গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। গতকাল রোববার বিকাল সোয়া চারটার দিকে তিনি কারামুক্ত হন। কারাফটকে রোজিনার সহকর্মী ও স্বজনরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন। জামিন আদেশের পরপরই রোজিনার স্বজনরা তাকে বরণ করতে সেখানে যান। রোজিনার মুক্তির খবর সংগ্রহ করতে দুপুরের পর থেকে সেখানে ভিড় করেন সংবাদকর্মীরা। সরকারি নথি সরানোর অভিযোগে ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস’ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে রোববার জামিন দেন আদালত। ঢাকার মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহ পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকা এবং পাসপোর্ট জমা দেয়ার শর্তে রোজিনার জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার রোজিনার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। তবে ওই দিন আদেশ না দেয়ায় জামিনের অপেক্ষা বাড়ে।
রাষ্ট্রীয় গোপন নথি সরানোর অভিযোগে গত ১৭ই মে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক কর্মকর্তার কক্ষে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয় রোজিনাকে। পরে রাতে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে ব্রিটিশ আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দ-বিধির কয়েকটি ধারায় মামলা করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। এ ঘটনায় সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া আসে। বিভিন্ন সংগঠন তার মুক্তির দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নামে। রোজিনাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন।
পাসপোর্ট জামানতে সাংবাদিক রোজিনার জামিন: সরকারি অফিস থেকে তথ্য চুরির অভিযোগে শাহবাগ থানায় দায়ের হওয়া মামলায় দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল রবিবার (২৩ মে) সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহর আদালত এ আদেশ দেন। ৫ হাজার টাকা জামানত ও পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে তাকে জামিন দেওয়া হয়।
জামিন শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার বলেন, ‘আদালতে আমরা জামিন চাইলে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্ত দেয় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। আমরা তা মেনে নিলে রোজিনা ইসলামের জামিন দেন আদালত।’ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘আসামিপক্ষ রোজিনা ইসলামের জামিন চাইলে, আমরা আদালতকে বলি, তিনি যদি পাসপোর্ট জমা দেন, তবে জামিনে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। পরে রোজিনার পক্ষের আইনজীবীরা বিষয়টি মেনে নিলে আদালত তার জামিন দেন।’
জামিন আদেশের আগে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘গণমাধ্যম গণতন্ত্রের অন্যতম অনুষঙ্গ। গণমাধ্যমের কারণে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান দায়িত্বশীল আচরণ করে থাকে। কোর্ট ও গণমাধ্যম একে অপরের বাধা হিসেবে নয়, পরিপূরক হয়ে কাজ করে।’ জামিন আদেশের পর আদালত প্রাঙ্গণে রোজিনা ইসলামের স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘এই রায়ের জন্য সর্বপ্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বাংলাদেশের সব সাংবাদিক ভাইদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি তাদের প্রতি, যারা গত পাঁচ-ছয় দিন ধরে খেয়ে না খেয়ে আন্দোলন করেছেন। সর্বশেষ কৃতজ্ঞতা জানায় আইনজীবীদের প্রতি। তাদের আন্তরিকভাবে অভিনন্দন ও অনেক ধন্যবাদ জানাই।’ এর আগে, বৃহস্পতিবার (২০ মে) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহর ভার্চুয়াল আদালতে তার জামিন আবেদনের শুনানি হয়। আদালত শুনানি শেষে তাৎক্ষণিক আদেশ না দিয়ে নথি পর্যালোচনা করে আজ আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।
প্রসঙ্গত, রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সোমবার (১৭ মে) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। পরে জানা যায়, তাকে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা একটি কক্ষে আটকে রেখেছেন। রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই ভবনে যান। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে তাকে আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কিছুই জানাননি। একপর্যায়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু নথি সরানোর অভিযোগ এনে পুলিশ ডাকা হয়েছে। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোজিনাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে আসা হয় এবং রাতেই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। পরদিন মঙ্গলবার (১৮ মে) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসীমের আদালত রোজিনা ইসলামের রিমান্ড নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।