রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
খেলাধুলার মাধ্যমে মাদককে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে-মাফরুজা সুলতানা মাইলস্টোন কলেজে নবম শ্রেণির বালিকাদের অংশগ্রহণে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ  ‘বিবেচনায় রয়েছে’: বদিউল আলম ১৬ বছর বঞ্চিতদের এবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বইমেলয় স্টল বরাদ্দের দাবি ইসির অগাধ ক্ষমতা থাকলেও প্রয়োগে সমস্যা ছিল: বদিউল আলম আমাদের শিক্ষা কর্মসংস্থান খোঁজার মানুষ তৈরি করছে, যা ত্রুটিপূর্ণ: প্রধান উপদেষ্টা সেন্টমার্টিন: ‘স্থানীয়দের জীবিকা বনাম পরিবেশ রক্ষা’ আ. লীগ-জাপা নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে কফিন মিছিল ১৫ বছরের জঞ্জাল সাফ করতে সময় লাগবে: মির্জা ফখরুল

টিকা নিয়ে চীনের সাথে চুক্তি হয়ে গেছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১২ জুন, ২০২১

টিকা নিয়ে চীনের সাথে চুক্তি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল শনিবার (১২ জুন) সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি।

এর কয়েকদিন আগে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে চীনা টিকার দাম প্রকাশ করা নিয়ে এত হৈ চৈ হলেও সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা এখন স্বীকার করছেন যে, চীনের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিনোফার্ম কিংবা সিনোভ্যাক কারও সঙ্গেই আজ অবধি বাংলাদেশের কোনো চুক্তি হয়নি। দু’দিন আগে ঢাকায় নিযুক্ত উপ-রাষ্ট্রদূত হুয়ালং ইয়ান এক ফেসবুক বার্তায় বলেছিলেন, চীন পরের কথা, সিনোফার্মের সঙ্গেই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো চুক্তি হয়নি। তার ওই বার্তার প্রতিক্রিয়া নিতে সেদিন পররাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে কেউই চুক্তি হয়েছে কি হয়নি- এ নিয়ে খোলাসা করে কিছু বলেননি। উভয় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং দায়িত্বশীল প্রতিনিধিদের প্রায় অভিন্ন দাবি ছিল- ‘চীনের টিকা কেনার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত।’ সোমবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বক্তব্য ছিল- চীন থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার অনুমোদন হয়েছে। শিগগিরই এটি আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সেখানে চুক্তি হয়েছে কি-না তা তিনি খোলাসা করেননি। সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র গতকাল মানবজমিনকে এটা নিশ্চিত করেছে যে, টিকা কেনার চুক্তি বিষয়ে চীনের উপ-রাষ্ট্রদূত যে দাবি করেছেন তা অসত্য নয়। দেশটির কাছ থেকে টিকা কেনার বিষয়ে এখনো কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি, চুক্তি তো নয়ই।
বিষয়টি এখনো নেগোসিয়েশন বা আলাপ-আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। দশ ডলারের যে দামটি প্রকাশ করা হয়েছে তাও ছিল প্রস্তাবিত জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, সেটি অত্যাবশ্যকীয়ভাবে গোপন রাখার শর্ত ছিল। বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে টিকা বিষয়ক তথ্যাবলি গোপন রাখার বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছিল এবং বেইজিংকে সেই প্রতিশ্র“তিও দেয়া হয়েছিল। বেইজিং এ সংক্রান্ত (নন-ডিসক্লোজার) আনুষ্ঠানিক চুক্তির একটি খসড়া ঢাকায় পাঠিয়েছিল জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবিত দাম এবং অন্যান্য বিষয় অনুমোদনের পরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিতে উপনীত হওয়ার প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু একজনের ভুলে সব আয়োজন ভণ্ডুল হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের টিকার প্রস্তাবিত দাম প্রকাশে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বেইজিং। তারা নোট ভারবাল পাঠিয়ে ঢাকার কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছে। জবাবে বাংলাদেশের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। ওই দুঃখ প্রকাশ সংক্রান্ত খবর চাউর হওয়ার পর (গত ৫ই জুন) ঢাকাস্থ চীন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন হুয়ালং ইয়ান নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট প্রচার করেন। চার প্যারার ওই পোস্টে তিনি উষ্মা প্রকাশ করে লিখেন- ‘অবাক লাগছে যে, কেন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব সময় ভুল তথ্য দেয়া হচ্ছে! যদি গণমাধ্যমের তথ্য সঠিক হয়ে থাকে। প্রথমত, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ এবং সিনোফার্মের মধ্যে কোনো চুক্তি হয়নি। দ্বিতীয়ত, এটা আসলে চীন সরকারের সঙ্গে নয়, বরং বাংলাদেশ সরকার এবং সিনোফার্মের মধ্যে একটি কমার্শিয়াল পার্চেইজ বা বাণিজ্যিক কেনাকাটার দরকষাকষি। আমরা প্রবলভাবে চেয়েছি বাংলাদেশি ভাই-বোনেরা তাদের অতি প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন পূর্বনির্ধারিত তারিখেই পাক।’
উল্লেখ্য, করোনা সংকট মোকাবিলায় চীনের প্রতিষ্ঠান সিনোফার্ম-এর সঙ্গে টিকা নিয়ে আলোচনা শুরু হয় বেশ কয়েক মাস আগে। বাংলাদেশ-চীনের টিকা কূটনীতির প্রক্রিয়ার মাঝেই ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত লি জিমিং দাবি করেন, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে না পারা ও সময়ক্ষেপণের কারণে টিকা কিনতে দেরি হয়েছে বাংলাদেশের। এরপরে টিকা নেয়ার প্রক্রিয়ায় আলোচনায় আসে অপ্রকাশযোগ্য চুক্তি। যার জন্য চীনা ভাষায় লেখার জায়গায় সই করে ফেলা এক ধরনের চাহিদাপত্র দিয়ে পরে তা কমানোসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক নানা দুর্বলতার কথাও উঠে আসে জনসম্মুখে। অপ্রকাশযোগ্য চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহিদা আক্তার জানিয়ে দেন ডোজ-প্রতি ১০ ডলারে বাংলাদেশকে দেড় কোটি করোনা টিকা দেয়ার চুক্তি করেছে চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ-সিনোফার্ম। টিকার দাম প্রকাশিত হওয়ার পর শ্রীলঙ্কাসহ কয়েকটি দেশে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কারণ ওই দেশগুলো চীনের কাছ থেকে ১০ ডলারের বেশি দামে প্রতি ডোজ টিকা কিনছে। বিতর্কের মুখে শ্রীলঙ্কার সরকার বলেছিল, সিনোফার্ম ও চীন দূতাবাস তাদের জানিয়েছে যে, বাংলাদেশের সঙ্গে ১০ ডলারে টিকা বিক্রির কোনো চুক্তি তারা করেনি। ধারণা করা হচ্ছে বেইজিংয়ের সেই অবস্থানই চীনের মিশন উপপ্রধান হুয়ালং ইয়ান তার ফেসবুক বার্তায় পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ওদিকে কোভিড ভ্যাকসিন: চীনের সিনোফার্ম-এর টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা যেসব কারণে শিরোনামে এক বিশ্লেষণ ছেপেছে বিবিসি বাংলা। ৬ই জুনের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে- চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিনোফার্ম থেকে দেড় কোটি টিকা কেনা নিয়ে নতুন জটিলতায় পড়েছে বাংলাদেশ। গোপনীয়তার চুক্তি লঙ্ঘন করায় আগের দামে বাংলাদেশ এই টিকা কিনতে পারবে কি-না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেন, উপহারের ৬ লাখ টিকা বাংলাদেশ পাবে। তবে সেটা কবে আসবে এখনো সেই তারিখ জানা যায়নি। তিনি বলেন, চীন থেকে তিন দফায় যে দেড় কোটি টিকা আনার কথা ছিল, তা নিয়ে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সেই বিষয়ে এখন কূটনৈতিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে এখনো তাতে কোনো অগ্রগতি নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বিবিসির সঙ্গে কথা বলেন। ওদিকে চীনের উপ-রাষ্ট্রদূতের ফেসবুক বার্তার সূত্র ধরে গত দু’দিনে দেশি বিদেশি সংবাদমাধ্যম বিভিন্নধর্মী রিপোর্ট করেছে। সেই সব রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, চুক্তি হয়নি বা বিষয়টি আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে মর্মে যেসব কথাবার্তা প্রচার করা হচ্ছে কিংবা চীনের সঙ্গে এখনকার আলোচনার যে গতি-প্রকৃতি তাতে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ১০ ডলার নয়, ১৫ ডলারেই চীনা টিকা কিনতে হতে পারে!




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com