প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারনে গতবছর বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনতে হয় আম চাষীদের। মৌসুম ফিরে আসায় আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবছর বাম্পার ফলনের আশা করছেন আমচাষী, ব্যবসায়ী ও কৃষি বিভাগ। তবে জেলায় প্রায় ৯৮ ভাগ গাছে গুটি আসলেও আশঙ্কা কাটছে না কৃষকদের মাঝে। গত বছরের অক্টোবর মাসের পর ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও দেখা নেয় বৃষ্টির। প্রচন্ড তাপদাহে আম উৎপাদনে চরম বিপর্যয়ের শঙ্কা করছেন কৃষকরা। এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় একদিকে যেমন খরচ বাড়বে, তেমনি অন্যদিকে ফলনও কমে যাবে এমনটাই শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল হওয়ায় আমকে ঘিরেই এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা। কিন্তু গাছে গাছে মুকুল ও গুটি আসতে দেখার পরেও বৈরী আবহাওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের মুখের হাসি মলিন হয়ে গেেেছ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা, শিবগঞ্জ, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলার বিভিন্ন আমবাগান ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব গাছেই গুটি এসেছে। জাতভেদে আমের গুটির সাইজ হয়েছে ছোট-বড়। বৃষ্টি না হওয়ায় আমের গুটি স্বাভাবিকভাবে বড় হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আমচাষীরা। এমনকি বৃষ্টির অভাবে আমের গুটি ঝরে পড়ছে বলে জানান গবেষকরা। শিবগঞ্জ উপজেলা নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের বিরামপুর এলাকার আম চাষী জিয়ারুল ইসলাম বলেন, আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে বেশি মুকুল এসেছিলো এবছর। মুকুল ফুটে আমের গুটিও ধরেছে ব্যাপক হারে। তবে এসব গুটি টিকছে না। গুটি ঝরে পড়ার কারন হলো বৃষ্টির পানি নেয়। বৃষ্টির পানি হলে গুটির ডাটা শক্ত হয়। তিনি আরো জানান, গুটি থাকা অবস্থায় গাছ প্রচুর পরিমানে পানি টানে। কিন্তু বৃষ্টির পানি না হওয়ায় কয়েকদফা স্যালো মেশিন লাগিয়ে পানি দিতে হয়েছে। এতে খরচ আরো বেড়ে গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের আরামবাগের মো. তহিদুল ইসলামের বাগান রয়েছে সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের নশিপুরে। তিনি জানান, এখন এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে, পানি এখন আমের জন্য প্রাণ। অতীব জরুরি প্রয়োজন বৃষ্টির পানি। গত কয়েকদিন থেকে অনেক আমের গুটি ঝরে পড়ে যাচ্ছে। এমন করে গুটি ঝরতে থাকলে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। গাছের গোড়ায় বারবার পানি দিচ্ছি, কিন্তু এই পানিতে কি আর বৃষ্টির মতো কাজ হয়? তিনি আরো বলেন, বৃষ্টির পানি হলে আমের গুটি দ্রুত বড় হবে। এছাড়াও আমের গুটি মজবুত হবে। আম ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, বাগানে বাগানে স্যালো মেশিন দিয়ে চলছে সেচ প্রদান। অতিরিক্ত খরা থাকার কারনে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানিও উঠছে না ঠিকমতো। সকল আম চাষীরা বৃষ্টির পানির দিকে তাকিয়ে আছে। আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব আম গবেষণা কেন্দ্রের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, এই মূহুর্তে আমের গুটি রক্ষা করতে বৃষ্টির পানি খুবই প্রয়োজন। এছাড়াও একটি মাত্র বৃষ্টি পেলে খুব দ্রুত আম বড় হয়ে যাবে। এমনকি নানারকম কীটনাশক দূর করতেও কাজ করবে বৃষ্টির পানি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, গত বছরের ৯ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জে সর্বশেষ বৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে গত কয়েকদিন থেকে প্রচন্ড রোদ। এতে আমের গুটি ঝরে পড়ছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলে কৃষকদের জন্য খুবই ভালো হবে। গাছের গোড়ায় বেশি পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা ও ভালো ফলন পেতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমচাষীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলার পাঁচ উপজেলায় এবছর প্রায় ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এসব আম বাগানে প্রায় ২৭ লক্ষ গাছ থেকে আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।