বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ ন ম শামসুল ইসলাম বলেছেন, শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের তাৎপর্য অনস্বীকার্য। মে দিবসের চেতনা হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার ও প্রাপ্য মজুরি প্রতিষ্ঠা করা। শ্রমজীবী মানুষের দুঃখ দুর্দশা লাঘব করা। শুধু কথার বুলি দিয়ে নয় বরং কার্যকর পন্থায় অসহায় মেহনতি মানুষের প্রতি সুবিচার করতে হবে। শ্রমিকের অধিকার আদায়ের জন্য ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে দেশের শ্রমনীতিকে ঢেলে সাজাতে হবে। তাহলেই মহান দিবসের প্রতি সুবিচার করা হবে। তিনি শনিবার বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন আয়োজিত পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমানের পরিচালনায় ওই অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান, লস্কর মো: তসলিম, কবির আহমেদ, মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি মুহিব্বুল্লাহ, দফতর সম্পাদক নুরুল আমিন প্রমুখ।
শামসুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে শ্রমজীবী মানুষরা প্রতিনিয়ত তার অধিকার থেকে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। প্রতিটি সেক্টরে এখনো কাক্সিক্ষত বেতন কাঠামো, সঠিক কর্মঘণ্টা নির্ধারিত হয়নি। এখনো বহু শ্রমিক তার নির্ধারিত সময়ে বেতন পায় না। মাসের পর মাস বেতন আটকে শ্রমিকদের অসহনীয় কষ্ট দেয়া হচ্ছে। কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শ্রমিকদের চাকরি থেকে অপসারণ করা হচ্ছে। কর্মস্থলে শ্রমিক বান্ধব নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরী হয়নি। ফলশ্রুতিতে বহু শ্রমিক প্রতিনিয়ত হতাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত নারী শ্রমিকদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নেই। সরকার শ্রমিকের কথা চিন্তা না করে সারাদেশে পাটকল, চিনিকলসহ সরকারি কলকারখানাগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে। এইসব কর্মক্ষেত্রে চাকরিরত শ্রমিকরা চাকরি হারিয়ে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে।
তিনি আরো বলেন, সারাদেশে শ্রমজীবী মানুষের মাঝে আজ হাহাকার চলছে। বিশেষত করোনাভাইরাসের প্রকোপে সরকার ঘোষিত লকডাউনে কর্ম হারিয়েছে বহু শ্রমিক। হকার, দিন মজুর, রিকশাভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, দোকান কর্মচারীরা খেয়ে না খেয়ে দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে। এই সকল শ্রমজীবীদের ঘরে নেই নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী। পরিবার-পরিজন নিয়ে নির্মম কষ্টে কাটছে তাদের প্রতিটি দিন।
শামসুল ইসলাম আরো বলেন, আমরা বাংলাদেশকে একটি সুখি সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই। আমাদের দেশের বিপুল পরিমাণ জনশক্তি রয়েছে। এই জনশক্তিকে সম্পদে পরিণত করতে একটি সঠিক পরিকল্পনা ও সুষ্ঠু শ্রমনীতি গ্রহণ সময়ের অনিবার্য দাবি। আর পৃথিবীতে আদর্শিক শ্রমনীতি হলো ইসলামী শ্রমনীতি। যাকাতভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও ইসলামী শ্রমনীতি আমাদের দেশের রূপ বদলে দিতে যথেষ্ট। কেননা ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক শ্রমনীতি সকল মানুষের স্ব স্ব অধিকার বুঝিয়ে সদা তৎপর। সুতরাং দেশের অসহায় মেহনতি মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে হলে অবিলম্বে ইসলামী শ্রমনীতি প্রবর্তন করতে হবে।
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী উত্তরের উদ্যোগে রাজধানীর দক্ষিণখানে র্যালী ও শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি মো: মুহিব্বুল্লাহর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া, লস্কর মো: তসলিম।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ: বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে রাজধানীর পল্টনে র্যালী ও শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি কবির আহমেদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় দফকর সম্পাদক নুরুল আমিন, মহানগরী সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম, মহানগরী সহ-সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা মিঠু প্রমুখ।
চট্টগ্রাম মহানগরী{ বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে নগরীর একটি মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম লুৎফর রহমানের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মহানগরী ফেডারেশনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী।