কভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে আগামীকাল সোমবার থেকে সারা দেশে কঠোর লকডাউন শুরু হবে। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার। এছাড়া জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রধান তথ্য কর্মকর্তার পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লকডাউন চলাকালে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসাসংক্রান্ত কাজে ব্যবহূত যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। লকডাউন চলাকালে জরুরি কারণ ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হতে পারবে না। তবে গণমাধ্যম এ বিধিনিষেধের আওতামুক্ত থাকবে। এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত আদেশ আজ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউনে সারা দেশের মানুষ যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তা নিশ্চিতে কাজ করবে পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। প্রয়োজনে মোতায়েন করা হবে সেনাবাহিনী। এক সপ্তাহ পর পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, লকডাউন চলাকালে সব অফিস-আদালত বন্ধ থাকলেও ৩০ জুন বাজেট পাস উপলক্ষে এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম স্বল্প পরিসরে চালু থাকবে।
দূরপাল্লার যান বন্ধ, ভেঙে ভেঙে যাচ্ছে যাত্রীরা:
‘কঠোর লকডাউন’র ঘোষণা করায় রাজধানী ছাড়ছেন মানুষ। গতকাল শনিবার সকাল থেকেই ঢাকার প্রবেশমুখে মানুষের ঢল নামে।
এদিকে, বাস বন্ধ থাকায় কয়েক ধাপে ভেঙে ভেঙে কয়েকগুণ ভাড়া বেশি দিয়ে গন্তব্যে ছুটছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিটি গাড়িকেই পুলিশের তল্লাশি চৌকি পার হতে হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো গাড়িকেই ঢাকায় ঢুকতে বা বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতেও ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না মানুষের ঢলকে।
সকালে ঢাকায় প্রবেশ ও বাহিরের অন্যতম সড়ক গাবতলী এলাকা, ঢাকা-মাওয়া রোড, ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড। সবকিছু উপেক্ষা করেই ছুটছেন নারী-পুরুষেরা। লকডাউন শুরু আগেই রাজধানী ছাড়ছেন তারা।
এমন পরিস্থিতিতে যানবাহন না পেয়ে অনেকেই আবার কাভার্ডভ্যান, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন বিকল্প বাহনে অনেকগুণ বেশি ভাড়া গুণে যাচ্ছে গন্তব্যে।
শিবচরের বাংলাবাজার ফেরি ঘাটে রয়েছে উপচে পড়া ভিড়। তবে শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে ঢাকাগামী যাত্রীদের ভিড় খুব বেশি নেই। গত তিন দিনের তুলনায় শনিবার ঢাকাগামী যাত্রীদের ভিড় কমেছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-রুটে শনিবার সকাল থেকে ১৪টি ফেরি চলছে। শিমুলিয়া থেকে অসংখ্য যাত্রী বাংলাবাজার ঘাটে এসে নামছে। যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় ফেরিতে যানবাহনের সংখ্যা কম রয়েছে। এদিকে ঢাকাগামী যাত্রীদের ভিড় কিছুটা কমেছে বাংলাবাজার ঘাটে।
বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ফেরি ঘাটের সহ-ব্যবস্থাপক ভজন সাহা জানান, শনিবার ঘরমুখো মানুষের চাপ বেশি। ভোর থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষজন বাড়ি ফিরছেন। শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রী চাপ বেশি। তবে ঢাকাগামী যাত্রীদের চাপ অন্য দিনের চেয়ে কম রয়েছে। ঘাটে আটকে থাকা পণ্যবাহী পরিবহনও পারাপার করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামে লকডাউন না মানলে জেলও হতে পারে:
চট্টগ্রামে লকডাউন বাস্তবায়নে বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের এবার মোটা অঙ্কের জরিমানার পাশাপাশি কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। গতকাল শনিবার (২৬ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘সারাদেশে রমজানের ঈদের পর থেকে সংক্রমণের হার আবার বাড়ছিল। গত ১৪ দিনে দেশে তা বেড়ে ১৩ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারাদেশে ২৮ তারিখ থেকে কঠোর লকডাউন। চট্টগ্রামেও এবার লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে যেতে পারবে না। আমরা সেটি কড়াকড়িভাবে দেখব। এছাড়া রাজনৈতিক ও সামাজিকসহ যেকোনো সভা-সমাবেশ ও জনসমাগম বন্ধ থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, বিধিনিষেধ অমান্য করলে জরিমানার পাশাপাশি জেল দেয়ারও বিধান রয়েছে। আমরা মানুষকে জেল দিতে চাচ্ছি না, সচেতন করতে চাচ্ছি। এবার কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা বড় অঙ্কের জরিমানার পাশাপাশি কারাদণ্ডাদেশও প্রদান করব।’ জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে করোনার যে ভ্যারিয়েন্ট দেখা দিয়েছে তা অত্যন্ত সংক্রামক। এটি দ্রুত শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে নিয়ে যেতে থাকে। চট্টগ্রামে সব ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিউ) বেড এখন পূর্ণ। এছাড়া সাধারণ বেড ৮০ শতাংশ পরিপূর্ণ হয়েছে। পরিস্থিতি আরও অবনতি হলে আমাদের পক্ষে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা কঠিন হবে। সুতরাং আমরা সবাইকে আহ্বান করছি, আপনারা মাস্ক পরিধান করুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।’
লকডাউনে চট্টগ্রামের মাঠে থাকবে জেলা প্রশাসনের ১২টি টিম। এছাড়া প্রতিটি উপজলায় নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তিনটি টিম কাজ করবে।
লকডাউন বাস্তবায়নে নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘লকডাউন বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় মাত্র ১২টি টিম কাজ করবে। তাদের পক্ষে এ পুরো শহরে বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। তাই আমি নগরবাসীকে অনুরোধ করছি, আপনারা সবাই সচেতন হবেন।’ চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। আপাতত জেলা প্রশাসন, পুলিশ, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবকরা মাঠে থাকবেন।’ এছাড়া লকডাউনে যারা কর্মহীন হবে তাদের আগের মতো সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণের আওতায় আনা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।