কঠোর বিধি নিষেধ শেষ। গতকাল বুধবার ১১ আগস্ট থেকে চলছে সরকারি-বেসরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সকল অফিস-আদালত। এখন থেকেই সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধিই ভরসা। নতুন জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, সড়ক রেল ও নৌ-পথে আসন সংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন যানবাহন চলাচল করতে পারবে। শপিং মল, মার্কেট, দোকানপাট সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে খোলা রাখা যাবে। সকল প্রকার শিল্প-কলকারখানা চালু থাকবে। খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ অর্ধেক আসন খালি রেখে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। সকল ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এছাড়া গণপরিবহন, বিভিন্ন দফতর, মার্কেট ও বাজারসহ যেকোনও প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অবহেলা পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব বহন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, গণটিকা কার্যক্রমে প্রতি ইউনিয়নে ৬০০ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। যারা সবজি ব্যবসায়ী, রিকশাচালক; যাদের বাইরে আসতে হয়, বিভিন্ন কারণে যাদের অনেক মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয় তাদের বেছে নেওয়া হয়েছে। সেখানে বয়স্ক ও মুক্তিযোদ্ধাও আছেন। আমাদের জীবিকাও নিশ্চিত করতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে যাতে অগ্রাধিকারভিত্তিতে টিকা নিতে পারেন। অর্থনৈতিক কর্মকা- সচল রাখতে ও নি¤œ আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে বিধিনিষেধ শিথিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কঠোরভাবে যাতে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন হয় সেদিকে নজর থাকবে।
অবশেষে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধের মেয়াদ শেষ হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, বিনোদন কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে খুলে দেওয়া হয়েছে সবকিছু। গতকাল বুধবার ১১ আগস্ট থেকে চলছে সরকারি-বেসরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সকল অফিস-আদালত। সড়কে চলছে সকল প্রকার যানবাহন। নৌপথে চলছে লঞ্চ-স্টিমারসহ সকল প্রকার নৌযান। চলছে রেল-বিমানও। শিল্প-কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে আগেই। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দেওয়া বিধিনিষেধে সংক্রমণের হার না কমলেও সরকার সবকিছু খুলে দিয়েছে।
সরকার মনে করে করোনা সংক্রমণের হার কমানোর ক্ষেত্রে এখন মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করাই ভরসা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, সরকার এখন থেকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সর্বত্র টিকা দেওয়া কার্যক্রম জোরদার করছে। দেশের সর্বত্র এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে ৭ আগস্ট থেকে। পাশাপাশি সবাইকে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করার ক্ষেত্রে জোর দিতে চায় সরকার। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে কঠোর হওয়ার বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে।
সরকার মনে করে দীর্ঘকাল ধরে লকডাউন চলতে দেওয়া সম্ভব নয়। আবার করোনা সংক্রমণের হাত থেকে নাগরিকদেরও রক্ষা করতে হবে। তাই মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধিই এখন ভরসা।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, মানুষের জীবন ও জীবিকার স্বার্থে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় আবারও কঠোর লকডাউন দেওয়া হতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং জনস্বার্থে সব স্টেকহোল্ডার ও মালিক-শ্রমিকের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। সড়কে চলাচলের আগে গাড়ি জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার করতে হবে, যাত্রীদের শতভাগ মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে, যেকোনও মূল্যে সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে বলেও এসময় তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, অনন্তকাল লকডাউন চলতে পারে না। জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনা করে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। এ সময় সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এর কোনও বিকল্প নাই। এর ব্যত্যয় হতে দেওয়া যাবে না। দেশের সর্বত্র টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২৫ বছরের বেশি বয়স্কদের অবশ্যই টিকা নিতে হবে। ১৮ বছর বয়স্কদেরও টিকার আওতায় আনার কার্যক্রম চলছে।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধ করতে এবার গ্রামে গ্রামে কমিটি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ মাস্ক পরতে চান না। এটা নিশ্চিত করতে এলাকায় এলাকায় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে কমিটি করা হবে। তারা মাস্ক পরতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করবেন, মাস্কের প্রয়োজনীয়তা বুঝাবেন। সবকিছু আইন করে নিশ্চিত হবে না, কিছু বিষয়ে মোটিভেশন দরকার।
উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণ রোধে গত ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। তবে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ও জীবন-জীবিকার প্রশ্নে ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। এরপর ঈদ উদযাপন শেষে ২৩ জুলাই থেকে ফের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। ১৯ দিনের এ বিধিনিষেধ গত ১০ আগস্ট)মধ্যরাতে শেষ হয়েছে।