বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক শাহ আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে শাহ শাহেদ ফারুক নিজ হাতে তৈরি কৃত বিদ্যালয়ে করোনার কারনে বিভিন্ন ধরনের আগাছা বিদ্যালয়ে জন্মে ছিল, সেই সব আগাছা কথা শোনা মাত্রই বিদ্যালয়ে গিয়ে আগাছা গুলো পরিষ্কার করলেন। অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ এবং সহায়হীন মানব সন্তান ও প্রতিবন্ধীদের সমাজের সাথে একীভূত করার জন্য ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপাড়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় দেবী চৌধুরাণী বুদ্ধি প্রতিবন্ধী অটিজম বিদ্যালয়। এলাকার সমাজসেবী, জনপ্রতিনিধি ও তরুণদের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে দেবী চৌধুরাণী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয়টি। এটি উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণে রংপুর-সুন্দরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘেঁষে অবস্থিত। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন ২৩ জন এবং শিক্ষার্থী রয়েছে ১৬১ জন। এর মধ্যে প্রাক প্রাথমিকে আছে ৯৪ জন, প্রথম শ্রেণীতে ৩৯, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ১৯ এবং তৃতীয় শ্রেণীতে রয়েছে ৯ জন। জানাগেছে, বিশিষ্ট সমাজ সেবক শাহ মো: শাহেদ ফারুক , একদিন তার বাড়ি পাশ দিয়ে হাটছিলেন, এসময় দেখতে পেলেন একজন প্রতিবন্ধি ছেলে , ছেলেটিকে দেখে তারা মায়া জন্মে গেল, তিনি চিন্তা করলেন এদের নিয়ে কিছু করা দরকার। এই চিন্তা থেকে তৈরি তিনি করলেন একটি বিদ্যালয় যার নাম দিলেন দেবী চৌধুরাণী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির কথা উঠলে যার নাম সবার আগে চলে আসেন তিনি হলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক শাহ আব্দুর রাজ্জাকের কথা। তিনি ১ জানুয়ারি ১৯৩৩ সালে রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার চালুনিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মুলত একজন আর্দশ শিক্ষক ছিলেন। মাহিগঞ্জ আফান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তরেই সবছোট ছেলেন হলেন শাহ শাহেদ ফারুক। শাহ আব্দুর রাজ্জাকের রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের হয়ে কোচবিহারের দিনহাটায়। ১৯৫১-১৯৫২ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সময় বাংলা ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। রংপুর অঞ্চলে ৬ দফা আন্দোলনেও ভূমিকা রাখেন তিনি। তিনি ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের হয়ে গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসন থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ৮ দলের হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবং শাহ আব্দুর রাজ্জাক ১২ মার্চ ২০১৮ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে রংপুরের মাহিগঞ্জ সাতমাথায় নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। তারা গ্রামের বাড়ীর মসজিদের সামনেই কবর দেওয়া হয়। বিদ্যালয়টি তৈরি করার পেছনে তার অবদান অনেক বেশি, তিনি সব সময় পরামর্শ দিয়েছেন কিভাবে বিদ্যালয়টিকে সুন্দর করা যায়। তারেই পরামশ কাজে লাগিয়ে সবার নজরে আনে বিদ্যালটিকে তারেই ছোট ছেলে শাহ শাহেদ ফারুক। এছাড়াও বিদ্যালয়টি গড়ে তোলার জন্য অবদান রেখেছেন রংপুর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন মিয়া, ইউপি চেয়ারম্যান মো: শফিকুল ইসলাম, সাবেক প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস আলী মন্ডল, জমিদাতা সোলায়মান আলী, শাহ শাহেদ ফারুক, আনিছুল হক মাস্টার, তোজাম্মেল হক মাস্টার, আওয়ামী লীগ নেতা নুরন্নবী মিয়া, হাসান ইকবাল জুয়েল, মতিয়ার রহমান, শিক্ষক আনছার আলী বিএসসি, শিক্ষক শাহ আকতার হাবীব, ওয়াসিম আহমেদ, রকিবুল হাসান সিদ্দিকী, শহিদুল ইসলাম আকন্দ, ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলাম, হাফেজ আহমেদ আলী, আফছার আলী, ছায়েদা বেগম এবং দেবী চৌধুরাণী বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরিচালক রাজেকা রহমান। বিদ্যালয়টি তৈরি করার জন্য এলাকার জনহিতৈষি সোলায়মান আলী মিয়া বিনামূল্যে ২২ শতক জমি দান করেন। বিদ্যালয়টি তৈরি করার ক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি অবদান রেখেছন শাহ মো: শাহেদ ফারুক,তিনি বর্তমানে দেবী চৌধুরাণী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি। তিনি বলেন, সমাজে লুকায়িত অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিবন্ধীরা একটা অংশ। এ বিষয়টি সামনে নিয়ে দেবী চৌধুরাণী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই পীরগাছা উপজেলার সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষক এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের আর্থিক সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি অদ্যাবধি সবার দৃষ্টিনন্দন ও আর্দশ প্রতিবন্ধী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। এই প্রতিবন্ধী শিশুদের পেছনে রেখে কোনোভাবেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। তাই আমাদের সবার উচিত প্রতিবন্ধী শিশুদের পাশে দাঁড়ানো। তাদের শিক্ষা দিয়ে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। দেবী চৌধুরাণী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন মরহুম মতিয়ার রহমান। তিনি মারা যাওয়ার আগে একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রতিবন্ধীদের সমাজের মানুষের সাথে একীভুত করার যে চেষ্টা শুরু হয়েছে তারই অংশ হিসেবে ২০১৬ সালে সুদক্ষ পরিচালনা পর্ষদ ও দক্ষ শিক্ষকমন্ডলী এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে গড়ে ওঠে দেবী চৌধুরাণী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয়। এই মানব সন্তানদের নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা ও সমাজের সব নাগরিক, রাজনৈতিক ও সরকারের সহযোগিতা পেলে বিদ্যালয়টিকে সামনে এগিয়ে নেয়া সম্ভব।