সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪০ অপরাহ্ন

বোরোর বাম্পার ফলনে খুশি কৃষকরা

নুর আলম নীলফামারী :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৬ মে, ২০২১

‘চারা রোপণ থেকে শুরু করে কর্তন ও মাড়াই পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ প্রায় সাত হাজার টাকা আর বিঘা প্রতি উৎপাদন হয়েছে ২৫মণ পর্যন্ত। কাঁচা ধান মণ ৭’শ টাকা দরে বস্তা প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকায়। বাজার দরও ভালো।’ বলছিলেন নীলফামারী সদর উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের উত্তরা শশী ক্যানেলের পাড় এলাকার কৃষক ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন আড়াই বিঘা জমিত বোরা ধান আবাদ করেছি ‘এবার ধান আবাদও যেমন ভালো হইছে তেমন ভালো দামও পাইছি’। একই এলাকার আরেক কৃষক আবেদ আলী জানান, বিঘা প্রতি ৩০মন পর্যন্তও ধান হইছে। অন্যান্য বছর ব্লাস্ট রোগের প্রকোপ দেখা গেলেও এইবার এই রোগের আক্রমণ কম হইছে। যার কারণে ফলন ভালো হইছে। শুকনো ধান ১৬০০টাকা পর্যন্ত বস্তা প্রতি(৮০কেজি) বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, ধান কর্তনের জন্য শ্রমিক পাওয়া একটু কষ্টকর হচ্ছে। শ্রমিকরা বিঘা প্রতি ২৫০০ টাকা নিচ্ছে কর্তন করে দিতে। জলঢাকা উপজেলার কাঁঠালি ইউনিয়নের দক্ষিণ দেশিবাঈ এলাকার কৃষক মজনু ইসলাম বলেন, ৬বিঘা জমিত ধান করেছি। আবাদ ভালো হইছে। বিঘা প্রতি ২৫মণ পযন্ত ধান উঠছে। শুকনো ধান বস্তা ১৬০০ টাকারও বেশি বিক্রি হয়ছে। খরচ বাদ দিয়া বিঘা প্রতি দশ হাজার টাকারও বেশি লাভ থাকিবে। কৃষক ইদ্রিস আলী, আবেদ আলী কিংবা মজনু ইসলামই নয় এবার খুশি নীলফামারী জেলার তিন লাখেরও বেশি কৃষক। আবহাওয়া অনুকুলে থাকা, সময়মত সার বীজ প্রয়োগ, ব্লাস্ট রোগের প্রকোপ না থাকা এবং কৃষি বিভাগের সার্বিক তদারকির ফলে বাম্পার ফলন হয়েছে বোরো ধানের। পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের ধান ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখন পর্যন্ত ৬’শ বস্তা ধান কিনেছি কৃষকদের কাছ থেকে। কাঁচা ১৪০০ টাকা এবং শুকনো ১৬০০টাকা বস্তা দরে। দুই হাজারের কাছাকাছি বস্তা ধান কেনার ইচ্ছে রয়েছে আমার। কৃষকরা ধান বিক্রি করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অন্যান্য বার কৃষকরা মন খারাপ করলেও এবার সেটি নেই। উত্তরা শশী গ্রাম গিয়ে দেখা যায় কৃষক শামীম হোসেনের ধান কর্তন করে দিচ্ছে দশজনের একটি দল। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শ্রমিক শরিফুল ইসলাম। শরিফুল জানান, বিঘা প্রতি ২৫০০ টাকা করে নিচ্ছি আমরা। দিনে চার বিঘা পর্যন্ত কর্তন করা যায়। গোড়গ্রাম ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সৌমেন রায় জানান, হাইব্রিড জাতে ধান আবাদ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। বিশেষ করে ৯২জাতের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিঘা প্রতি ৩০মনও হয়েছে। কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ সঠিক সময়ে সার বীজ, নিড়ানি এবং সেচ প্রয়োগের ফলে বাম্পার ফলন উঠেছে কৃষকের ঘরে ঘরে। জেলা কৃষি বিভাগ সুত্র জানায়, ৮১হাজার ৫৩৫হেক্টরে এবার বোরো আবাদ হয়েছে। আর চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে জেলায় শতকরা ৯৫ ভাগ জমির ধান কর্তন করা হয়েছে বাকি অংশ আগামী ১০দিনের মধ্যে কর্তন শেষ হয়ে যাবে। ২৮, ২৯, ৩৯ জাত ছাড়াও এবার ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত ৯২জানের ধান ভালো ফলন দিয়েছে। বিঘা প্রতি ৩০মনেরও বেশি ফলন হয়েছে। জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নীলফামারী উপ-পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, গেল আমন মৌসুমে আমরা তুলনা মুলক কম ফলন পেয়েছি। যার কারণে সরকারের নির্দেশে এবার বোরো আবাদে জোড়ালো পর্যবেক্ষণ ছিলো। মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরা সার্বিক ভাবে মনিটরিং করেছেন বোরোতে পাশাপাশি আবহাওয়া অনুকুলে থাকা এবং ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ কম হওয়ায় বাম্পার ফলনে প্রভাব রেখেছে। এদিকে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ কর্মসুচী শুরু করেছে জেলা খাদ্য বিভাগ। ২৭ টাকা কেজি দরে জেলা সাতটি খাদ্য গুদামে ১১ হাজার ৯৫৬মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে বোরো মৌসুমে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক ভুঁইয়া জানান, আগামী ১৬ আগষ্ট পর্যন্ত সংগ্রহ অভিযান চলবে। ইতোমধ্যে জেলার খাদ্য গুদামগুলোতে কৃষকদের কাছ থেকে ধান নেয়া হচ্ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com