সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ০২:৩৬ অপরাহ্ন

সড়ক-মহাসড়কের নকশা প্রণয়নের সময় বেশকিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৭ জুন, ২০২১

মহাসড়ক নির্মাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ নকশা প্রণয়ন। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই সড়কের নকশা প্রণয়নের ক্ষেত্রে আদর্শ মানদ- মেনে চলা হয়। বাংলাদেশে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরও ‘জিওমেট্রিক ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ডস’ শিরোনামে নিজস্ব মানদ- তৈরি করেছে। উন্নত দেশগুলোর নকশায় অনুসৃত বিষয়ের প্রায় সবই এ মানদ-ে রাখা হয়েছে। তবে এ মানদ-ের অস্তিত্ব শুধু কাগজে-কলমেই। অভিযোগ রয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সড়কের নকশা প্রণয়ন করতে গিয়ে এ মানদ- মানছে না সওজ নিজেই।
সড়ক-মহাসড়কের নকশা প্রণয়নের সময় বেশকিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে সড়কের গতিপথ, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ট্রাফিক, যানবাহনের গতি, নিরাপত্তা ইত্যাদি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সড়কের গতিপথ। সওজের মানদ- অনুযায়ী, নতুন সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে সেটিকে যতটা সম্ভব সোজা রাখতে হবে। পুরনো সড়ক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে এর তেমন কোনো প্রতিফলন দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোয় চোখে পড়ে না। দেশের বেশির ভাগ মহাসড়কের গতিপথ আঁকাবাঁকা। থেকে গিয়েছে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। এসবের জন্য দায়ী করা হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ নকশাকে। পাশাপাশি রয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায় সড়কের গতিপথ তৈরির অভিযোগও।
সড়কের নকশা করতে হয় পথচারী, অযান্ত্রিক গাড়িসহ সবার জন্য। এক্ষেত্রে দুর্ঘটনার সর্বনি¤œ মাত্রায় সীমিত রাখার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হয়। চালক বা পথচারীসহ সড়কে সবাই যাতে দূর থেকেই সব যানবাহন চলাচল দেখতে পায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হয়। চৌরাস্তার নকশা এমনভাবে করতে হয়, যাতে গাড়ি স্বাভাবিক গতিতেই তা পার হতে পারে। সওজের নকশার মানদ-েও এসব বিষয় রাখা হয়েছে। যদিও দেশের সড়ক-মহাসড়কে এর তেমন কোনো প্রতিফলন নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, মহাসড়ক নির্মাণের আগে পরিকল্পনা করা হয় সেই মহাসড়কটিতে ভবিষ্যতের একটা নির্দিষ্ট সময়ে কী পরিমাণ গাড়ি চলাচল করবে। এটার ওপর ভিত্তি করেই মহাসড়কের ধাপ থেকে শুরু করে যাবতীয় নকশা তৈরি হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সড়কের নকশা তৈরির ক্ষেত্রে এ বিষয়টিকেই সবচেয়ে বেশি অবহেলা করা হচ্ছে। আধুনিক বিশ্বে কাজটি সহজ করে দিয়েছে সফটওয়্যারভিত্তিক বিভিন্ন ‘টুল’। এসব টুল ব্যবহার করে বিদ্যমান ও ভবিষ্যৎ ট্রাফিক ডাটা, ট্রিপের ধরন, আবহাওয়াসহ আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে সবচেয়ে উপযোগী নকশা বেছে নেন প্রকৌশলীরা। তবে বাংলাদেশে বেশির ভাগ সড়কের নকশা তৈরির কাজে ব্যবহার হচ্ছে ‘ম্যানুয়াল’ পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা তথ্য। দুর্বল নকশার কারণে আমাদের সড়কগুলোও দুর্বল হচ্ছে। সা¤প্রতিক সময়ে চার লেনের মহাসড়কের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। তবে এসব মহাসড়কের নকশায়ও রয়ে গেছে বড় ধরনের ত্রুটি। চার লেন মহাসড়কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ মিডিয়ান। নকশায় মিডিয়ানের প্রশস্ততা বা ইউটার্ন নির্ধারণ করতে হয় ট্রাফিকের ধরনের ওপর নির্ভর করে। এজন্য অঞ্চল বা দেশভেদে এগুলোর ধরনও ভিন্ন হয়। তবে সবখানেই গুরুত্ব পায় সর্বোচ্চ সড়ক নিরাপত্তা।
কিন্তু বাংলাদেশের চার লেন সড়কের মিডিয়ানগুলোর নকশা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, সদ্য চালুকৃত ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের মিডিয়ানের নকশা ত্রুটিপূর্ণ। অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিডিয়ান কেটে ইচ্ছামতো বানানো হয়েছে ইউটার্ন, যেগুলোয় প্রায়ই প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটছে। সওজের জিওমেট্রিক ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ডসে বাস-বে ও বাসস্ট্যান্ড নিয়েও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সঠিকভাবে জরিপ ও গবেষণা করে তারপর বাস-বে ও বাসস্ট্যান্ডের স্থান নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের মহাসড়কগুলোর নকশায় বিষয়টি পুরোপুরি উপেক্ষিত থেকে গিয়েছে। ফলে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে বাসস্ট্যান্ড। এ কারণে মহাসড়কে তৈরি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা, বাড়ছে যানজট।
বাংলাদেশের মহাসড়কগুলো বিশৃঙ্খল ও যানজটপ্রবণ হওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ফিডার রোড। কিন্তু জাতীয় মহাসড়কগুলোয় ফিডার সড়কগুলোর সংযোগস্থল কেমন হবে, সেটিই এখনো ঠিক করতে পারেনি দেশের সড়ক নির্মাতা সংস্থাগুলো। এছাড়া দেশের মহাসড়কের মূল কাঠামোর নকশাও সঠিকভাবে হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। একটি জাতীয় বা আঞ্চলিক মহাসড়ক গড়ে তোলা হয় নিচ থেকে কয়েকটি ধাপে। এসব ধাপ বা স্তরের মধ্যে রয়েছে ইমপ্রুভড সাবগ্রেড, বেজ কোর্স, এগ্রিগেট বেজ কোর্স, বাইন্ডার্স কোর্স, ওয়্যারিং কোর্স ইত্যাদি। এসব ধাপের প্রতিটিরই আদর্শ পুরুত্ব নির্ধারণ করা রয়েছে। এক্ষেত্রে চার লেনের মহাসড়কে ৩০০ মিলিমিটার পুরুত্বের ইমপ্রুভড সাবগ্রেড, ৩০০ মিলিমিটার পুরুত্বের বেজ কোর্স, ৪০০ মিলিমিটার পুরুত্বের এগ্রিগেট বেজ কোর্স, ১০০ মিলিমিটারের বাইন্ডার্স কোর্স ও ৬০ মিলিমিটারের ওয়্যারিং কোর্স নির্মাণের নিয়ম রয়েছে। এটি বিশ্বজুড়েই স্বীকৃত আদর্শ মান। তবে বাংলাদেশে মহাসড়কের নকশা প্রণয়নের ক্ষেত্রে এ আদর্শ মান অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত থেকে যায়। একই সঙ্গে ঠিকাদাররাও অনেক ক্ষেত্রে এ মান অনুসরণ করে সড়ক নির্মাণ করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। মহাসড়ক নির্মাণে নকশাগত এসব ত্রুটির বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে সওজ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরুর পর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। এটা সব ক্ষেত্রে হয় না। কিছু ক্ষেত্রে হয়। সমস্যা দেখা দিলে পরে তা আমরা সংশোধন করে নিই এবং ভবিষ্যতে যেন একই সমস্যা আর না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। এর পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে সড়ক-মহাসড়কের নকশা প্রণয়নের বিষয়টিতে আমরা বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছি।
নি¤œমানের নির্মাণকাজে ফুলে ওঠে, দেবে যায় মহাসড়ক: বড় হচ্ছে অর্থনীতি। বাড়ছে উন্নত মহাসড়কের প্রয়োজনীয়তা। উন্নয়নযাত্রার তাগিদে সড়ক অবকাঠামো খাতে বিপুল বিনিয়োগ করছে সরকার। ব্যয়বহুল সড়ক বানালেও সেগুলো টিকছে না বেশিদিন। এজন্য আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কারণের পাশাপাশি দায়ী করা হচ্ছে নির্মাণশৈলীকে। কাজ শেষ হওয়ার আগেই ফুলে-ফেঁপে এবড়ো-খেবড়ো হয়ে যায় যশোর-খুলনা মহাসড়ক। কারণ তদন্তে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটির বেজকোর্স নির্মাণে প্রয়োজনীয় মানদ- অনুসরণ করা হয়নি। বর্তমানে নির্মাণাধীন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও এখন একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। কয়েক বছর আগে চালু হওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও অনেক স্থানে দেখা যায় রাস্তা হয় ফুলে উঠেছে, নয়তো দেবে গিয়েছে। এসব মহাসড়কের প্রতিটিতেই নি¤œমানের নির্মাণকাজের অভিযোগ রয়েছে। প্রশ্ন রয়েছে নির্মাণে ব্যবহূত উপকরণের মান নিয়েও।
দেশের মহাসড়কগুলো এখন ‘ফুলে ওঠা’ বা ‘দেবে যাওয়ার’ বিষয়টি এখন সাধারণ এক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেলা সড়ক থেকে জাতীয় সড়কÍসবখানেই একই সমস্যা। প্রকৌশলীদের ভাষায় এ সমস্যাকে বলা হয় ‘রাটিং’। সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীদের দাবি, সড়ক-মহাসড়কে রাটিং দেখা দিচ্ছে ‘ওভারলোডিংয়ের’ কারণে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা ত্রুটি দেখছেন সড়কের নির্মাণ পদ্ধতিতেই। নির্মাণযন্ত্রের দুর্বলতা ও নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কারণেই এ সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে ব্যবহার হয়ে আসছে ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন। এই গ্রেডের বিটুমিন তুলনামূলক নরম ও পাতলা। টেকে কম। রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হয় দ্রুত। তার পরও বছরের পর বছর ধরে এ বিটুমিনই ব্যবহার করে আসছে দেশের সড়ক নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষগুলো। এখন তুলনামূলক শক্ত ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুরু হয়েছে। এছাড়া পলিমার মডিফায়েড বিটুমিন (পিএমবি) ব্যবহারেরও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সড়ক-মহাসড়কে রাটিং প্রতিরোধে বিটুমিনের মান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে জানালেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আগে আমাদের দেশে পাঁচ টনের ট্রাকই বেশি চলত। যানবাহনের সংখ্যা ও সেগুলোয় ভার বহন দুই-ই কম ছিল। এ কারণে ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করলেও সড়কগুলো টিকে যেত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শুধু ট্রাকের সংখ্যাই বাড়েনি, ওভারলোডিংও বেড়েছে ভয়ংকরভাবে। আমাদের রাস্তায় গাড়ি বেড়েছে, গাড়ির ভার বেড়েছে, যানজট বেড়েছে, কিন্তু এখনো আমরা সেই মান্ধাতা আমলের ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার থেকে বের হতে পারিনি। এখনকার গাড়ির ভার আর নি¤œমানের বিটুমিন বইতে পারছে না। তবে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় শুধু ভালোমানের বিটুমিন ব্যবহার করলেই সড়ক টেকসই হবে না বলে মনে করছেন তিনি। তার ভাষ্যমতে, বাংলাদেশে বর্ষাকালে বৃষ্টি হয় বেশি, গরমে আবার কড়া রোদ পড়ে। বৃষ্টি ও রোদÍদুটিই বিটুমিনের জন্য খারাপ। দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনায় সড়কে পানি জমেও বিটুমিন নষ্ট হয়। যানজটে আটকে থাকা গাড়ির চাপে বিটুমিন নষ্ট হয়। যত ভালো মানের বিটুমিনই ব্যবহার করা হোক কেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও সড়ক ব্যবহারপ্রবণতায় তা টেকসই হবে না। এক্ষেত্রে একমাত্র বিকল্প হতে পারে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করা।
শুধু বিটুমিন নয়, বাংলাদেশে মহাসড়ক নির্মাণে মাটি-পাথর-বালি-সিমেন্টসহ সবখানেই ছাড় দেয়ার প্রবণতা রয়েছে বলে স্বীকার করলেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। রাটিংয়ের জন্য এসব নি¤œমানের নির্মাণ উপকরণকেই দায়ী করেছেন তিনি। সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মাঠপর্যায়ে সেটি নির্মাণ করে ঠিকাদার। এ ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে প্রায়ই নি¤œমানের নির্মাণকাজের অভিযোগ উঠছে। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে তাদের সক্ষমতা নিয়েও। প্রকৌশলীরা বলছেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলো মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে যেসব যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, সেগুলো বাংলাদেশেও ব্যবহার করা হয়। নির্মাণযন্ত্র এক হলেও পার্থক্য সেগুলোর মানে। দেশী ঠিকাদাররা যেসব যন্ত্র ব্যবহার করেন, তার বেশির ভাগই পুরনো ও রিকন্ডিশন্ড। বিদেশী ঠিকাদাররা বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে যেসব নির্মাণযন্ত্র নিয়ে আসেন, কাজ শেষের পর সেগুলো দেশের ঠিকাদারদের কাছে কম দামে বিক্রি করে দেন। আবার বিদেশ থেকেও সরাসরি রিকন্ডিশন্ড যন্ত্রও সংগ্রহ করতে দেখা যায় ঠিকাদারদের। দীর্ঘদিন ব্যবহারের কারণে এসব যন্ত্রের কর্মক্ষমতা কমে যায়। এসব রিকন্ডিশন্ড নির্মাণযন্ত্র সড়কের মানে বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সওজের একজন প্রকৌশলী বলেন, সড়ক নির্মাণকাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র হলো পেভার। এর মাধ্যমে সড়কের পিচ ঢালাই হয়। যন্ত্রটির সাহায্যে রাস্তার ওপর প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট মাপে বিটুমিন-পাথরের মিশ্রণ ফেলতে হয়। এ যন্ত্রের মান খারাপ হলে তা দিয়ে রাস্তার পিচ সবখানে সমান করা নাও যেতে পারে। ফলে যখন গাড়ি চলাচল শুরু হবে, তখন দেখা যাবে পিচ দেবে যাচ্ছে বা ফুলে উঠছে। একইভাবে রোলার, মিক্সচার, ভাইব্রেটরসহ ব্যবহূত বিভিন্ন পুরনো নির্মাণযন্ত্রের কারণেও সড়কের নির্মাণকাজ নি¤œমানের হয়।
আবার নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক নির্মাণযন্ত্রও নেই অনেক ঠিকাদারের। বর্তমানে সওজের সবচেয়ে বেশি টাকার নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্স লিমিটেড। ঢাকাসহ সারা দেশে সড়ক অবকাঠামো নির্মাণে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি কাজ বাস্তবায়ন করছে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বহরে থাকা যেসব নির্মাণযন্ত্রের তালিকা দেয়া হয়েছে, তা দিয়ে একসঙ্গে সর্বোচ্চ দুটি প্রকল্প কিংবা প্যাকেজের কাজ করা যাবে। অথচ সওজের হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির শতাধিক প্যাকেজে কাজ চলমান থাকার কথা। স্বল্পসংখ্যক নির্মাণযন্ত্র দিয়ে কীভাবে এত প্যাকেজের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, জানতে চাইলে রানা বিল্ডার্সের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পরে বিষয়টি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার কামাল ফিরোজ বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান দরপত্র ব্যবস্থায় গুটিকয়েক ঠিকাদার বেশির ভাগ কাজ পেয়ে যান। যারা বেশি কাজ পান, তারা নিজেরা সেগুলো বাস্তবায়ন করেন না। অন্য ঠিকাদারদের কাছে ৩-৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন নিয়ে কাজ বিক্রি করে দেন। এখানে কাজের দায়িত্ব পান একজন, বাস্তবায়ন করেন আরেকজন। কখনো কখনো দুই-চার দফা হাতবদল হয়ে অপেক্ষাকৃত নতুন ঠিকাদারের কাছে কাজ চলে যায়, যাদের সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা দুই-ই কম। আবার কমিশন দিতে দিতে তাদের হাতে চুক্তিমূল্যের টাকাও কমে যায়। ফলে সেই ঠিকাদারের পক্ষে যথাযথ মান বজায় রেখে কাজ করা কঠিন হয়ে যায়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সওজের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা উন্নতমানের বিটুমিন ব্যবহার শুরু করেছি। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে উন্নত বিটুমিন দিয়ে। এর বাইরে বিভিন্ন স্থানে আমরা কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণও শুরু করেছি। পাথরসহ বিভিন্ন ধরনের নির্মাণসামগ্রীর মানের দিকেও আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। টেকসই মহাসড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পরিকল্পনা থেকে শুরু করে নকশা ও নির্মাণশৈলীতেও আমরা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য যেসব উদ্যোগ নেয়া দরকার, তার সবই গ্রহণ করছি।- উৎস: বণিকবার্তা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com