বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, এবারের কোরবানির ঈদ করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মুসলমানেরাও পালন করেছেন। আমরা খুব বেদনার সাথে লক্ষ্য করছি, দেশে করোনা পরিস্থিতির সূচনা থেকে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো স্বচ্ছতা নেই, কোনো ধরনের দায়বদ্ধতা নেই, কোনো সমন্বয় নেই এবং যেটুকু দক্ষতা আছে তাও ফুটিয়ে তোলার ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে না। বরং এই কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যেও লুটতরাজ, আত্মসাৎ, অব্যবস্থাপনার ফলে দেশে এক ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। এই ঈদকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামীর সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা ছিল একটু ভিন্নভাবে সমাজের সবাইকে নিয়ে এবার ঈদ উদযাপন করতে হবে। আল্লাহর তাওফিক অনুযায়ী আমরা পশু কোরবানি করব, সেই সাথে সমাজের সকল মানুষের পাশে জামায়াত থাকবে- এটাই আহবান ছিল। আলহামদুলিল্লাহ, সেই আলোকে সংগঠনের নিবেদিত ভাইয়েরা জনে জনে সমাজের দুঃখী মানুষের কাছে গিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের হাতে গোশতের প্যাকেট তুলে দিয়েছেন, তাদের খোঁজখবর নিয়েছেন। অসহায় মানুষদের খুঁজে খুঁজে জামায়াত এবারের ঈদে নানা সহযোগিতা পৌঁছিয়ে দিয়েছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় ঈদ পুনর্মিলনীতে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির মঞ্জুরুল ইসলাম ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে এডভোকেট ড. মোঃ হেলাল উদ্দিন, দেলাওয়ার হোসেন, মু. আবদুল জব্বার। এবারের কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যে কোরবানির ঈদ স্মৃতি বর্ণনা করেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের থানা জামায়াতের ইউনিট সভাপতি কামরান মনির ফুয়াদ, আমিরুল মোমেনীন তালুকদারসহ প্রমুখ। জামায়াতের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা বর্ণনায় অনুষ্ঠানে তখন এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, সমাজে যখন সংক্রমণ অতি উচ্চমাত্রা ধারণ করেছে, তখন সরকারের যেভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো দরকার ছিল, বিশেষত আমাদের ম্যানপাওয়ার ও লজিস্টিক সাপোর্ট সমন্বয় করার দরকার ছিল, সার্বক্ষণিক তদারকি করার প্রয়োজন ছিল। এই অবস্থা বাংলাদেশে প্রায় দেড় বছর হয়ে গেল, অথচ সরকার এখনো কোনো সঠিক দিক নির্দেশনা তৈরী করতে পারল না! লকডাউনসহ বিভিন্ন কারণে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আয় রোজগারহীন হয়ে পড়েছেন। এই কোরবানির ঈদে আমরা আমাদের ওইসব ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়াব- এটাই নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। আমাদের চাওয়া আশা এটাই ছিল যে এসব মানুষের মুখে যেন হাসি ফোটে, তাহলে এর বিনিময়ে জাহান্নামের আগুন আমাদের জন্য নিভে যাবে। ধন্যবাদ জানিয়ে আমিরে জামায়াত বলেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের সহযোগিতা পৌঁছানোর একাজে যেসব নেতাকর্মী সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিবেন, ইনশাআল্লাহ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশের এই দুরাবস্থা দেখে আমাদের চোখে পানি চলে আসে, মানুষ সামান্য অক্সিজেন পাচ্ছে না বা স্বাস্থ্য সেবা না পেয়েই আজ দুনিয়া থেকে চলে যাচ্ছেন। আমরা সরকারের কাছে আহবান জানাই, প্রয়োজনে আসুন সকলে মিলে সমন্বিতভাবে দেশের মানুষকে রক্ষা করি। দল মত পার্থক্য ভুলে গিয়ে মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। ইতোপূর্বে এমন আহবান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সরকারকে বার বার জানিয়েছে, কিন্তু তারা কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছেন না। শুধুমাত্র জামায়াত নয় এই পরিস্থিতিতে অনেকেই সরকারকে আহবান জানিয়েছেন অথচ সরকার আন্তরিকতার সাথে কারো কথাই গ্রহণ করছে না। জামায়াত ইতোমধ্যেই মানুষের কল্যাণে চিকিৎসা সেবাসহ নানাবিধ সাহায্য সহযোগিতা অব্যহত রেখেছে। বিপন্ন পরিবার মানুষের পাশে সর্বোচ্চ সহায়তা নিয়ে দাঁড়ানো জামায়াতের নির্দেশনা রয়েছে। মানুষের প্রয়োজনে চিকিৎসা সেবার জন্য টেলি প্রেসক্রিপশন দেয়া, খাবার পৌঁছিয়ে দেয়া, কারো অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে সিলিন্ডার পৌঁছিয়ে দেয়া, হাসপাতালে পৌঁছানোসহ নানা সেবা প্রদান করা। আল্লাহ বলেন, জলে স্থলে সকল বিপর্যয় মুসিবত আমাদের হাতের কামায়, তাই আসুন সেই আল্লাহর কাছে তওবা করি। আমাদের সকল ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা চাই।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, এই সময়ে আমাদের দু’টি কাজ করা অবধারিত। আমাদের সবার কাছে সময় অবারিত। আমরা সবাই নিজ বাসা-বাড়ি-ঘরে অবস্থান করছি। আত্মগঠনের জন্য এসময়ে পড়াশোনা করা খুব জরুরি। দ্বিতীয়ত, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক মজবুত করার প্রচেষ্টা অব্যহত রাখা জরুরি। ফরজ নফল নামাজের সাথে বেশি বেশি সম্পর্ক করা, কোরআন বুঝে পড়া, শেষ রাতে তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়ে যাওয়া, আমল আখলাক আরও সুন্দর করার প্রচেষ্টায় আত্মনিবেদিত হওয়া।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, এই করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা থেকে শিক্ষা নিয়ে অবশ্যই আমাদেরকে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হবে। আল্লাহ বলেছেন, আমার পক্ষ থেকে যে বিধান দেয়া হয়েছে তা যারা মানবে তাদের পৃথিবীতে যেকোনো পরিস্থিতির সময়ে ভয়েরও কোনো কারণ নেই, দুশ্চিন্তারও কোনো কারণ নেই। এজন্য অবশ্যই কোরআনকে পরিপূর্ণ ভাবে মানতে হবে, ইসলামের বিধানকে পরিপূর্ণভাবে মানতে পারলেই মানুষের কেবল প্রকৃত সফলতা আসবে। এজন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে স্বাস্থ্য সচেতনতা বজায় রেখে আমরা সকলে যেন ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে পারি। করোনা পরিস্থিতিতে যারা ইন্তেকাল করেছেন আমরা তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করি। যারা অসুস্থ আছেন আল্লাহর কাছে দোয়া করি তাদেরকে দ্রুত সুস্থ করে দেন। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে ফ্রি এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, ফ্রি ঔষধ পৌঁছানো, ফ্রি চিকিৎসার জন্য ২৪ ঘণ্টা ডাক্তারদের মাধ্যমে আমরা সেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছি। মৃতদেহ ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা ট্রেনিং কার্যক্রম পরিচালনা করার কাজ হাতে নিয়েছি। কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে স্বেচ্ছাসেবক টিম ও স্বাস্থ্যসেবা টিম কাজ পরিচালনা করে যাচ্ছে। আমরা করোনা ফান্ড গঠন করেছি, যেখান থেকে সকল মানুষের প্রয়োজনে আমরা সার্বক্ষনিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। সকল সামর্থবান ব্যক্তির প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আপনিও এগিয়ে আসুন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি