একশ ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে জামালপুর-শেরপুর বনগাঁও আঞ্চলিক মহাসড়ক পুন:নির্মান ও উন্নয়ন কাজে কোটি কোটি টাকার লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের কাজ করার পর তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের নজরে আসার পরথেকে এ আঞ্চলিক মহাড়কটির নির্মান কাজ তিন বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। এতে জন দূর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। তৎকালীন সড়ক ও জনপথের শেরপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী এবং মেসার্স এসইপিএল প্রা: লি:, ওটিবিএল ও মেসার্স তূর্ণা এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে যোগসাজশ করে কাজের চেয়ে আরো বেশী টাকা উত্তোলন করে চলে গেছে। ফলে বিপাকে পড়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বর্তমান কর্মকর্তারা। ১৯৯১-৯২ সালে আঞ্চলিক মহাসড় হিসেবে কুরিয়ান কোম্পানীর মাধ্যমে জামালপুর-শেরপুর বনগাঁও সড়কটির নির্মান কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছিলো। পরে দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় এ সড়কটির পূন:নির্মান কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে। ৩২.৪০ কি:মি:দীর্ঘ এ সড়কটির ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান কাজ শুরু যৌথভাবে করে মেসার্স এসইপিএল প্রা: লি:, ওটিবিএল ও মেসার্স তূর্ণা এন্টারপ্রাইজ নামের ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু শুরুথেকেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যোগসাজশ করে নি¤œমানের কাজ করতে থাকে। আর এটা প্রকাশ হয়ে পড়লেই বন্ধ হয়ে যায় সড়কটির উন্নয়ন কাজ। এতে দূর্ভোগ বেড়ে যায় মানুষের। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, পূর্বের সড়কটির দুই পাশ্বে ১মিটার করে ২ মিটার সম্প্রাসরণ কাজে দেড়ফুট বালি ও সাববেস ৮ইঞ্চি সাববেস, ৬ইঞ্চি সাববেস-২ ধরা থাকলেও তা করা হয়নি। অনেক নিম্ন মানের ইট বালি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। পুরনো সড়কের মেগাডম, কার্পেটিং ও বিটুমিনাস সম্পূর্ণ উঠিয়ে ফেলে সেখানে পাথর দিয়ে ৮ইঞ্চি (২০০ মিলি মিটার) ডব্লিওবিএম করে তার উপর আড়াই ইঞ্চি (৬০ মিলি মটিার) কার্পেটিং এবং ১ ইঞ্চি (২৫ মিলি মিটার) বিটুমিনাস দিয়ে ফিনিসিং দেয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বরং পূরনো সড়কের উপরের আড়াই ইঞ্চি (৬০ মিলি মিটার) কার্পেটিং এবং ১ ইঞ্চি (২৫ মিলি মিটার) বিটুমিনাস উঠিয়ে পুরনো পাথর আর কিছু নতুন পাথর দিয়ে সড়কটির প্রায় ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট হয়। আর বছর না ঘুরতেই নতুন নির্মিত সড়কটি অনেক স্থানেই খানখন্দক হওয়া শুরু করেছে। বিষয়টি প্রকাশ হওয়ায় জাতীয় সংসদের হুইপ মো: আতিউর রহমান আতিক সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে সড়কটি তদন্তের সুপারিশ করেন। গত বছর জুলাই মাসে সড়ক ও জনপথ বিভাগের একাধিক তদন্ত টিম এসে তদন্ত করে সড়কটির নির্মান কাজে অনিয়ম পান। ফলে তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহাম্মদকে শেরপুর থেকে বদলী করে ফেনি আর উপসহকারী প্রকৌশলী মাজাহারুল ইসলাম আজাদকে মেহেরপুর পাঠান। আর তিনি যাওয়ার আগে ৭০ ভাগ কাজ শেষ না করলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ৯০ কোটি টাকা বিল প্রদান করেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।এদিকে তদন্ত করে নিম্নমানের কাজ করায় ঠিকাদারকে দেয়া এ কাজের অর্ডার বাতিল করা হলেও এখন পর্যন্ত কালো তালিকাভূক্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অপরদিকে ওই সময়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহাম্মেদের বিরুদ্ধেও কোন বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাকে পুরস্কার হিসেবে শেরপুরের চেয়ে বড় জেলায় বদলি করা হয়েছে। প্রথমে তাকে ফেনিতে বদলি করলেও বর্তমানে ফরিদপুর আছেন বলে মুঠো ফোনে জানান তিনি। তাই শেরপুরের সচেতন মহল ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসহ নির্বাহী প্রকৌশলীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান। এ ব্যাপারে শেরপুর শহর আওয়ামীলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি মানিক দত্ত বলেন, এ সড়কে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। একেবারেই নিম্নমানের কাজ করা হয়েছে। এখানে ঠিকাদারকে হালকা শাস্তি প্রদান করা হলেও তাকে কালো তালিকাভূক্ত করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে হবে। তিনি আরো বলেন, এ কাজের অনিয়মের সাথে জড়িত কমকর্তাদের শাস্তি না দিয়ে বড় জেলায় বদলি করা হয়েছে। তাদেরকেও শাস্তি দিতে হবে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন জন উদ্যোগ শেরপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, দূর্নীুত কাকে বলে এ সড়কটি দেখলেই মনে হয়। কাজ চলমান থাকা অবস্থায়ই নির্মান করা সড়ক খানখন্দক হয়ে যাচ্ছে। এখানে ৪০ ভাগ কাজ না করেই ৯০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। যারা এ দূর্নীতির সাথে জড়িত ঐসব কর্মকর্তাদেরও কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এছাড়াও ভূক্তভোগী জনগন বলেন, এ সড়কটি নির্মান না করায় প্রায়ই দূর্ঘটনা ঘটছে। আমরা দ্রুত সড়কটি নির্মানের দাবী জানাই। নিম্নমানের কাজ ও বেশী বিল পরিশোধের কথা অশিকার করে শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভিাগ সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে ফরিদপুর জেলায় কর্মরত), আহসান উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন আমি মনে করি সঠিকভাবেই কাজ করেছি। এদিকে শেরপুরের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মো: শরিফুল ইসলাম জানান, আমরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ওয়ার্কঅর্ডার বাতিল করেছি। তার বিরুদ্ধে ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।