প্রধানমন্ত্রীর ঘোর আপত্তির মুখে বাদ গেল সোলার পার্ক থেকে তার নিজের নাম। গতকাল মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) একনেক বৈঠকে ‘শেখ হাসিনা সোলার পার্ক, জামালপুর’ শীর্ষক একটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার নাম বাদ দিতে হবে। কিন্তু নামটি রাখার জন্য সদস্যরা (সচিবরা) অনুরোধ করেন। তাতেও কাজ হয়নি। সদস্যরা বলেছেন, এটা আইকনিক প্রকল্প। ১০০ মেগাওয়াট সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশে এই প্রথম। তাই প্রধানমন্ত্রীর নামটা থাকা উচিত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি রাজি হননি।
একনেক সভা শেষে ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিফ্রিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রি ড. শামসুল আলম।
পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পের নতুন নাম দিয়েছেন সোলার পার্ক, মাদারগঞ্জ, জামালপুর দিতে বলেছেন। এছাড়া পর্যায়ক্রমে সারাদেশে জরাজীর্ণ ও বেইলি সেতু ভেঙে নতুন সেতু করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের স্মারক সংগ্রহ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দুধকুমার নদী ড্রেজিং ভালোভাবে করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ড্রেজিং করতে হবে।
এদিকে গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের ফাইভ-জি সেবা নেটওর্য়াকসহ ১০ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৬ হাজার ৬৬০ কোটি ২৯ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১৩৭ কোটি ৯ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ১ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা।
আট হাজার কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন দিলো একনেক: জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৭ হাজার ৯৮৫ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ের ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৬ হাজার ৬৬০ কোটি ৫১ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৩৭ কাোটি ৯ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণ এক হাজার ১৮৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। গতকাল মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গণভবন থেকে এতে সংযুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রকল্পগুলো হচ্ছে: সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৮৬১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে জরাজীর্ণ, অপ্রশস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিদ্যমান বেইলি ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ সেতু প্রতিস্থাপন (রংপুর জোন)’ প্রকল্প। একই মন্ত্রণালয়ের ‘বাগেরহাট-রামপাল-মোংলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ‘গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক স¤প্রসারণ এবং ৫-জি সেবা প্রদানে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন’ প্রকল্প। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা। তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয়ের ‘দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে মুক্তিযুদ্ধের অডিও ভিজুয়াল দলিল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৬২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট-ব্রিজিং (অতিরিক্ত অর্থায়ন, এলজিইডি অংশ)’ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। একই মন্ত্রণালয়ের ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯০ কোটি টাকা। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ‘পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প-৩য় পর্যায়’ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৯২৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত দুধকুমার নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন’ প্রকল্প। এর জন্য ব্যয় হয়েছে ৬৯২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘উপকূলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প। সংশোধনের মাধ্যমে ব্যয় বেড়ে হচ্ছে ১৫৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিদসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘শেখ হাসিনা সোলার পার্ক, জামালপুরে মাদারগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্প, যা বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।