বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৭ অপরাহ্ন

অবিলম্বে টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রকাশ করতে হবে 

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৮ জুলাই, ২০২১

সরকারের প্রতি বিএনপি’র আহবান

করোনার টিকা সংগ্রহ নিয়ে সরকার জনগণের সাথে প্রতারণা করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে গতকাল রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। গতকাল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ এই সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।
তিনি বলেন, স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে যে, বর্তমান বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে। করোনা টিকা নিয়ে সরকার যে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে গোটা পরিস্থিতিকে লেজে গোবরে করে ফেলেছে। এখন পর্যন্ত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট, চীনের সিনোফার্ম ও কোভ্যাক্স প্ল্যাট ফার্ম থেকে মোট ১ কোটি ১৬ লক্ষ ৬২০ ডোজ টিকা সংগ্রহ করেছে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘আকুল আহবান’ বিজ্ঞাপনে দেড় কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহের কথা বলায় প্রমাণিত হয়েছে সরকার করোনার শুরুর প্রথম থেকেই জনগণের সাথে প্রতারণা করছে, টিকা মূল্য নিয়েও মিথ্যাচার করছে। অবিলম্বে টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে।
মির্জা আলমগীর বলেন, দেশের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হলে ২৬ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন। গড়ে প্রতি মাসে ১ কোটি টিকা দিলেও ২ বছর দুই মাস লাগবে। অথচ এখন পর্যন্ত টিকা প্রাপ্তির কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য সরকার দিতে পারছে না অথবা টিকা প্রাপ্তির উৎস্য সম্পর্কে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের লকডাউন লকডাউন খেলা আর মর্মান্তিক তামাশা। প্রথমে লকডাউন, তারপরে কঠোর লকডাউন, পরে শিথিল লকডাউন ঈদের ১ দিন পর থেকে আরো কঠোর লকডাউন, শিল্প কলকারখানা বন্ধ ঘোষণা থেকে মনে হয়, সরকারি সিদ্ধান্তগুলো সবই পাবনার হেমায়েতপুর থেকে আসছে। এইসব পরিকল্পিত পদক্ষেপের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের দিন আনে দিন খায়, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত মানুষ, হকার, ছোট ব্যবসায়ী, রিকশা শ্রমিক, ভ্যান শ্রমিক, মাঝি, বাইকের চালকেরা, পরিবহন শ্রমিকেরা। বিএনপির বারবার এসব মানুষের জন্য এককালীন ১৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদানের আহবান জানিয়েছিলো কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। বিএনপি আবারো দাবি জানাচ্ছে, এসব মানুষদের জন্য ১৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হোক, ছোট ব্যবসায়ীদের পুঁজির ব্যবস্থা করা এবং দিন আনে দিন খায় মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হোক।
দেশের জেলা হাসপাতালগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় করোনা বেড, অক্সিজেন, আইসিইউ বেড বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আক্রান্ত রোগী ও স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। গাছের তলায়, অ্যাম্বুলেন্সে অথবা ভ্যানের ওপর রোগীর চিকিৎসার দৃশ্য কি মধ্যআয়ের বাংলাদেশ বা উন্নয়নের মডেল বাংলাদেশের ছবি দেখায়। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য আবারো স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অপসারণ করা উচিত বলে স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে বলে জানান মহাসচিব।
মির্জা আলমগীর বলেন, এই মামলার এখন পর্যন্ত বিচার কার্য়ক্রম শুরু হয়নি। শুধুমাত্র চার্জশিট দেয়া হয়েছে কয়েক বছর পূর্বে। ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর দুইজন অভিযুক্ত ব্যক্তির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রাপ্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি আদালত উক্ত আবেদন খারিজ করে সংশ্লিষ্ট রায় দেন। প্রায় তিন বছর পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে হাইকোর্ট গত ১৩ই জুলাই। মামলাটি নি¤œ আদালতে বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় তিন বছর পর প্রকাশিত রায়ের উচ্চ আদালতের এই ধরনের মন্তব্য উদ্দেশ্য বোধগম্য নয় এবং এটা গ্রহণযোগ্যও নয়। এই ধরনের মন্তব্য নি¤œ আদালতকে প্রবাহিত করবে বলে প্রতীয়মান হয়। স্থায়ী কমিটির সভায় এই ধরনের মন্তব্য যে কোনো নাগরিকের ন্যায় বিচার প্রাপ্তির পরিপন্থি।
জমিয়তের জোট ছাড়া নিয়ে যা বললেন ফখরুল:জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (একাংশ) গত ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়। গতকাল রোববার (১৮ জুলাই) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জমিয়তের জোট ছাড়ার বিষয়টি ব্যাথ্যা দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, রাজনীতি হলো ভাঙাগড়ার খেলা। ওনারা রাজনৈতিক চাপে, মামলা মোকদ্দমার প্রচ- রকমের চাপ। চাকরি চলে যাবে, বেশির ভাগ মাদ্রাসায় চাকরি করেন। তারা টিকে থাকতে পারছেন না, যেতেই পারেন। রাজনীতিতে টিকতে পারছেন না। যাওয়ার সময় সত্য কথাগুলো বলে যাওয়াই ভালো। অযথা অন্যকে দোষারোপ করে একটা নজির সৃষ্টি করতে চান, এটা ঠিক না। আমাদের সঙ্গে তাদের কখনো কোনো সমস্যা হয়নি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জোট গঠনের সময় ২০ দলীয় জোটের যে ঘোষণাপত্র ছিল, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে একটা আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য একটা জোট। সেভাবে আন্দোলন করেই নির্বাচনে যাওয়ার একটা ব্যাপার ছিল। সেখানে শরিক যেকোনো দল তার নিজস্ব রাজনীতি করবে, নিজস্ব কথা বলবে। এখানে একটা দলের রাজনীতি আর একটা দলের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার কোনো ব্যাপার নেই। প্রশ্নই উঠতে পারে না। সেখানে তারা (জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক) যে কথাগুলো বলেছেন, এ কথাগুলো একেবারেই সত্য নয়।
তিনি বলেন, জমিয়তের যে আমির ছিলেন নূর হোসাইন কাসেমী সাহেব, অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় মানুষ। ব্যক্তিগতভাবে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম। একজন সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক মানুষ বলতে যা বোঝায় তিনি সেরকমই ছিলেন। তিনি বড় আলেম ও ইসলামি চিন্তাবিদও ছিলেন। তিনি মারা যাওয়াতেই সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি যখন মারা যান আমি তখন অসুস্থ ছিলাম। তার পরপরই আমি চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছিলাম। তার মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি শোকবাণী দিয়েছি। পরবর্তীকালে ২৬ মার্চ মোদীর সফরকে কেন্দ্র করে যতগুলো সমস্যা হয়েছে মামলা-হামলা-আক্রমণ; সব সময় আমি স্টেটমেন্ট দিয়েছি, সংবাদ সম্মেলনে আপনাদের সঙ্গে কথা বলেছি। কীভাবে তিনি বললেন, আলেম-ওলামাদের গ্রেফতারের বিষয়ে আমরা কিছু বলিনি। আমিই তো সবচেয়ে আগে কথা বলেছি। মানুষ আশা করে যে, আলেম-ওলামারা সত্য কথা বলবেন। কিন্তু এটা ওনারা কীভাবে বললেন? দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের প্রতি মানুষের সেই আস্থা থাকবে কিনা আমি জানি না। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা শরিয়া আইনে বিশ্বাস করি না এটাও বলেছেন, আমাদের সংগঠন পড়ে দেখবেন শরিয়া আইনের বিষয়টা নাই। ওনারা চান ওনারা করুক। শরিয়া আইনের বিষয়ে আমাদের পরিষ্কার করে বলা আছে, আমরা কখনো শরিয়া বিরোধী কোনো আইন পাস করবো না। আমরা যখন সরকারে ছিলাম সেটা করিনি। কিন্তু একথা বলা যে, আমরা শরিয়া আইনের বিরোধিতা করেছি, ইসলামি মূলবোধে বিশ্বাসী না, এসব কথাবার্তা বলা মানে হলো ব্যক্তিগত আক্রমণ করা। এটা আমি মনে করি ওনারা ভালো কাজ করেননি। এ সমস্ত ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে ওনারা দূরে সরে আসবেন। বিরোধী রাজনীতিতে ওনারা টিকতে পারছেন না, সেই কারণে ওনারা চলে যাচ্ছেন, সেটা বলে দিলেই তো হয় যে, সরকারের প্রচ- চাপে আমরা টিকতে পারছি না। মামলা-মোকদ্দমায় ভীষণভাবে ব্যতিব্যস্ত হয়ে গেছি। এটা না বলে কাউকে ব্যক্তিগত দোষারোপ করা সঠিক কাজ নয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ওনারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, অনেক দিন ধরে দেন-দরবার করছেন, শেষ পর্যন্ত এটা হয়েছে। যাই হোক এটা আমি বলতে চাই না। আমি বলছি তারা চাপে টিকতে পারছে না, সেজন্য ছেড়ে দিয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com