গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত টানা চারদিন দেশের সব ব্যাংক বন্ধ থাকছে। একই সময়ে বন্ধ থাকছে পুঁজিবাজারও। সরকার ঘোষিত সাতদিনের কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে ব্যাংক খোলা থাকবে আগামী সোম, মঙ্গল ও বুধবার। বিধিনিষেধ চলাকালে ব্যাংকে লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। এ তিনদিন পুঁজিবাজারে লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত। ব্যাংক-পুঁজিবাজারের মতোই সপ্তাহের চারদিন খোলা থাকবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই)। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিধিনিষেধ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে পৃথক নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ১ জুলাই ব্যাংক হলিডে হওয়ায় ব্যাংক বন্ধ থাকবে। ২ ও ৩ জুলাই শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির পাশাপাশি ৪ জুলাই রোববারও ব্যাংক বন্ধ থাকবে। কঠোর বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়লে শুক্র ও শনিবারের পাশাপাশি প্রতি রোববার দেশের সব ব্যাংক বন্ধ থাকবে বলে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকের মতোই প্রতি রোববার দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে। লেনদেন-পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করতে বেলা ৩টা পর্যন্ত ব্যাংকগুলো খোলা রাখা যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে ব্যাংকের প্রিন্সিপাল বা প্রধান শাখা এবং সব বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা (এডি শাখা) সীমিত সংখ্যক অত্যাবশ্যকীয় লোকবলের মাধ্যমে খোলা থাকবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর প্রতিটি জেলা সদরে ও উপজেলায় একটি করে শাখা খোলা রাখতে হবে। বেসরকারিসহ অন্যান্য সব ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রতিটি জেলা সদরে একটি শাখা খোলা রাখতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জেলা সদরের বাইরে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার বিবেচনায় অনধিক দুটি শাখা খোলা রাখা যাবে বলে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দর এলাকায় (পোর্ট ও কাস্টমস এলাকা) অবস্থিত ব্যাংকের শাখা, উপশাখা বা বুথগুলো সপ্তাহের সাতদিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে এটিএম বুথগুলো। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অত্যাবশ্যকীয় বিভাগগুলো যথাসম্ভব সীমিত লোকবলের মাধ্যমে খোলা রাখতে বলা হয়েছে। কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে গ্রাহকদের হিসাবে নগদ বা চেকের মাধ্যমে অর্থ জমা ও উত্তোলন, ডিমান্ড ড্রাফট বা পে-অর্ডার ইস্যু ও জমা গ্রহণ, বৈদেশিক রেমিট্যান্সের অর্থ পরিশোধ, সরকারের বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের আওতায় প্রদত্ত ভাতা বা অনুদান বিতরণ, একই ব্যাংকের খোলা রাখা বিভিন্ন শাখা ও একই শাখার বিভিন্ন হিসাবের মধ্যে অর্থ স্থানান্তর, ট্রেজারি চালান গ্রহণ, অনলাইন সুবিধাসংবলিত ব্যাংকের সব গ্রাহকের ও ওই সুবিধাবহির্ভূত ব্যাংকের খোলা রাখা শাখার গ্রাহকদের বাংলাদেশ ব্যাংকের চালু রাখা বিভিন্ন পেমেন্ট সিস্টেমস বা ক্লিয়ারিং ব্যবস্থার আওতাধীন অন্যান্য লেনদেন সুবিধা প্রদান এবং জরুরি বৈদেশিক লেনদেনসংক্রান্ত কার্যাবলি সম্পাদন করা যাবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিধিনিষেধ চলাকালে ব্যাংকের যেসব শাখা বন্ধ থাকবে সেই সব শাখার গ্রাহক সেবা কার্যক্রম খোলা রাখা শাখার মাধ্যমে সম্পাদনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বন্ধ শাখার গ্রাহকদের গ্রাহক সেবা প্রাপ্তি বিষয়ে অবহিত করতে ওই শাখার দৃশ্যমান স্থানে তা বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রদর্শন নিশ্চিত করতে হবে। সব খোলা রাখা শাখার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনপূর্বক সীমিত সংখ্যক লোকবলের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে বিধিনিষেধ চলাকালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ অফিসে আনা-নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলাচলের সময় নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের দেয়া পরিচয়পত্র বহন করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের মতোই ১ থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত টানা চারদিন বন্ধ থাকছে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই)। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ঢাকায় একটি ও ঢাকার বাইরে প্রতি জেলায় একটি শাখা খোলা রাখতে পারবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জারীকৃত এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ১ থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে। বিধিনিষেধ চলাকালে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটিসহ প্রতি রোববার বন্ধ থাকবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। ছুিটর দিন ও রোববার ব্যতীত সপ্তাহের অন্যান্য দিন গ্রাহকের হিসাবে মেয়াদপূর্তিতে স্থায়ী আমানত নগদায়ন, ঋণের কিস্তি জমা গ্রহণসহ জরুরি কাজ সম্পাদন করা যাবে। তবে অফিস খোলা রাখার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সীমিত সংখ্যক লোকবলের মাধ্যমে সেবা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলাচলের সময় নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের দেয়া পরিচয়পত্র বহন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও।