নওগাঁর রাণীনগরে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এক সময়ের সোনালী আঁশ পাটের চাষ। গত কয়েক বছর বাজারে পাটের ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় পাট চাষ কৃষকদের মাঝে নতুন করে সাড়া জাগিয়েছে। কিন্তু কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগলেও পাট চাষ কিংবা পাট জাগ (পচন) দেওয়ায় আধুনিক পদ্ধতি এখনো স্পর্শ করেনি। এতে করে সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ দেওয়া ও আঁশ ছড়ানোর কারণে পাটের গুনগত মান যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি ভাবে পাটচাষীরাও ভালো দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। সচেতনতার অভাবে পাট জাগ দেওয়ার আধুনিক পদ্ধতি রিবন রেটিং পদ্ধতি কৃষকদের মাঝে সাড়া ফেলতে পারেনি। এখনো উপজেলার কৃষকরা সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ দিয়ে আসছেন। ফলে এক দিকে যেমন কমছে পাটের গুনগত মান অন্যদিকে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। প্রথমে পাটের আঁশ ছাড়িয়ে নিতে হয় তারপর পাটের আঁশে রিং আকারে আটি বেঁধে পানির একটি হাউজের মধ্যে জাগ দেওয়া হলে পাটের গুনগত মান ভাল হওয়ার কারণে কৃষকরা পাটের নায্য মূল্য পায়। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ পাট চাষের আধুনিক পদ্ধতি ও কাটার পর পাট পঁচানোর জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করলেও ঝামেলা জনিত কারণে তা মানছেন না কৃষকরা। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে মেস্তা, দেশী ও তোষা জাতের প্রায় ১০০হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। গত বছর উপজেলায় পাট চাষ হয়েছিলো ৭০হেক্টর। বিগত বছরে পাটের ভাল ফলন ও দাম আশানুরুপ পাওয়ায় চাষিরা অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি পাট চাষের দিকে আগ্রহী হয়ে উঠছে। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১৫মন পর্যন্ত পাট উৎপাদন হয়। তবে চাষিদের কৃষি অফিসের পরামর্শে পাট জাগ না দেওয়ায় সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ দেওয়ার কারণে পাটের রং কালো ও গুনগত মান কমে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, খোলা রাস্তায় ধুলাবালির উপর পাট শুকানোর কারণে মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ইতিমধ্যেই কৃষকরা হাটে-বাজারে পাট বিক্রয় শুরু করেছে। স্থানীয় বাজারগুলোতে মান ভেদে প্রতি মন কাচা পাট ৩হাজার থেকে ৩৫শ’ টাকা পর্যন্ত বেচা-কেনা হচ্ছে। উপজেলার ঘোষগ্রামের পাট চাষী আক্কাস আলী জানান, তিনি ধান চাষ কিছু কমিয়ে পাট চাষ করছেন। পাট অনেক প্রয়োজনীয় পণ্য। গত বছর নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে অবশিষ্ট পাট বাজারে বিক্রি করে ভালো দাম পেয়েছি। এছাড়া বাজারে পাটকাঠিরও চাহিদা অনেক বেশি। তাই এই বছর আরো বেশি জমিতে পাট চাষ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম জানান, বিগত বছরগুলোতে পাটের বাজার কম থাকাই এই ফসলের প্রতি চাষীদের আগ্রহ কমে গিয়েছিল। পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যবহার ও চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের গৃহিত নানা পদক্ষেপ আবার নতুন করে পাটের চাহিদা বৃদ্ধি করেছে। যার কারণে বাজারে পাটের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু পাট জাগ (পচন পদ্ধতি) পদ্ধতি বিষয়ে কৃষকরা রিবন রেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে নারাজ। তবুও আমরা আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে পাট চাষীদের সচেতন করার চেস্টা করছি।