মাদক মামলায় রিমান্ড শেষে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে নেয়া হয়েছে ঢালিউড অভিনেত্রী পরীমনিকে। গত শুক্রবার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টায় কাশিমপুর কারাগারে প্রবেশ করেন তিনি। পরীমনি আটক হওয়ার পর থেকেই নিশ্চুপ দেখা গেছে ইন্ডাস্ট্রির শিল্পী ও কলাকুশলীদের। এ নিয়ে অনেক সমালোচনাও হয়েছে। অবশেষে প্রায় ১০ দিন পর এ প্রসঙ্গে মুখ খুললেন শাকিব খান। তিনি ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে লেখেন, খেয়াল করছিলাম, অপেক্ষাও করছিলাম। প্রত্যাশা ছিলো, বিপরীতে বেড়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। গত কয়েকদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনির হেফাজতে থেকে শুক্রবার আদালতের নির্দেশে পরীমনিকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সহকর্মী হিসেবে যতোদূর জানি পরীমনি বাবা-মা হীন। তার বেড়ে ওঠা পারিবারিকভাবে আর পাঁচটা তরুণ-তরুণীর বেড়ে ওঠা, স্ট্রাগলে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। হয়তো সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে পরীমনি অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। ১০ আগস্ট আদালত চত্বরে পরীমনির শতবর্ষী নানা তার নাতনিকে দেখতে ছুটে গিয়েছিলেন। করোনার এই ভয়াবহতাও আটকাতে পারেনি তার বৃদ্ধ নানাকে, রক্তকে উপেক্ষা করতে পারেনি রক্ত। কিন্তু সময় কি নিষ্ঠুর! পরীমনির সঙ্গে নাকি দেখাই হলো না বৃদ্ধ নানার। আদালত চত্বরেই পরীমনির নানাকে বলতে শুনেছি, ‘পরীমনি নিজের জন্য জীবনে কিছুই করেনি। সব মানুষের জন্য দান করে গেছে। এখন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘পরীমনির মামলা এখন বিচারাধীন। ওই বিষয়ে কিছু বলছি না। সে যে মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে, তার কী অপরাধ সেটা বিশ্লেষণে যাচ্ছি না। দেশের প্রচলিত আইন আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে। নিশ্চয়ই নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে সঠিক বিচার হবে। কিন্তু তার আগে পরীমনির জীবন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যেভাবে তাকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে, এটা সত্যি দুঃখজনক। আরো দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে, কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে পরীমনি গ্রেপ্তারের পর তার প্রতি কোনো ধরনের সহযোগিতার হাত না বাড়িয়ে, দুঃসময়ে শিল্পীর পাশে না থেকে উল্টো তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। মুহূর্তে পরীমনির সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে! এ যেন কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিঁটে!’ ‘সমিতির এ আচরণ সত্যিই খুব রহস্যজনক। বিষয়টি নিয়ে বিবেকবান অনেক সিনিয়র জুনিয়র শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের আক্ষেপ রয়েছে। শিল্পীর সাথে সংগঠনের এটি একটি অমানবিক আচরণ। প্রশ্ন থেকে যায়, এখনকার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি তাহলে কাদের স্বার্থে? বিগত দিনেও একাধিক সিনিয়র শিল্পী এর চেয়েও ভয়ঙ্কর অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কিন্তু তখনকার শিল্পী সমিতি অভিযুক্ত সদস্যের সদস্যপদ স্থগিত করেনি। বরং পাশে ছিলো, রাস্তায় নেমেছিলো। কিন্তু এখনকার শিল্পী সমিতির এসব আচরণ বিতর্কিত। আবারো বোঝা গেলো, এই শিল্পী সমিতি সবাইকে এক করতে পারেনি বরং বিচ্ছিন্ন করেছে। বিভেদ তৈরি করে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের পরিবেশ নষ্ট করেছে। হয়তো এজন্য চলচ্চিত্রের আজ এ দুর্দশা’- যোগ করেন শাকিব।
তিনি লিখেছেন, এমনিতেই নানা কারণে সিনেমা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তার মধ্যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে সামনে আরো ঘোর বিপদ। যারা পরীমনিকে বিপথে নিয়ে গেছে, তাদেরও খুঁজে বের করা উচিত। পরীমনি ৩০টির বেশি সিনেমার সাথে জড়িত বলে জানতে পেরেছি। তার হাতে আছে আরো বেশকিছু সিনেমা। কিন্তু যারা বছরের পর বছর একটি সিনেমায়ও কাজ না করে দিনের পর দিন শিল্পী সাইনবোর্ড ব্যবহার করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে তাদেরও আয়ের উৎসও খুঁজে বের করা উচিত। সহশিল্পী হিসেবে আশা রাখি, পরীমনির ক্ষেত্রে আইন তার স্বকীয়তা বজায় রাখবে। পরীমনি যখন ফিরবে তার ভুল থেকে শিক্ষাও নেবে। যে শিক্ষা তার আগামী জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। প্রসঙ্গত, পরীমনির বিপরীতে শাকিব খান ‘আরো ভালোবাসবো তোমায়’ ছবিতে অভিনয় করেছেন। এ ছবিটি পরিচালনা করেন এস এ হক অলিক। এছাড়া শফিক হাসানের ‘ধূমকেতু’ সিনেমায়ও জুটি হয়েছেন শাকিব-পরীমনি।