কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কর্মীদের সরিয়ে নিতে অতিরিক্ত তিন হাজার সৈন্য আফগানিস্তানে পাঠাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের মুখপাত্র নেড প্রাইস এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে নেড প্রাইস বলেন, ‘পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতির আলোকে আমরা কাবুল থেকে আমাদের বেসামরিক উপস্থিতি আরো কমিয়ে আনছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে আফগানিস্তানে কূটনীতিক উপস্থিতি কমে আসবে। এই উপস্থিত কমে যাওয়াকে সহায়তা করতে, প্রতিরক্ষা বিভাগ সাময়িকভাবে অতিরিক্ত সৈন্য হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মোতায়েন করবে।’ পরে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র জন কিরবি অপর এক সংবাদ সম্মেলনে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন দূতাবাস কর্মীদের সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ অভিবাসী ভিসার (এসআইভি) আওতায় আবেদন করা আফগানদের সরিয়ে নিতে তিন হাজার সৈন্য পাঠানোর কথা নিশ্চিত করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জোর দিয়ে বলেন, আফগানিস্তানে এই সৈন্যরা সাময়িকভাবে অবস্থান করবে, দীর্ঘসময় তাদের সেখানে অবস্থানের কোনো পরিকল্পনা মার্কিন বাহিনীর নেই।
জন কিরবি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের সৈন্যদের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে মোতায়েন করা হচ্ছে, আমাদের কমান্ডারদের আত্মরক্ষার স্বাভাবিক অধিকার রয়েছে এবং তাদের ওপর যেকোনো হামলায় তারা জোরদার ও যথার্থভাবে প্রতিহত করতে পারে এবং করবে।’ এদিকে গত শুক্রবার থেকে এক সপ্তাহে আফগানিস্তানে মোট ১২টি প্রাদেশিক রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ তালেবানের কাছে হারিয়েছে আফগান সরকার। গত শুক্রবার প্রথম আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় নিমরোজ প্রদেশের রাজধানী যারানজ দখল করে তালেবান। পরে শনিবার উত্তরের জাওযজান প্রদেশের শেবেরগান দখল করে তারা। রোববার একদিনে উত্তরাঞ্চলীয় তিন প্রদেশ কুন্দুজের রাজধানী কুন্দুজ, সার-ই-পুলের রাজধানী সার-ই-পুল ও তাখার প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানী তালোকান দখল করে নেয় তালেবান যোদ্ধারা। সোমবার উত্তরাঞ্চলীয় সামানগান প্রদেশের রাজধানী আইবাক দখলের মাধ্যমে দেশটির ষষ্ঠ প্রাদেশিক রাজধানী দখলে নেয় তালেবান।
মঙ্গলবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ফারাহ প্রদেশের রাজধানী ফারাহ দখলের মাধ্যমে সপ্তম, উত্তরাঞ্চলীয় বাগলান প্রদেশের রাজধানী পুল-ই-খুমরির মাধ্যমে অষ্টম ও অপর উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ বাদাখশানের রাজধানী ফৈজাবাদ শহর দখলের মাধ্যমে নবম প্রাদেশিক রাজধানীয় নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। বৃহস্পতিবার একসাথে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় গজনি প্রদেশের রাজধানী গজনি, আফগানিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম শহর পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত প্রদেশের রাজধানী হেরাত ও দ্বিতীয় বৃহত্তম দক্ষিণাঞ্চলীয় কান্দাহার প্রদেশের রাজধানী কান্দাহার দখল করে নেয় তালেবান।
দীর্ঘ দুই দশক আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় এক শান্তিচুক্তির মাধ্যমে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করতে সম্মত হয় যুক্তরাষ্ট্র। এর বিপরীতে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে তালেবান সম্মত হয়। এই বছরের মে মাসে সৈন্য প্রত্যাহারের কথা থাকলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এপ্রিলে এক ঘোষণায় ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সৈন্য প্রত্যাহারের কথা জানান। পরে জুলাই সময়সীমা আরো কমিয়ে এনে ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন তিনি। মার্কিনিদের সাথে চুক্তি অনুসারে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারের সাথে তালেবানের সমঝোতায় আসার কথা থাকলে এখনো কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি দুই পক্ষ। সমঝোতায় না পৌঁছানোর জেরে তালেবান আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে। সমঝোতা না হওয়ার জন্য আফগান সরকারকে অভিযুক্ত করছে তালেবান। এরমধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত সংযোগসহ গ্রাম ও পার্বত্য অঞ্চলের বেশিরভাগই তালেবান দখল করে নিয়েছে। সূত্র : আলজাজিরা