শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ধনবাড়ীতে আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে শুরু প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্ত যুদ্ধ দিবস পালিত মাধবদীতে জ্যান্ত কই মাছ গলায় ঢুকে কৃষকের মৃত্যু বদলগাছীতে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী কালীগঞ্জে কৃষক মাঠ দিবস ও কারিগরি আলোচনা লতিফ মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন নড়াইলের কালিয়া উপজেলার শ্রীনগর গ্রামে ভ্যানচালককে পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন বরিশালে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী মেলার উদ্বোধন হাতিয়ায় দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার ক্যাম্পাসে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বেলায়েত স্মৃতি কর্ণার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আমিরুল ইসলামের পক্ষে ছাত্রলীগের গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ

ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৭ মে, ২০২১

১০ দিনে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে বুধবার পর্যন্ত ২২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। জাতিসঙ্ঘের মতে, ৫৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। ইসরাইলি যুদ্ধবিমান গাজায় আলজাজিরা ও এপি অফিসভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে। স্কুল, হাসপাতাল ও বিদ্যুৎ কার্যালয় ধ্বংস করে দিয়েছে। ২০ লাখ জনঅধ্যুষিত ৩৬৫ বর্গকিলোমিটারের গাজা উপত্যকা এখন মৃত্যুপুরী। গাজা মূলত ‘পাখির খাঁচা’। দু’দিকে ইসরাইল, এক দিকে ভূমধ্যসাগর, অপর দিকে মিসর দ্বারা অবরুদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের এ ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রস্তাব ঠেকিয়ে দিচ্ছে। ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ জানায়, গাজায় ইহুদিদের তা-ব চলাকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলের কাছে ৭৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে বারবার ভেটোক্ষমতা প্রয়োগ করে ইসরাইলকে উদ্ধত বানিয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের রাখতে চায় দমিয়ে।
শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ব্রিটেনের প্রত্যক্ষ মদদে ইসরাইল বেপরোয়াভাবে ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালানোর সাহস পাচ্ছে, এ সত্য দিবালোকের মতো স্পষ্ট। ইসরাইলকে মধ্যপ্রাচ্যে আগ্রাসী শক্তি রূপে দাঁড় করানোর জন্য আমেরিকা বার্ষিক ৩.৪ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়ে থাকে। শক্তির ভারসাম্য না থাকার কারণে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো নির্বীর্য ও স্থানু। জনমতের তোয়াক্কা না করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে স্বৈরাচারীচক্র ক্ষমতার মসনদ আঁকড়ে রেখেছে বংশপরম্পরায়। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকার উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ২২টি দেশ নিয়ে গঠিত আরব লিগ একটি বিবৃতি পর্যন্ত দিতে পারেনি ইসরাইলি হামলায়। আসলে তাদের কিছু করার শক্তিও নেই, সাহসও নেই- অথচ ফিলিস্তিন আরব লিগেরই সদস্য। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী এরদোগান, পাকিস্তান ও ইরানের রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ ছাড়া গোটা পৃথিবীর নীরব ভূমিকা দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। মুসলমানরা আজ অভিভাবকহীন। অন্য কোনো জাতিগোষ্ঠী বিশেষত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও ইহুদি জাতির ২০০ মানুষ যদি মুসলমানরা মেরে ফেলত তাহলে এতক্ষণে হয়তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠত। মুসলমানের শত্রু মুসলমানই। জাতিসঙ্ঘ এবং ১৭৫ কোটি মুসলমানের প্রতিনিধিত্বকারী ওআইসি ‘কাগুজে বাঘ’। অধিবেশন ডেকে আলোচনা করে ও হালকা বিবৃতি দিয়ে যেন দায়িত্ব শেষ। ফিলিস্তিন ভূখ-ের সাথে যুক্ত মিসরের জনগণের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। ব্রাদারহুড বা ইখওয়ানের সংগ্রামী কর্মীদের ওপর মুসলমানদের প্রবল আস্থা। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের সরকারপ্রধান গদি রক্ষার স্বার্থে ইহুদি সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না এবং নেবেন না। আফসোস! কিছু আরব রাজা মুক্তিকামী হামাস যোদ্ধাদের বলছে ‘সন্ত্রাসী’- অথচ এটা ইহুদিদের পরিভাষা। আরব দেশসহ গোটা মুসলিম বিশ্বে দু-চারটি ব্যতিক্রম ছাড়া জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নেই। রাজতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক ও সামরিক সরকার ক্ষমতায়। জনসম্পৃক্ততার অভাবে এসব সরকার মেরুদ-হীন, দুর্বল ও ভীতু। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটেপুটে খাওয়ার প্রতিযোগিতা সর্বত্র। তাদের কাছে ক্ষমতার মসনদ মুখ্য এবং ইসলামের প্রতি মায়া, উম্মাহর চেতনা, মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ গৌণ। রাজা-বাদশাহদের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। আজ যদি শক্তিশালী খিলাফত ব্যবস্থা চালু থাকত, তাহলে খলিফাতুল মুসলিমিনের ডাকে সারা বিশ্বের মুক্তিযোদ্ধারা ফিলিস্তিনের নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের রক্ষায় এগিয়ে আসত। দুতিয়ালি, আলোচনা, যুদ্ধবিরতি, সংলাপ-এসব স্থায়ী সমাধান নয়। গত রমজানে নামাজরত অবস্থায়ও সশস্ত্র ইসরাইলি সেনা মুসলমানদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মসজিদুল আকসায় ইহুদিরা বহুবার হামলা চালিয়েছে এবং ১৯৬৯ সালে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। ইসরাইল সরকারের তত্ত্বাবধানে মসজিদের নিচে এবং চারপাশে খনন করে সুড়ঙ্গ তৈরি করা হচ্ছে, যাতে মসজিদটি ভেঙে হাইকলে সুলাইমানি নামক মন্দির (গড়ঁহঃ ঞবসঢ়ষব) স্থাপন করা যায়। জেরুসালেমকে ইহুদিমুক্ত করা না গেলে মসজিদে আল-আকসার পবিত্রতা রক্ষা সম্ভব নয়।
ইঙ্গ-মার্কিন-রুশ অক্ষশক্তির ষড়যন্ত্রের ফসল ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল। তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার আর্থার জেমস বেলফোর আরব বিশ্বের বুকে এ ‘বিষফোঁড়া’র জন্ম দেন। ১৯৪৮ সালের আগে পৃথিবীতে ইসরাইল নামক কোনো স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ছিল না। ডেভিড বেন গুরিয়ন ১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর ইসরাইলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তৎকালীন সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঁদ্রে গ্রোমিকো ১৫ নভেম্বর এ স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি ও অনুমোদন দেয়ার জন্য জাতিসঙ্ঘের প্রতি আহ্বান জানালে আমেরিকা, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ব্রিটেনসহ ৩৩টি দেশ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়। নবগঠিত ইসরাইলের কোনো আন্তর্জাতিক সীমানা, কোনো সুনির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী, কোনো বৈধ সরকার, পার্লামেন্ট বা সার্বভৌমত্ব ছিল না। এটা মূলত একটি কৃত্রিম, অস্বাভাবিক ও পুতুল রাষ্ট্র (ঝধঃবষষরঃব ঝঃধঃব)।
ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইহুদিরা যে ধরনের গোষ্ঠীবদ্ধ নির্যাতন চালিয়েছে সমকালীন ইতিহাসে তার নজির নেই। ১৯৮২ সালে বৈরুতের শাবরা ও শাতিলা উদ্বাস্তু শিবিরে ইহুদি মিলিশিয়া আর ফালাঞ্জিস্ট খ্রিষ্টানরা মিলে হামলা চালিয়ে নারী-শিশুসহ ১৫ হাজার ফিলিস্তিÍনিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। আমেরিকা এবং ইউরোপ থেকে ইহুদিদের এনে ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়। আর ফিলিস্তিনিরা ধীরে ধীরে নিজ দেশে হয়ে গেলেন পরবাসী। সে সময় ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল ৯২ শতাংশ ভূখ-। জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশেরও বেশি ছিলেন ফিলিস্তিনি। ১৯৪৮ সালে সংঘটিত আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের ৭৮ শতাংশ ভূখ- ইহুদিদের দখলে চলে যায়। দখলদারদের জুলুম-নির্যাতনে ৪০ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুভিটা হারিয়ে আরব দেশগুলোতে চলে যেতে বাধ্য হন। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের পর ১১ লাখ ইহুদি ফিলিস্তিনে এসে বসতি গড়ে তোলে। ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইসরাইলের জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৭ লাখ ৫১ হাজারে। তবুও ইহুদিরা সন্তুষ্ট নয়, তাদের পরিকল্পনা হচ্ছে- ইরাকের ইউফ্রেটিসের তীর থেকে মিসরের নীলনদ পর্যন্ত তেলসমৃদ্ধ সব এলাকা দখলে নিয়ে একটি জায়ন বা ইহুদিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
বসতি নির্মাণ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরাইল মিসরের সিনাই উপত্যকা, ফিলিস্তিনের পূর্ব জেরুসালেম, পশ্চিম তীর আর গাজা দখল করে নেয়। জাতিসঙ্ঘ সেসব জমি ফেরত দিতে এবং দখলিকৃত জমিতে ইহুদি বসতি স্থাপন অবৈধ ঘোষণা করে কয়েকটি প্রস্তাব পাস করেছে, কিন্তু ইহুদিরা কোনো প্রস্তাবই গ্রাহ্য করেনি। উল্টো ক্রমেই ইসরাইল আরো বেশি আরব জমি দখল করে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন অব্যাহত রাখে। যে মুহূর্তে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ‘স্বপ্নকে’ পূর্ণতা দেয়ার দাবি জাতিসঙ্ঘে উপস্থাপন করছেন, সে সময় পূর্ব জেরুসালেমে এক হাজার ১০০ নতুন ইহুদি বসতি স্থাপন করা হয়। পাঁচ লাখের বেশি ইসরাইলি এখন দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূমির অধিবাসী। ক্রমশ ইহুদিরা যেভাবে ফিলিস্তিনি ভূমি দখল করে নিচ্ছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের জন্য যথেষ্ট জমি অবশিষ্ট থাকবে কি না, সন্দেহ। পূর্ব জেরুসালেম ও পশ্চিমতীরে ইসরাইলি বসতি স্থাপন চলতে থাকবে, আর আলোচনার প্রহসনও চলবে। অথচ এমনটি হতে পারে না। এ দিকে পশ্চিমতীর, গাজা, লেবানন, সিরিয়া আর জর্দানের শরণার্থী শিবিরগুলোতে ৭০ লাখ ফিলিস্তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এখন পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রের দাবিতে ফিলিস্তিনিরা ঐক্যবদ্ধ। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ-পূর্ববর্তী সীমান্ত অনুযায়ী পশ্চিমতীর, পূর্ব জেরুসালেম ও গাজা নিয়ে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র চান ফিলিস্তিনিরা। ১৯৬৭ সালের ছয়দিনের যুদ্ধের পর থেকে গাজা অবরোধ করে রাখে ইসরাইল। ইহুদিরা এত বেপরোয়া যে, আন্তর্জাতিক কোনো আইন-কানুনকে তারা তোয়াক্কা করে না। আজ পর্যন্ত জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইসরাইল বরাবর ৮৯টি প্রস্তাব রেখেছে। কিন্তু এর কোনোটিই বাস্তবায়ন করেনি ওরা। সাধারণ পরিষদ ২০০টি প্রস্তাব দিয়েছে তাদের বরাবর। কিন্তু এর একটাও পালিত হয়নি। তাদের চক্রান্তের পেছনে আছে যুক্তরাষ্ট্রসহ সাম্রাজ্যবাদী মিত্রশক্তি।
নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে চীন ও রাশিয়া ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়েছে। অস্থায়ী সদস্য দেশের মধ্যে এ তালিকায় রয়েছে- বসনিয়া-হারজেগোভিনা, ব্রাজিল, গ্যাবন, ভারত, নাইজেরিয়া, লেবানন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। সাধারণ পরিষদের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১২৭টিই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। গুটি কয়েক বাদে বাকি ৬৬ রাষ্ট্রেরও সমর্থন পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। কারণ দেশে দেশে নেতৃত্বের পরিবর্তন হলে আন্তর্জাতিক পলিসিও বদলায়। যেসব দেশ এ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাদের মোট জনসংখ্যা বিশ্বের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ (৫.২ বিলিয়ন)। আরো দেখা যায়, পশ্চিম ইউরোপ আর উত্তর আমেরিকা ছাড়া সবাই কার্যত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকার করে নিয়েছে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ইতিহাসের বাস্তবতা। শক্তির জোরে ফিলিস্তিনিদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। ৪৫০ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র্রের অস্তিত্ব ছিল। এমনকি দেশটির ছিল গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ অতীত। ১৯৪৮ সালে জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীরা দেশটির অস্তিত্ব বিপন্ন করেছে। অতঃপর ইসরাইলের অব্যাহত আগ্রাসনে ফিলিস্তিনিরা স্বদেশচ্যুত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের কিছু দেশের ইহুদিপ্রীতি সত্ত্বেও স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য ফিলিস্তিনি জনগণ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পূর্বতিমুর ও দক্ষিণ সুদান স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেলে ফিলিস্তিনের পেতে বাধা দেয়া হবে কেন? এটা নিঃসন্দেহে একচোখা আচরণ। ফিলিস্তিনিদের প্রতি বিশ্বের বেশির ভাগ রাষ্ট্রের সমর্থন থাকায় একদিন জেরুসালেমে স্বাধীনতার সূর্য উঠবে, এ বিশ্বাস তারা লালন করে চলেছেন। পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। যত দিন যাচ্ছে, ফিলিস্তিনিরা শক্তিশালী হচ্ছেন। ইতিহাস প্রমাণ করে, কোনো জাতির আত্মত্যাগ বৃথা যায় না। ইসরাইলি তা-ব যত বৃদ্ধি পাবে, নতুন করে সৃষ্টি হবে ‘ইন্তিফাদা’ বা গণ-অভ্যুত্থান। স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা যে কল্পনামাত্র তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ঈমানী চেতনাকে শাণিত করা গেলে, মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হলে এবং মুসলিম দেশে বৈশ্বিক মানের উন্নততর অস্ত্রশস্ত্র তৈরির কারখানা স্থাপন করতে পারলে একদিনেই মসজিদে আল-আকসা উদ্ধার করা যাবে, অন্যথায় এটা স্বপ্ন থেকে যাবে। মুসলমানদের মাঝে বিভেদের কারণে আজ ইহুদিরা মুসলমানদের প্রাণের নগরী জেরুসালেম দখল করে নিয়েছে। ইসরাইলের রাজধানী বানিয়ে ফেলেছে জেরুসালেমকে। মুসলমানরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হয়, সে দিন বেশি দূরে নয় যে, তারা মসজিদে আল-আকসা গুঁড়িয়ে দেবে এবং কাবাগৃহও দখলের চেষ্টা করবে। মুসলমানরা ইহুদি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নিজেরা সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়ছে; একে অপরকে হত্যা করছে। সঙ্কীর্ণতা পরিহার করে দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করতে হবে। দৃষ্টি বড় না করলে নেতৃত্ব দেয়া যায় না।
দেড় হাজার বছর আগে মহানবী সা: ঘোষণা করে গেছেন- ‘আলা ইন্নাল কুওয়াতা আর রামইউ। মান আলিমার রামইয়া ছুম্মা নাছিয়া ফালাইছা মিন্না।’ ‘জেনে রেখো, দূর নিক্ষেপণ হচ্ছে শক্তি। দূর নিক্ষেপণ প্রযুক্তি যে শিখল, অতঃপর ভুলে গেল, সে আমার উম্মত নয়।’ রাসূলুল্লাহ সা:-এর বাণী অত্যন্ত তাৎপর্যবহ। বর্তমান বিশ্বে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র যেসব দেশের আছে, সেসব দেশ ‘সুপার পাওয়ার’। বিশ্বখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন শায়খ ইবনে কাছিরের ভাষ্য মতে, রাসূল সা: দু’জন সাহাবি- গায়লান ইবনে আসলাম ও উরওয়াহ ইবনে মাসউদ রা:কে দামেস্কে পাঠিয়েছিলেন ট্যাংক (দাব্বাবা) কিভাবে বানায়, হাতে-কলমে তার প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য। দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় হুনাইনের যুদ্ধে তারা অংশ নিতে পারেননি। সুতরাং উন্নততর অস্ত্র নির্মাণের প্রশিক্ষণ নেয়া সুন্নাতে রাসূল সা:। এ জন্য মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের এগিয়ে আসতে হবে।
মুসলমানরা আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র ও দূরপাল্লার রকেট উদ্ভাবন করতে পারলে বিশ্বে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি হতে সময় লাগবে না। মুসলমানরা আমেরিকা-ব্রিটেন-ফ্রান্স থেকে অস্ত্র কিনে জেরুসালেম জয় করতে পারবে না, নিজেদেরকেই অস্ত্র তৈরি করতে হবে। আগ্রাসন প্রতিরোধ, অখ-তা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহতকরণ এবং নিরবচ্ছিন্ন শান্তির জন্য সামরিক শক্তি অর্জন অপরিহার্য। সামরিক শক্তির কারণে মাত্র এক কোটি ইহুদি ২০০ কোটি মুসলমানকে পাত্তা দিতে চাচ্ছে না।
আমাদের মানতে হবে যে, কেবল সামরিক শক্তি থাকলেই বিজয় নিশ্চিত হবে এ কথাও সত্য নয়। মুসলমানদেরকে ঈমান ও আমলকে সুদৃঢ় করতে হবে। এটা পূর্বশর্ত। তাই বলে সামরিক শক্তির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। রাসূলুল্লাহ সা: এবং সাহাবিরা আল্লাহ তায়ালা হওয়া সত্ত্বেও প্রতিটি যুদ্ধাভিযানে অস্ত্র হাতে নিয়েছেন। যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে সিজদাবনত হয়ে আল্লাহ তায়ালার দরবারে প্রার্থনা করে ছিলেন। মিনজানিক নামক অস্ত্র আবিষ্কার করেন। সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালার রহমতের ওপর ভরসা করেছেন। আল্লাহ তায়ালার দয়া এবং সামরিক শক্তির সমন্বয় ঘটাতে পারলে বিজয় সুনিশ্চিত।
মুসলমানদের হতাশ হলে চলবে না। তাদের হাতে আছে দক্ষ ও অদক্ষ বিপুল মানবসম্পদ; তেল, গ্যাস, স্বর্ণ, লোহা, কয়লা, তামাসহ অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ। সৌদি আরব প্রাকৃতিক সম্পদের মজুদের দিক দিয়ে গোটা বিশ্বে দ্বিতীয়। এর মূল্য এখন ৩৪.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। তুরস্কের রয়েছে কৃষ্ণসাগরজুড়ে তেল ও গ্যাসের মজুদ। গোটা দুনিয়ায় মোট ৮০ শতাংশ তেল ও গ্যাস, ৬০ শতাংশ কয়লা, ৬৫ শতাংশ স্বর্ণ, ৭৫ শতাংশ রাবার ও পাট এবং শতভাগ খেজুরের মজুদ মুসলিম দেশগুলোর হাতে। কেবল সম্পদ থাকলে হয় না। সম্পদকে ইতিবাচক পন্থায় কাজে লাগাতে হয়। মুসলমানরা যদি আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে প্রযুক্তির সাহায্যে প্রাকৃতিক সম্পদকে নিজেদের স্বার্থে এবং মুসলিম বিশ্বের কল্যাণে কাজে লাগায় এবং সামরিক শক্তি অর্জনে পাশ্চাত্য নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে পারে, সফলতা আসতে দেরি হবে না।
মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা দুনিয়ায় যেসব মুক্তিসেনা তাজা রক্তের বিনিময়ে নবীন প্রভাতের সূচনা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তাদের এগিয়ে আসতে হবে আগ্রাসন প্রতিরোধে। ফিলিস্তিনের শাহাদতপ্রাপ্ত নারী-পুরুষের প্রতিটি ফোঁটা রক্ত বুলেট হয়ে ইহুদি ও তাদের দোসরদের আঘাত হানবে, এটা কেবল সময়ের ব্যাপার। হামাস ও ফাতাহর বিভাজন রেখা মুছে ফেলতে হবে। ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সাহস জোগাতে হবে; তুলে দিতে হবে তাদের হাতে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। আল্লাহ তায়ালার সাহায্য সন্নিকটে। মুজাহিদিনদের কোরবানির বদৌলতে বদরের মতো গাজায় পরিস্থিতি-পরিবেশ আবার তৈরি হোক, এটাই শান্তিকামী মানুষের কামনা ও মুনাজাত। লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক,drkhalid09@gmail.com




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com