আগের দফায় বাড়ানোর এক মাসও পার হয়নি। এরই মধ্যে সয়াবিনের দাম আবার বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন কয়েক দিন আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতি লিটারে সয়াবিন তেলের দাম ১৩ টাকা বৃদ্ধির অনুমতি চেয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ কথা জানা গেছে। তবে এ ব্যাপারে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বলে জানা গেছে। এক মাস আগে গত ২৫ এপ্রিল অ্যাসোসিয়েশনটি নিজের মতো করে লিটারে সয়াবিনের দাম ৫ টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছিল। তার এক সপ্তাহ পর গত ৩ মে অ্যাসোসিয়েশনটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, ৫ টাকা নয়, লিটারে দাম বাড়ানো হবে ২ টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ঈদ পর্যন্ত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২ টাকা বৃদ্ধিতে সম্মত হয় বলেও তখন জানিয়েছিল তারা। সে অনুযায়ী বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৩ টাকা কমে হয় ১৪১ টাকা। ঈদ শেষ, এখন ব্যবসায়ীরা আবার মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে সক্রিয় হয়েছেন।
দেশে দফায় দফায় বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম। বর্তমানে যে দাম আছে, সেটাই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। অথচ ব্যবসায়ীরা দাম আরও বাড়ানোর জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছেন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ধরনা দিচ্ছেন। তারও আগে গত ১৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভোজ্যতেল উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৪ টাকা নির্ধারণের কথা বলা হয়। অ্যাসোসিয়েশনটি বলেছিল, গত বছরের জুন থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম অস্থিতিশীল থাকায় এবং দেশের চাহিদার ৯৫ শতাংশ বিদেশ থেকে আমদানি হওয়ায় তেলের দাম বাড়ছে। মন্ত্রণালয় নিয়মিতভাবে দেশীয় উৎপাদন, আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি, আমদানি পরিস্থিতি এবং স্থানীয় বাজার পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দামের ঊর্ধ্বগতির তুলনায় দেশে সয়াবিন তেলের দাম তুলনামূলক কম বেড়েছে। গত মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এক বছরে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল ছিল। তবে ভোজ্যতেলের বাজারদর বেশ খানিকটা বৃদ্ধি পায়। জুন ২০২০ এর পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। যেহেতু ভোজ্যতেল একটি আমদানিনির্ভর পণ্য, তাই এর বাজারদর নির্ভর করে মূলত আন্তর্জাতিক বাজারদরের ওঠানামার ওপর। মোট চাহিদার ৯৫ শতাংশের বেশি আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। তাই সা¤প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় বাজারেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে যে পরিমাণে দাম বেড়েছে, স্থানীয় বাজারে সেই পরিমাণে বাড়েনি।
যোগাযোগ করলে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা হায়দার আজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনসহ ভোজ্যতেলের দাম এতই বেড়েছে যে ঋণপত্র (এলসি) খোলা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেশের বাজারে দাম সমন্বয় না করলে কেউ এলসি খুলবেন না, তাতে আরও সংকট হবে।’ তবে এক লাফে ১৩ টাকা বৃদ্ধির বিষয়ে কিছু বলতে চাননি তিনি। দেশের ইতিহাসে সয়াবিন তেল এখন সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত যত টাকাই বৃদ্ধি হোক, নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জন্য তা চাপ তৈরি করবে। তবে ট্যারিফ কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের কথা হুবহু বিশ্বাস না করে তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করছে বলে জানা গেছে।