রাজধানীর খিলক্ষেতে পুলিশ ও ছিনতাইকারী দলের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং গোলাগুলির ঘটনায় এনামুল ও রাসেল নামে দুজন নিহত হয়েছেন। সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সিএনজি চালিত অটোরকশা দিয়ে সশস্ত্র ডাকাতির অভিযোগে ডিবি পুলিশ ও খিলক্ষেত থানা পুলিশ সমন্বিত এ অভিযান চালায়।
গোলাগুলি থামার পর স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ একটি সবুজ রঙের সিএনজিসহ নয়ন ও ইয়ামিন নামে দুই ছিনতাইকারীকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে। ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি সিএনজি অটোরিকশা, একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি ম্যাগজিন, কাঠের বাটযুক্ত একটি পুরানো ধারালো ছুরি, দুইটি টাইগার বাম, একটি সবুজ রঙের গামছা, ৯টি স্মার্ট এবং বাটন মোবাইল, ১৬ পিচ ইয়াবা, একটি লাইটার এবং নগদ ৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে।
ডিএমপির গুলশান গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে লাখ লাখ মানুষ নানা বাহনে ঢাকা ছেড়েছেন। ঢাকার ভেতরে গভীর রাতেও এই গমনাগমন অব্যাহত ছিল। কিন্তু গভীর রাতে বাস-মিনিবাসের মতো গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অনেক সময় সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এবং মালবাহী ছোট পিকআপও যাত্রী আনা-নেওয়া করে থাকে। কয়েকটি ডাকাত চক্র গণপরিবহনের এই স্বল্পতাকে কাজে লাগিয়ে রাইড শেয়ারের নামে মানুষের সর্বস্ব ডাকাতি করে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। এই ডাকাতি করতে গিয়ে দু-একজন নিরপরাধ ভিকটিমকে ফাঁস দিয়ে হত্যা করে ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ঈদের পরেও অনেক মানুষ ঢাকা মহানগরীতে আসছে এবং রাতেও অনেক মানুষ ঢাকার ভেতর চলাফেরা করছে। ঈদফেরত নগরবাসীকে কেন্দ্র করে অপরাধীচক্র আবার তৎপর হয়ে উঠতে পারে এমন আশঙ্কায় গোয়েন্দা তথ্য, প্রযুক্তিগত উপাত্তের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একাধিক টিম কুড়িল-বিশ্বরোড ফ্লাইওভার, খিলক্ষেত, কাওলা, ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড ও পূর্বাচলগামী ৩০০ ফিট রাস্তাতে টহল জোরদার করেছে। ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ‘এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একাধিক টিম খিলক্ষেত থানা পুলিশের সঙ্গে নিরাপত্তা টহল দিচ্ছিল। ডিবি পুলিশের একটি দল কাওলা হয়ে পূর্বাচলগামী ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখে, দ্বিতীয় দলটি পূর্বগামী ফ্লাইওভারের মাঝে অবস্থান নিয়ে তল্লাশি করছিল।’ ‘রাত সোয়া ২টার দিকে কাওলা থেকে বিশ্ব রোডের দিকে একটা সবুজ রঙের সিএনজি কয়েকজন লোককে নিয়ে যাচ্ছিল। চেকপোস্টরত থানা পুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশের প্রথম দলটি সিএনজিটিকে থামানোর ইশারা দিলে সেটি দ্রুত বেগে ৩০০ ফিট ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে পূর্বাচলের দিকে পালিয়ে যাচ্ছিল। ডিবি পুলিশের ওই দলটি ব্রিজের মাঝে থাকা ২য় দলকে ওয়ারলেস দ্বারা সতর্ক করলে তারা তাদের মাইক্রোবাসকে আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে দেয় এবং প্রথম দলটি পেছন থেকে ধাওয়া করতে থাকে।’ ‘কিছুক্ষণ পরে সিএনজি থেকে দুজন সন্ত্রাসী নেমে দৌড়ে সামনে যেতে থাকে এবং পুলিশের একটি মাইক্রোবাস আড়াআড়ি দেখে সেটিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এতে ডিবি পুলিশের একটি মাইক্রোবাসের বাম দিকের কাঁচ ভেঙে যায়।’ গুলশান ডিবি প্রধান বলেন, ‘আত্মরক্ষার্থে আক্রান্ত মাইক্রোবাস থেকে ডিবি পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় সন্ত্রাসী এবং পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং গোলাগুলি চলে।’ ‘এক পর্যায়ে গোলাগুলি থেমে গেলে সবুজ রঙের একটি সিএনজি অটোরিকশা (ঢাকা থ ১১- ৭৯৪৫) ফ্লাইওভারের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। সেটির ড্রাইভারের সিট এবং দ্বিতীয় সিট থেকে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।’
‘কিছুদূরে দুজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লাইওভারের ওপর পরে থাকতে দেখা যায়। খিলক্ষেত থানা পুলিশের মাধ্যমে তাদের দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে প্রেরণ করা হয়। এই সময়ে তাদের দেহ তল্লাশি করে ৯ পিস ইয়াবা এবং দুটি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। আহতদের একজনের ডান হাতের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল এবং দুই রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। অপরজনের হাত থেকে একটি পুরাতন কিন্তু ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়।’ ‘গ্রেফতারকৃত চালক এবং সহচালকের কাছ থেকে চারটি মোবাইল, ৭ পিচ ইয়াবা এবং তাদের দেখানো মতে সিএনজিরর পিছনের সিটের নিচ থেকে তিনটি স্মার্টফোন, মলম, গামছা উদ্ধার করা হয়।’
আটকরা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, সিএনজির ড্রাইভারের নাম নয়ন এবং পাশের সিটে বসেছিলেন ইয়ামিন। তারা আরও জানায়, ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত দুজনের নাম হলো- এনামুল ও রাসেল। দুজনই সিএনজির পেছনে বসা ছিলেন। পুলিশের দুটি মাইক্রোবাসের দ্বারা ব্যারিকেড হওয়ায় তারা নেমে পালাচ্ছিলেন এবং সঙ্গে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি বর্ষণ করেন।
পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার দুই ছিনতাইকারী: জিজ্ঞাসাবাদে নয়ন ও ইয়ামিন জানান, তারা টঙ্গীর মধুমিতায় একত্রিত হয়ে প্রথমে আব্দুল্লাহপুর খন্দকার পেট্রলপাম্পে যান। সেখান থেকে বিমানবন্দর হয়ে কাওলার দিকে আসতে থাকেন। উদ্দেশ্য ছিল ঢাকার একাকি কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে সিএনজিতে তুলে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়া। আটক নয়ন ও ইয়ামিন আরো জানান, গামছা এবং মলম দিয়েই তারা মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নেন। ভিকটিম জোরাজুরি করলে তাকে ফাঁস দিয়ে হত্যা করে ফেলে দিতেন। পুলিশের দ্বারা বা ওপর সন্ত্রাসী গ্রুপের দ্বারা আক্রান্ত হলে নিজেদের রক্ষার জন্যই তারা সিএনজিতে আগ্নেয়াস্ত্র এবং ছুরি বহন করতেন। গ্রেফতার এবং নিহতরা ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা এবং মাদকের একাধিক মামলার আসামি। তারা সবাই ইয়াবা এবং গাজায় নেশাসক্ত। আসামিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক এবং কর্তব্যকর্মে নিয়োজিত পুলিশকে আক্রান্ত করার পৃথক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।