রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৮ অপরাহ্ন

সরকারের কোনও বাজেটই বাস্তবায়ন হয়নি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন, ২০২১

জাতীয় সংসদে বিএনপি এমপি
বর্তমান সরকারের আগের ১২টি বাজেটের কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি বলে দাবি করেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। বাজেটকে অত্যন্ত বৈদেশিক নির্ভর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেট ৫০ বছরের ইতিহাসে সবচাইতে বেশি ঘাটতির বাজেট। এই বাজেট বাস্তবায়ন করোনাকালে মোটেই সম্ভব নয়। সেই দক্ষতাও নেই। এই মহাজোট সরকারের এটি ১৩তম বাজেট। এর আগে ১২টি বাজেট সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি।’ গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
আইন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমালোচনা করে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, ‘আজকে আমরা অপহরণ, গুম ও খুনের কথা বলছি। এই কিছুদিন আগে একজন আলেম নিখোঁজ হয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, খোঁজ নিচ্ছি। আজকে যদি তাকে ফিরিয়ে দিতে না পারেন, এটা রাষ্ট্রের জন্য বড় ব্যর্থতা হবে। আদনানকে অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে। তার পরিবারের আহাজারি আপনাকে শুনতে হবে।’ এছাড়াও খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবি করেন তিনি।
শেয়ার বাজার আইসিইউতে: বিএনপির এই এমপি বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রের আর্থিক কাঠামোতে দৃষ্টি দিতে গেলে সেখানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থানের প্রতি তাকাতে হবে। আমি নিঃসন্দেহে বলবো, বাংলাদেশের শেয়ার বাজার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছে। সেখানে মাঝে একটু খুলছে, আবার চোখ বন্ধ করছে। চোখ খুলেই দেখে দরবেশ বাবা চারদিকে ঘিরে আছে। তখন চোখ বন্ধ করে রাখে।’
ব্যাংক ভর্তি বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে: ব্যাংকগুলো সাংঘাতিক লোকদের দ্বারা আক্রান্ত। লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে। ঋণগ্রহীতারা ঋণ ফেরত দিচ্ছে না। তারা ঋণখেলাপি হচ্ছে না। তারা দেদারছে আনন্দ ফুর্তি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যে কারণে সকল ব্যাংক বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি এবং বঙ্গবন্ধু চিকিৎসক পরিষদের ডাক্তাররা চিকিৎসা দিচ্ছেন। আর অন্যান্য যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে একটি ভয়াবহ দুর্যোগকবলিত দেশে পরিণত হয়েছে। আইলা আক্রান্ত উপকূলীয় মানুষ যে রকম বিপর্যস্ত, সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এরকমই।’
সংসদে সরকারি দলের এমপিরা বাস্তব আলোচনা করেন না দাবি করে তিনি বলেন, ‘এখন রাষ্ট্রপরিচালনার কোনও দলিল নাই। সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলা হচ্ছেÍ জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। আমরা কি আর সেই জায়গায় আছি? বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ মুসলমান, ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। আমাদের ধর্ম কোরআন। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছিÍ কোরআনে ধর্মনিরপেক্ষতার কোনও স্থান নাই। সুতরাং, আমি মনে করি, সংবিধানে একটি বড় অসঙ্গতি রয়েছে। সংবিধানের সভা-সমাবেশের কথা বলা হয়েছে। সেগুলোর কি কোনও অস্তিত্ব আছে? আজকে ভিন্নমত প্রকাশের কোনও স্বাধীনতা আছে? ভিন্নমত প্রকাশ করতে পারছে?’
তিনি বলেন, ‘সংবিধানে যেকোনও দ-িত আসামিকে মাফ করে দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই মহাজোট সরকার আমলে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন খুনি দ-িত আসামিকে মাফ করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত নাড়া দিয়েছে বিশ্বকে যে, কিছুদিন আগে আলজাজিরা অল প্রাইম মিনিস্টার ম্যান প্রতিবেদনটি। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।’
খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা দাবি: হারুন বলেন, ‘সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক কারণে মাত্র দুই বছর সাজা দিয়ে তাকে চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছেন না। আর বাংলাদেশে আজকে দ-িত আসামিদের আপনারা মাফ করে দিচ্ছেন। এটি হতে পারে না। আজকে এখানে সংসদনেতা প্রধানমন্ত্রী আছেন। আমি আশা করবো, অবশ্যই তিনি তাকে সুচিকিৎসার সুযোগ দেবেন।’
জাতীয় সংসদের সরকারি ও বিরোধী দল একাকার দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরোধী দলের নেতা বাইরে বলছেন, বিরোধী দলের কোনও মূল্য নাই। আর সরকারি দল তাদের কি কোনও মূল্য আছে? সরকারি দলের মন্ত্রীরা বরাবরই বলছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ অপরিহার্য নয়। এভাবে কি কোনও রাষ্ট্র চলতে পারে? সরকারি-বিরোধী দল সম্মিলিত মেধা শক্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের ৫০ বছর বয়স হয়ে গেছে। এখনও পর্যন্ত এখানে বিচারক নিয়োগের কোনও কাঠামো বা নীতিমালা তৈরি করতে পারেনি। নির্বাচন কমিশন দরকার কী, এটাকে বিলুপ্ত করে দেন। ইতোমধ্যেই আমরা শুনছি, নির্বাচন কমিশনের এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছে।’
দেশে সকলের জন্য আইনের শাসন নেই দাবি করে এমপি হারুন বলেন, ‘৫০ বছর পর পাসপোর্ট থেকে আপনি ইসরাইলের শব্দটি বাদ দিলেন। নিঃসন্দেহে এটি অগ্রহণযোগ্য এবং এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করবো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম, মেজর সিনহা হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে ক্রসফায়ার বন্ধ হবে। সেদিন পুলিশের প্রধান, সেনাবাহিনীর প্রধান জাতির কাছে আশ্বস্ত করেছিলেন, আর আমরা এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- দেখতে চাই না। কিন্তু বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- হচ্ছে। এখান থেকে আমরা কখন ফিরে আসবো?’
সরকারের মন্ত্রীদের মনে হয় বিএনপির দায়িত্বশীল ব্যক্তি: হারুন এমপি বলেন, ‘আমাদের মুখে কাপড় দিতে হয়। অনেক ব্যক্তি আমাদেরকে উপহাস করে। তার বলেন, আপনারা কি সরকারি দলের মন্ত্রীদের ভাড়া করেছেন নাকি? কিছু কিছু মন্ত্রী সারাদিন সকালে একবার বিকালে একবার বিএনপিকে নিয়ে সকাল-বিকাল কথা বলছে। মনে হচ্ছে, তারা আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটির নেতা। তারা বিএনপির দায়িত্বশীল ব্যক্তি।’
আমি বিরোধী দলীয় দল নেতা: বাজেটের ওপর বক্তব্যকালে বিএনপির হারুন কিছুটা হাসির ছলে স্পিকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমাকে সময় দেবেন স্পিকার। কারণ, বিরোধী দলের নেতা তো আমি।’ এসময় সংসদে উপস্থিত থাকা মসিউর রহমান রাঙ্গা এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। মাইক ছাড়াই রাঙ্গা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।
তখন হারুন বলেন, ‘স্পিকার আমি আপনার প্রটেকশন চাই। স্পিকার রাঙ্গাকে আশ্বাস দেন হারুনের এই কথাটি এক্সপাঞ্জ করা হবে। এরপর সংসদ শান্ত হলে আবার বক্তব্য শুরু করেন হারুন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com