চাঁদপুরে পতিত জমিতে মাল্টা চাষে ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন বুনছেন কৃষক মো. ইউছুফ পাঠান। কৃষি অধিদফতরের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায় পরীক্ষামূলকভাবে পতিত জায়গা বালি দিয়ে ভরাট করে এই বাগান তৈরি করেন তিনি।
তৃতীয় বছরে মাল্টার ব্যাপক ফলন হওয়ায় ভালো লাভের স্বপ্ন দেখছেন ইউছুফ। ইতিমধ্যে কৃষি অধিদফতর থেকে উদ্বুদ্ধকরণে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নতুন উদ্যোক্তাদের বাগানটি প্ররিদর্শনে আনা হচ্ছে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহ মাহমুদপুর ইউনিয়নের লোদের গাও গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ ইউসুফ পাঠান। দুই যুগ ধরে তার ৩৩ শতক জমি পতিত ছিল। ২০১৮ সালে কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে পতিত ডোবা বালি ও মাটি ফেলে সার ও কীটনাশক ও লেবারসহ প্রায় ১ লাখ খরচ করে জায়গা প্রস্তুত করেন তিনি।
পরে এনএটিপি-২ প্রকল্পের বারি মাল্টা-১ প্রদর্শনীর ১৩০ টি মাল্টা গাছ লাগিয়ে শুরু করেন মাল্টা চাষ। ২০১৯ সালে মাল্টার ফুল আসলেও ভালো ফলনের আশায় তা কেটে দেয়। ২০২০ সালে মাল্টার ফলন ভালো হয়। মাল্টা বিক্রি করে কিছুটা খরচ মেটায়। বর্তমানে বাগানের মাল্টার গাছগুলোতে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে মাল্টা।
তাই এবছর ভালো লাভের স্বপ্ন দেখছেন মাল্টা চাষি ইউসুফ পাঠান। আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে মাল্টা তোলা সম্ভব হবে আর তাই এখন মাল্টা বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত এই উদ্যোক্তা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের প্রতিটি গাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাল্টা ঝুলে আছে। দেখলেই প্রাণ জুড়িয়ে যাওয়ার মত দৃশ্য। তাই আশপাশের অনেকেই অবসর সময় কাটানোর জন্য বাগানে এসে সময় কাটাচ্ছেন।
এছাড়া আশপাশের অনেকেই ইতোমধ্যে নিজেদের পতিত জায়গা ভরাট করে এমন একটি বাগান তৈরি করার স্বপ্ন দেখছেন। প্রাকৃতিক মনোরম এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবং বাগান তৈরির আশা নিয়ে বাগানটিতে ভিড় জমাচ্ছেন আশপাশের মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা হাসান গাজী, আবুল বাশারসহ আরও অনেকে জানান, বাগানে এসে সময় কাটাতেই তাদের অনেক ভালো লাগে। আবুল বাসার বলেন, বাগানটি আমার এতই ভালো লাগে যে দিনে দু-একবার না আসলে মনে শান্তি পাই না, আমার নিজস্ব কোনো জায়গা নেই। থাকলে নিজেই এরকম একটা বাগান তৈরি করতাম।
চাষি ইউসুফ পাঠান জানান, যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে বড় কোনো ক্ষতির সম্মুখীন না হই, তাহলে খরচের দ্বিগুণ লাভ হবে। এছাড়াও চাষিদের মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন উপজেলা থেকে বাগানটি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করছে কৃষি অধিদফতর। বিভিন্ন উপজেলা থেকে নতুন উদ্যোক্তারা বাগানে এসে পর্যবেক্ষণ করে যায় এতে আমার খুবই আনন্দ লাগে।
জেলা কৃষি অধিদফতরের উপ-সহকারী অফিসার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, শুরু থেকেই সার্বিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। খরচের তুলনায় অধিক লাভবান হওয়ায় মাল্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও খুব দ্রুতই চাঁদপুরে বারি মাল্টা-১ চাষে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট এই কর্মকর্তা।
তিনি আরো বলেন, দ্রুতই চাঁদপুরে মাল্টা চাষের ব্যাপক সম্প্রসারণ হবে। কারণ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত নতুন আগ্রহীরা পর্যবেক্ষণ করে আমাদেরকে জানিয়েছেন, তারা এমন একটি বাগান করতে আগ্রহী। চাঁদপুর কৃষি অধিদফতর জেলার নতুন উদ্যোক্তাদের সার্বিক দিক নির্দেশনা ও সহযোগীতার জন্য প্রস্তুত আছে।