শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০২:২২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বগুড়া শেরপুরে আগুনে পুড়লো পঁচিশ বিঘা জমির ভুট্টা ইসলামাবাদে ভোট কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগে মানববন্ধন বীর মুক্তিযোদ্ধার নির্মাণাধীন দোকানে সন্ত্রাসী হামলা বাগেরহাট নানান আয়োজনে মে দিবস পালিত ভালুকা বিশেষায়িত পেঁয়াজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন বরিশালে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভুট্টা মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষকেরা, দ্বিগুণ লাভের আশা নগরকান্দায় অগ্নিকান্ডে চারটি দোকান ঘর ভস্মীভূত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে গণতন্ত্রের মুক্তি হবে না-কেন্দ্রীয় বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার গলাচিপায় পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভা ও জাতীয় স্বাস্থ্য ও কল্যাণ দিবস পালিত

‘রাব্বি জিদনি ইলমা’

মো: আবদুল গনী শিব্বীর:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৭ মে, ২০২১

জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য আমরা স্বভাবত এ দোয়া পড়ে থাকি, রাব্বি জিদনি ইলমা, রাব্বিস রাহলি সাদরি ওয়া ইয়াসসিরলি আমরি ওয়াহলুল ওকদাতাম মিন লিসানি ইয়াফকাহু কাওলি, রাব্বি ইয়াসসির ওয়ালা তোয়াসসির ওয়াতাম্মিম আলাইনা বিল খাইর’। অর্থাৎ ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন, আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন, আমার সব কর্ম সহজ করে দিন, আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন, হে আমার প্রভু আমার জন্য সহজ করে দিন আর আপনি আমার জন্য কঠিন করবেন না, আর আমাদের শেষ পরিণতি কল্যাণময় করুন।
এ দোয়ার প্রতিধ্বনি পবিত্র কুরআনে রয়েছে, মূসা বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন এবং আমার কর্ম সহজ করে দিন। আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন। যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে’ (সূরা ত্বহা, আয়াত : ২৫-২৮)।
রাসূল সা: তাঁর উম্মতদেরকে দোয়া করার পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা করে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে এভাবে দোয়া করবে, হে আল্লাহ আপনি যা সহজ করে দিন তা ব্যতীত কোনো কিছুই সহজ নেই। আর আপনি চাইলে পেরেশানিযুক্ত কাজও সহজ করে দিন’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস-৯৭৪)।
ইলম মহান আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য অনুগ্রহ ও মহাদান। মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্বের মূলেই রয়েছে জ্ঞান তথা ইলম। শুধু মানবজাতি বাকশক্তিসম্পন্ন, তারা কথা বলতে পারে, যেকোনো বিষয় সাবলীলভাবে বর্ণনা করতে পারে। একজনের কথা অপরজন স্বাভাবিকভাবে বুঝতে পারে। মানুষের এই বিস্ময়কর ক্ষমতা মহান আল্লাহ প্রদত্ত মহা নিয়ামত। তিনি মানুষকে জ্ঞানবান করে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর স্মরণশক্তিকে প্রখর করে দিয়েছেন। স্মৃতিশক্তির বিবেচনায় মানুষ অজানাকে জেনে স্মরণ রাখতে পারে। কদাচিৎ স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা হেতু মানুষ স্মরণযোগ্য বিষয়কেও ভুলে যায়। মানুষের এ ভুলে যাওয়ার প্রবণতাও এক ধরনের আপদ, আরবি প্রবাদে আছে, ‘আফাতুল ইলমি আন নিসইয়ান’ জ্ঞানের বিপদ ভুলে যাওয়া। মানুষকে জ্ঞানের এ আপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে দোয়া শিক্ষা দেয়ার জন্য রাসূল সা:কে উপলক্ষ করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘ (বলো) হে আমার প্রভু, আমার ইলম বৃদ্ধি করে দাও’ (সূরা ত্বহা, আয়াত-১১৪)। আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা কুরতুবি রহ: বলেন, ইলমের চেয়ে অন্য কোনো আমল যদি আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় হতো তবে তিনি নবী সা:কে সেটা বৃদ্ধির জন্যই দোয়া করতে নির্দেশ দিতেন। কুরআনে কারিমে নবী সা:কে ইলম ছাড়া অন্য কোনো জিনিস বৃদ্ধির জন্য দোয়া করতে নির্দেশ দেয়া হয়নি।
ইলমের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার প্রতি উৎসাহ দিয়ে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম দান করা হয়েছে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন’ (সূরা মুজাদালাহ, আয়াত-১১)। তিনি আরো ইরশাদ করেন, ‘মুমিনদের সবার একসাথে অভিযানে বের হওয়া সঙ্গত নয়, তাদের প্রত্যেক দলের এক অংশ বহির্গত হয় না কেন, যাতে তারা দ্বীন সম্বন্ধে জ্ঞানানুশীলন করতে পারে এবং তাদের স¤প্রদায়কে সতর্ক করতে পারে, যখন তারা তাদের কাছে ফিরে আসবে। যাতে তারা সতর্ক হয়’ (সূরা তাওবা, আয়াত-১২২)।
হজরত সাফওয়ান ইবনে আসসাল রা: বলেন, আমি নবী সা:-এর কাছে এলাম। তখন তিনি মসজিদে বসেছিলেন। আমি তাঁকে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমি এসেছি ইলম শিক্ষা করার জন্য। তিনি বললেন, ‘তালেবে ইলমকে মারহাবা। নিশ্চয় তালেবে ইলমকে ফিরিশতারা বেষ্টন করে রাখে এবং তাদের ডানা দিয়ে তাকে ছায়া দিতে থাকে। অতঃপর তারা সারিবদ্ধভাবে প্রথম আসমান পর্যন্ত মিলে মিলে দাঁড়িয়ে যায়। এসব কিছু তারা সে যা অন্বেষণ করছে তার ভালোবাসায় করে’ (আখলাকুল উলামা, আর্জুরি ১/৩৭; তবারানি কাবির, হাদি-৭৩৪৭; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, হাদিস-৫৫০)।
প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা কুরতুবি রহ: বলেন, ‘কুরআনের এই আয়াতটি ইলম অন্বেষণ ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে একটি বড় দলিল। তিনি আরো বলেন, ইলম অন্বেষণ করা এমন মহা সম্মান ও মর্যাদার বিষয়, অন্য কোনো আমল যার সমকক্ষ হতে পারে না’ (তাফসিরে কুরতুুবি ৮/২৬৬, ২৬৮)।
রাসূল সা:-এর পবিত্র জীবনী অধ্যয়ন করলে স্পষ্টভাবেই বুঝে আসে, তিনি ইলমকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ এবং বিরাট সওয়াবের কাজ হিসেবেই অবলম্বন করেছিলেন এবং এভাবে অবলম্বনের জন্যই উম্মতকে জোর তাকিদ করেছেন। ইলমের প্রতি এত উৎসাহ দিয়েছেন এবং এত অধিক ফজিলত বর্ণনা করেছেন যে, বৃদ্ধদের মাঝেও ইলম তলবের অদম্য স্পৃহা জেগে উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, ইলমের প্রতি অনীহা প্রকাশকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
ইলমের প্রতি কোনো এক স¤প্রদায়ের অনাগ্রহের কথা জানার পর তিনি ইরশাদ করেন, ‘ওই স¤প্রদায়ের কী হলো যে, তারা প্রতিবেশীদেরকে দ্বীনের সঠিক সমঝ ও বুঝ দান করে না; দ্বীন শিক্ষা দেয় না, দ্বীনের বিষয়াবলি বোঝায় না, তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ করে না, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে না? ওই স¤প্রদায়েরই বা কী হলো যে, তারা প্রতিবেশী থেকে দ্বীন শেখে না, দ্বীনের সঠিক সমঝ ও বুঝ নেয় না, দ্বীনের বিষয়াদি বুঝে নেয় না?
আল্লাহর কসম! হয়তো তারা তাদের প্রতিবেশীদেরকে দ্বীন শেখাবে, দ্বীনের সঠিক সমঝ ও বুঝ দান করবে, দ্বীনের বিষয়াদি বোঝাবে, সৎ কাজের আদেশ করবে, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে আর যারা জানে না ওরা তাদের থেকে শিখবে, সঠিক বুঝ গ্রহণ করবে, দ্বীনের বিষয়াদি ভালোভাবে বুঝে নেবে নতুবা আমি তাদেরকে দুনিয়াতেই নগদ শাস্তি দেবো’ (আলমুজামুল কাবির, তবারানি; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ ১/১৬৪)।
ইলম বৃদ্ধির জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া : ইলম বৃদ্ধির জন্য প্রথমেই আপনাকে বেশি বেশি পড়তে হবে। স্মৃতিশক্তির ক্ষতি হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। বেশি বেশি ‘রাব্বি জিদনি ইলমা’ পড়া। ‘রাব্বি জিদনি ইলমান নাফেয়া ওয়া ফাহমান কামেলা ওয়াকিনান সাদেক্বা’ অর্থাৎ ‘হে আমার রব আমাকে উপকারী জ্ঞান বাড়িয়ে দিন, পরিপূর্ণ বুঝ দান করুন, নিশ্চিত সত্যজ্ঞান দান করুন। ‘আল্লাহুম্মাফতাহলি আবওয়াবা হিকমাতিক, ওয়ানশুর আলাইয়া মির রাহমাতিক’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ আমার জন্য প্রজ্ঞার দ্বার খুলে দিন, আমার ওপর আপনার রহমত ছড়িয়ে দিন।’ আল্লাহুম্মা জাক্কিরনি মা নাসিতু, ওয়াহফাজ আলাইয়া মা আলিমতু, ওয়া জিদনি ইলমা’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ আমি যা বিস্মৃত হয়েছি তা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিন, যা জেনেছি তা হিফাজত করুন, আমার জ্ঞানকে বৃদ্ধি করে দিন। ‘আল্লাহুম্ম ফাক্কিহনি ফিদ্দিন’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ আমাকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন’। ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা কুওয়াতাল হিফজ, ওয়া সুরআতিল ফাহাম, ওয়া সাফায়িজ জেহেন’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ আমাকে আপনি মুখস্ত করার ক্ষমতা, দ্রুতভাবে বোঝার ক্ষমতা ও স্বচ্ছ মেধা দান করুন’। ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়া, ওয়া রিজকান তাইয়িবা, ওয়া আমালান মুতাকাব্বিলা’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, উত্তম রিজিক, কবুল হওয়া আমল প্রত্যাশা করছি’। ‘আল্লাহুম্মানফাআনা বিমা আল্লামতানা, ওয়া আল্লিমনা মা ইয়ানফাউনা, ওয়া জিদনি ইলমা’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ আপনি যা আমাদের শিখিয়েছেন তাতে উপকার দান করুন, আর আমাদের উপকারী জ্ঞান দান করুন, আর আমার জ্ঞানকে বৃদ্ধি করে দিন। পরিশেষে এ কথা বলা যায়, জ্ঞান মহান আল্লাহ পাকের মহা অনুগ্রহ ও মহা নিয়ামত। তিনি যাকে পছন্দ করেন তাকে তা দান করেন, যাকে পছন্দ করেন, তাকে হিকমত দান করেন। আল্লাহ পাক আমাদেরকে তাঁরই সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্তে জ্ঞানার্জনের তাওফিক দান করুন। আমীন। লেখক : মুহাদ্দিস, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা, নোয়াখালী।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com