে এখানকার কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। হাজার হাজার একর জমিতে চাষ হওয়া সয়াবিনের সবুজ চারা যেন নতুন এক আবহের সৃষ্টি করেছে। তেমনি কালবৈশাখী ঝড়ের কারনে সময়মত ঘরে ফসল তুলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। প্রায় ১৮ বছর আগে সয়াবিনের চাষাবাদ শুরু হলেও বর্তমানে এটি রায়পুর উপজেলার প্রধান অর্থকারী ফসল হিসেবে পরিচিত। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন এ জেলাকে ফলে ‘সয়াল্যান্ড’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এখানে সয়াবিনের চাষাবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যার জন্য লক্ষ্মীপুরকে সয়াল্যান্ড হিসেবে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী মাসই হলো সয়াবিন আবাদের উপযুক্ত সময়। সার ও কীটনাশক তেমন দিতে না হওয়ায় এবং আগাছা কম থাকায় এর উৎপাদন খরচও অনেক কম। বর্তমানে পুরোদমে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এখানকার ব্যবসায়ী, মজুর ও কৃষকরা। উপজেলার কয়েকটি বাজারসহ হায়দরগঞ্জ বাজারে দেশের উৎপাদিত ৭৫ ভাগ সয়াবিন এখানে কেনাবেচা হয়। সয়াবিনকে কেন্দ্র করে হায়দরগঞ্জ বাজারে পাঁচটি চাতাল ও ৭০-৮০টি পাইকারী দোকান গড়ে উঠেছে। এছাড়া হাজীমারা, আখনবাজার, মোল্লারহাট ও খাসেরহাটে ৩০-৩৫টি পাইকারী দোকানে সয়াবিন কেনাবেচা হয়। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, রায়পুরে মোট প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও প্রায় ৭৭৫ হেক্টর বেশি জমিতে এবার সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। প্রতিবছর এ উপজেলায় সয়াবিন মৌসুমে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার সয়াবিন বেচাকেনা হয়। জালিয়ার চরের সয়াবিন চাষী আব্দুল গণি মাল বলেন, বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এবার প্রায় তিন একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেছি। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে গত দু’বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হবে। সময়মত সয়াবিন ঘরে তুলতে পারলে ঋণও পরিশোধ করতে পারবো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অনেকেই গড়ে তুলেছেন ‘দিন বদলের’ ফসল সয়াবিন। উপজেলার হায়দরগঞ্জ বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী মোঃ নূরনবী পন্ডিত, রাশেদুল হায়দার রকি ও শাহাদাত হোসেন সর্দার জানান, দেশের খ্যাতনামা শিল্প প্রতিষ্ঠান ও পোল্ট্রি খাদ্য প্রস্তুতকারী যেমন, সিটিগ্রুপ, বিশ্বাস গ্রুপ, নারিশ, সিপি, এস.আলম, কাজী ফার্মস ও আফতাব গ্রুপসহ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানগুলো এ উপজেলা থেকে সয়াবিন সংগ্রহ করে থাকে। শতকরা ৭৫ ভাগ সয়াবিন এখানে উৎপাদিত হলেও সয়াবিনকে কেন্দ্র করে আজও গড়ে উঠেনি কোন শিল্প-কলকারখানা। সহজ শর্তে ব্যাংকের ঋণ ও সরকারী আনুকূল্য পেলে রায়পুরের সয়াবিন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চেহারা বদলে দিতে পারে বলে জানান তারা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, এ উপজেলায় ব্যাপকহারে সয়াবিন উৎপাদিত হয়। আমরা সয়াবিন চাষীদের দোড়গোড়ায় গিয়ে বিভিন্নরকম পরামর্শ দিয়ে থাকি। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখানে সয়াবিন “দিন বদলের ফসল” হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।