সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
দেশের উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে বিএনপির নেতা কর্মীদের কাজ করতে হবে বনশ্রী আফতাব নগর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি বাবলু পন্ডিত, সম্পাদক জহুরুল ইসলাম ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি. এর নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের ১৫তম সভা মহানগরী জোন আন্তঃকলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মাইলস্টোন কলেজের কৃতিত্ব স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আজ ৮৯তম জন্মবার্ষিকী নগরকান্দায় দু’গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, ওসি, সাংবাদিকসহ আহত- ৩০ কালীগঞ্জে নানা সংকটে গ্রাম আদালত সুফল পেতে প্রয়োজন কার্যকরী উদ্যোগ কটিয়াদীতে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ মুন্সীগঞ্জে লুন্ঠিত মালামালসহ ৭ ডাকাত গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে বর্ণিল পিঠা উৎসব

মানবিক বিপর্যয়ের মুখে দক্ষিণ এশিয়া

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২১

পর্যাপ্ত অক্সিজেনের সরবরাহ নেই। মানুষ মারা যাচ্ছে শ্বাসকষ্টে। হাসপাতালগুলোয় তিল ধারণের ঠাঁই নেই। অভাব রয়েছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামেরও। প্রতিদিনই আগের দিনে গড়া রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা। মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। পরিস্থিতি বলছে, ভারতকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় মানবিক সংকটের মুখোমুখি করিয়ে দিয়েছে কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব।
এ মানবিক সংকটের মুহূর্তেই ভারতের পাশে সহযোগিতার বার্তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে চিরবৈরী প্রতিবেশী পাকিস্তান। বিষয়টিতে দেশ দুটির মধ্যকার দীর্ঘদিনের শত্রুতা প্রশমন নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মহল। দুই দেশকে আলোচনার টেবিলে বসানোর বিষয়ে কয়েকটি দেশ আগে থেকেই উদ্যোগী হয়ে উঠেছিল। পাকিস্তানের সহযোগিতার হাত তাদের এ উদ্যোগকে সহজ করে দিয়েছে বলে অভিমত পর্যবেক্ষকদের। আশার আলো দেখাচ্ছে ভারতের আরেক বৈরী প্রতিবেশী চীনও। এরই মধ্যে ভারতে সহযোগিতা পাঠানো শুরু করে দিয়েছে দেশটি। সার্বিক পরিস্থিতিতে পর্যবেক্ষকদের অনেকের মধ্যেই প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, বিপর্যয়ের মুহূর্তে ভারতের প্রতি দুই বৈরী প্রতিবেশীর অপ্রত্যাশিত সহযোগিতা এ আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে।
চলতি সপ্তাহেই পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ভারতের জনগণের সঙ্গে সংহতির নিদর্শন হিসেবে ভেন্টিলেটর, বাই-প্যাপ (বাই লেভেল পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেশার মেশিন), ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন, পিপিই ও অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তান। বিবৃতিতে আরো জানানো হয়, এসব সরঞ্জাম দ্রুত সরবরাহের মাধ্যম নির্ধারণের জন্য দুই দেশের কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। এছাড়া মহামারীসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ প্রশমনের সম্ভাব্য উপায় নির্ধারণ নিয়েও উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলতে পারে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও সম্প্রতি এক টুইট বার্তার মাধ্যমে ভারতে মহামারীতে আক্রান্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। ওই টুইট বার্তায় তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ও গোটা বিশ্বে যারা মহামারীতে আক্রান্ত তাদের সবার দ্রুত আরোগ্য কামনা করে আমরা প্রার্থনা করছি। আরেক টুইট বার্তায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফও ভারতীয় জনগণের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন।
দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কে গত কয়েক বছরে মারাত্মক অবনতি হয়েছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের মধ্যে এক সামরিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এর ধারাবাহিকতায় একে অন্যের এলাকায় দুই দেশ বিমান হামলাও চালিয়েছে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে বায়ুযুদ্ধে অন্তত একটি ভারতীয় ফাইটার জেট ভূপতিত হয়েছে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হওয়ার পর দুই দেশ একে অন্যের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে তিনবার। এ অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয় গত বছর। এতদিন পর্যন্ত ভারত জোটনিরপেক্ষতার নীতি বজায় রাখলেও এ সময় জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গড়ে তোলা চীনবিরোধী জোট কোয়াডে সক্রিয় হয়ে ওঠে ভারত। অন্যদিকে বরাবরের মতোই চীনঘনিষ্ঠ অবস্থান ধরে রাখে পাকিস্তান। এ অবস্থায় ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যকার আরো বৃহৎ পরিসরে দ্বন্দ্বের অংশ হয়ে উঠতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ এর মধ্যেই স্থিতিশীলতার সম্ভাবনাও দেখছিলেন। তাদের ভাষ্যমতে, একে অন্যের ওপর চাপ প্রয়োগের ক্ষেত্রে ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লিকেই কাজে লাগাবে চীন-যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে দুই সুপার পাওয়ারের মধ্যকার সংঘাতও অনেকটা প্রশমিত হবে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যকার বিষয়গুলো আরো অনেক জটিল বিবেচনায় এ বক্তব্যকে উড়িয়ে দিয়েছেন পর্যবেক্ষকদের অধিকাংশই।
বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত নিরসন ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরালো করে তোলার মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান উভয়ই লাভবান হতে পারে বলে অভিমত প্রায় সবারই। এছাড়া এর মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে যে স্থিতিশীলতা তৈরি হবে, তা এ অঞ্চলে বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) উদ্যোগে দুই দেশের মধ্যে এক অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও হয়েছে।
ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ইউএইর রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তার ভাষ্যমতে, পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে ‘সুস্থ ও কার্যকর সম্পর্ক’ তৈরিতে ইউএই মধ্যস্থতা করছে।
এর আগে সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক একটি বার্তা সংস্থা জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুবাইয়ে ভারত ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মধ্যে কাশ্মীরে সামরিক উত্তেজনা প্রশমন নিয়ে আলোচনা হয়। এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ইউএইর রাষ্ট্রদূত ইউসুফ আল ওতাইবাও দাবি করেন, কাশ্মীরে উত্তেজনা প্রশমন ও যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ইউএই ভূমিকা রেখেছে। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে দেশ দুটির মধ্যে আবার কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হবে। এর ধারাবাহিকতায় সম্পর্কও স্বাভাবিক চেহারায় ফিরে আসবে।
এছাড়া রাশিয়াও এখন ভারত-পাকিস্তান উভয়ের সঙ্গে যুগপৎভাবে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কৌশল হাতে নিয়েছে বলে দাবি করছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, ভারত ও পাকিস্তানÍদুই দেশেই বিনিয়োগ রয়েছে রাশিয়ার। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বলছে, এ বিনিয়োগের পরিমাণ ও কৌশলগত কারণে মস্কোও এখন দুই দেশকে আলোচনায় দেখতে চাচ্ছে। ভূরাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের প্রত্যাশা, ঠিক একই কারণে সামনের দিনগুলোয় আরো কয়েকটি দেশ ভারত-পাকিস্তানকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার বিষয়ে উদ্যোগী হয়ে উঠবে। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে ভারতের প্রতি পাকিস্তানের সহযোগিতার হাত সে সম্ভাবনাই তৈরি করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে পরিবর্তনের আশা জাগিয়েছে নয়াদিল্লির আরেক চিরবৈরী দেশ চীনও। এরই মধ্যে ভারতে চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠানো শুরু করেছে দেশটি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মন্তব্য হলো মহামারীর বিপর্যয়কর এ মুহূর্ত এখন ভারতের শত্রু-মিত্রের সঙ্গে সম্পর্কের সংজ্ঞাই পাল্টে দিচ্ছে। বিশ্লেষকরাও এখন এতদিনের ভূরাজনৈতিক মেরুকরণের বাইরে এসে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন।
এছাড়া কভিড-১৯-কে গোটা মানবজাতির শত্রু ঘোষণা করে ভারতের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও। অন্যদিকে শ্রীলংকায় অবস্থিত চীনের দূতাবাস জানিয়েছে, গত রোববারের মধ্যে ভারতে ৮০০ অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর পাঠিয়েছে বেইজিং। চলতি সপ্তাহের মধ্যে আরো ১০ হাজার পাঠানো হবে। এছাড়া ভারতের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াতে চীন সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com