মোঃ বাচ্চু ঢালী এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। দুই চোখেই আলো নেই তার। তাই বলে সে থেমে থাকেননি। তার মনের ভেতরে জমে থাকা কষ্ট পেছনে ফেলে দিয়ে জীবনের সব আনন্দ খুঁজে নিয়েছেন তিনি কাজের ভিতর। পৃথিবীতে কোনো কাজই যে অসম্ভব নয়, তা এরই মধ্যে দেখিয়ে দিয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী যুবক বাচ্চু ঢালি। বাচ্চুর অনেক প্রতিভাবান মানুষ। চোখে কিছু দেখতে না পেলে ও তিনি পাটখড়ি বা বাঁশ দিয়ে বেড়া বানানো (ছৈয়ালের কাজ), কাঠের কাজ, মুরগির ঘর, গোয়াল ঘর, ধান, পাট, গম কাটাসহ নানা ধরনের কাজ করতে পারেন। তাই তার নাম এলাকায় মানুষের মুথে মুখে। বাচ্চুর মুখে সব সময় হাসি লেগেই থাকে। দেখে মনে হয় তিনি দু’ চোখ দিয়ে পৃথিবীর সব কিছু দেখতে পান। বাচ্চু ঢালী বসবাস করেন শরীয়তপুর সদর উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম মাহমুদপুর গ্রামে। তিনি মৃত কালু ঢালী ও জাহানারা বেগম(৫৫) দম্পতির ছেলে। বাচ্চু ঢালির পরিবার সূত্রে জানাযায়, দুই বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে দুই চোখ হারান বাচ্চু ঢালি। আট ভাই-বোনের সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে। নুন আনতে পান্তা ফুরায় তাদের সংসারে। অভাবের কারণে স্কুলে যেতে পারেননি তারা। পড়াশোনাও হয়নি স্বাভাবিকভাবে। শৈশবের আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি অভাবের তাড়নায়।তবুও পিছিয়ে ছিলেন না বাচ্চু। দুই হাত দিয়ে কাজ করতে করতে এক সময় স্বপ্ন জেগে ওঠে বাচ্চুর মনে। কিন্তু চোখ ছাড়া কীভাবে কাজ করা সম্ভব? সাহস করে অনুমান ও অনুভব করে কাজগুলো করতে শুরু করেছেন বাচ্চু। ধীরে ধীরে তার কাজের উন্নতিও হতে লাগল। একপর্যায়ে তিনি অন্যের বাড়িত কাজ শুরু করেন। এতে তার আয় রোজগার শুরু হয়। শ্রমিকের কাজ যে মোটেও সহজ ছিল না সেটাই বলছিলেন বাচ্চু। তিনি বলেন, চোখ ছাড়া কাজ করা কঠিন। এ জন্য আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। তার এক ভাগিনা জয়নাল আবেদীন তাকে এ সব কাজ শিখিয়েছেন। তার প্রতি বাচ্চু ঢালী কৃতজ্ঞ। তিনি পাটখড়ি-বাঁশ দিয়ে বেড়া, কাঠের কাজ, মুরগির ঘর, গোয়াল ঘর বানানোর কাজ শিখে। এছাড়া অন্যের ধান, পাট, গমসহ সব ধরনের ফসল তুলতে পারেন তিনি। তাই অন্ধ হয়েও মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করেন। কাজ করলে দৈনিক ৪০০ টাকা করে পায়। সে নাকি বাইসাইকেল চালাতে পারে। অনুমান করে হেটে বাজারে যায়, কাজ করতে যায়। কারও ওপর নির্ভর করতে হয় না তার। সে এলাকার সুজন নামে এক ব্যক্তিকে এ কাজ কাজ শিখাচ্ছেন বলে জানান। বাচ্চু ঢালি বলেন, আমার বয়স যখন দুই বছর, তখন টাইফয়েড জ্বরে আমার দুই চোখ অন্ধ হয়ে যায়। বাবা-মায়ের সংসারে অনেক অভাব ছিল। আমার বাবা ২০১৪ সালে মারা যান। মা আমার সঙ্গেই থাকেন। ২০১৮ সালে আমি বিয়ে করি। আমার ছোট একটি ছেলে আছে। আমার চোখ নেই তবুও পরিবার ও প্রতিবেশীদের নিয়ে খুশি। বাচ্চুর স্ত্রী মর্জিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী অন্ধ বলে আমার কোনো দুঃখ নেই। তিনি অনেক ভালো মানুষসে খুবই কর্মঠ। তার সঙ্গে সারাটা জীবন কাটাতে চাই। বাচ্চুর মা জাহানারা বেগম বলেন, বাচ্চু আমার ছেলে। এটা ভেবে আমার গর্ব হয়। দুই বছর বয়সে চোখ দুটি হারায়। তবুও স্বাভাবিক মানুষের মতো চলতে পারে কাজ করতে পারে। আমার ছেলেটাকে আল্লাহ যেন সব সময় ভালো রাখেন। মাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান ঢালী বলেন, ছোট থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাচ্চু। প্রতিবন্ধী হয়েও কর্ম করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকার তাগিদে কাজ করছেন তিনি। তার পরিবারটি অনেক অসহায়। তাই আমার পরিষদের মাধ্যমে বাচ্চুকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হচ্ছে। তার মাকে বিধবা ভাতা ও স্ত্রীকে মাতৃকালীন ভাতা দেয়া হচ্ছে।