ভেবেছিলেন পর্দায় দুর্দান্ত অভিনয় করে তারকা হবেন। তাকে দেখেই ঝলকে উঠবে ক্যামেরা। যেখানেই যাবেন অনুরাগীরা তাকে ঘিরে থাকবেন। কিন্তু বাস্তবের মাটি যে অনেক কঠিন, অনেক দূরূহ। তাই জীবিতকালে তাকে ঘিরে আর ক্যামেরার ঝলক দেখা গেলো না। বরং বিনোদন জগতের পিছনে দৌঁড়াতে গিয়ে অকালেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হলো তাকে। তিনি এমন এক অভিনেত্রী যাকে মাত্র ৬ হাজার টাকার জন্য খুন হতে হয়েছিলো। তার সেই কাহিনি ৪ বছর পরও গায়ে কাঁটা দেয়। তিনি কৃতিকা চৌধুরী। হাতেগোনা কয়েকটি ছবিতেই দেখা গিয়েছে তাকে। ১৯৯০ সালে উত্তরাখ-ের হরিদ্বারে জন্ম তার। পড়াশোনা করেছেন উত্তরপ্রদেশের চিত্রকূট ইন্টার কলেজ থেকে। বরাবরই পড়াশোনায় মনোযাগী ছিলেন কৃতিকা। সে কারণে মা-বাবা ভেবেছিলেন তিনি পড়াশোনা নিয়েই থাকবেন। কিন্তু তা শেষমেশ হয়নি। কৃতিকার লক্ষ্য ছিলো বলিউড। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে তাই অভিনয় শিখতে দিল্লি চলে আসেন তিনি। তার জীবনের মোড় ঘুরতে শুরু করে দিল্লি থেকেই। দিল্লিতে তার পরিচয় হয় বিজয় দ্বিবেদী নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। বলিউডে নামজাদা পরিচালকদের সঙ্গে ওঠাবসা রয়েছে বলে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন বিজয়। কৃতিকা বিশ্বাস করেছিলেন বিজয়কে। তার সঙ্গেই মুম্বাই চলে আসেন তিনি। ক্রমে তাদের বন্ধুত্ব গাঢ় হয়ে যায় এবং মুম্বাইয়ে দু’জনে বিয়ে করে থাকতে শুরু করেন। ততোদিনে ছোটখাটো মডেলিং করতে শুরু করেছিলেন কৃতিকা। ২০১১ সালে ‘পরিচয়’ নামে একটি হিন্দি ধারাবাহিকেও সুযোগ পান।
তারপর ২০১৩ সালে কঙ্গনা রানাওয়াতের ছবি ‘রাজ্জো’তেও সুযোগ পান। এর বাইরে কয়েকটি ধারাবাহিকে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করছিলেন। তবে কোনোটাই তার মনের মতো চরিত্র ছিলো না। যে বিজয়ের উপর ভরসা করে তিনি মুম্বাই এসেছিলেন, কৃতিকার কেরিয়ার সেই বিজয়ের কোনো অবদান ছিলো না। এ নিয়ে দু’জনের সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করেছিলো। এরই মধ্যে ২০১৬ সালে আচমকা তাদের ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে বিজয়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিজয়ের গ্রেপ্তারের পর তার কুকীর্তি সামনে আসে স্ত্রী কৃতিকার। তারকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মুম্বাই আসা নবাগতদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতেন বিজয়। এ রকমই এক মহিলার থেকে ২২ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। সেই অপরাধেই গ্রেপ্তার হন বিজয়। বিজয়ের এই কীর্তি সামনে আসার পরই তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেন কৃতিকা। তারপর মুম্বাইয়ের লোখান্ডওয়ালার একটি এক কামরায় ফ্ল্যাটে একা থাকতে শুরু করেন। ২০১৭ সালে ১২ জুন ওই ফ্ল্যাট থেকেই তার পচাগলা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দুর্গন্ধ পেয়ে যখন পুলিশ ওই ফ্ল্যাটে পৌঁছায় তখনো তার পরিচয় জানতো না পুলিশ। এক কামরায় ওই ফ্ল্যাটের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র তখনো চালু ছিলো। তার ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি যাওয়ারও কোনো প্রমাণ মেলেনি। এই ঘটনায় প্রথমেই প্রাক্তন স্বামী বিজয়কে আটক করে জেরা শুরু করে পুলিশ। কিন্তু বিজয় এই খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। পরে সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কৃতিকার ফ্ল্যাটে শেষ বার তাদেরই ঢুকতে দেখা গিয়েছিলো। জেরায় ওই দু’জন খুনের কথা স্বীকারও করেন। কিন্তু খুনের কারণ জেনে হতচকিত হয়ে যায় পুলিশ। অবসাদগ্রস্ত কৃতিকা ক্রমে মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে পড়েছিলেন। ওই দু’জনের কাছ থেকে তিনি মাদক কিনতেন। কৃতিকার থেকে নাকি তারা ৬ হাজার টাকা পেতেন। বার বার বলা সত্ত্বেও যা কৃতিকা দিচ্ছিলেন না। শেষে ওই ৬ হাজার টাকার জন্যই খুন হন কৃতিকা। ধারালো অস্ত্র নিয়ে কৃতিকার মাথায় বারবার আঘাত করে তাকে খুন করা হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে মৃত্যু হয় তার। সূত্র: আনন্দবাজার।