পনেরো শতক জমি। অল্প পুঁজি। এক সঙ্গে চার রকমের ফসল। চাষাবাদে সময় কম। লাভও অধিক। একই ক্ষেতে আদা, মরিচ, বেগুন ও ঢ্যাঁড়স চাষ। সামান্য পরিশ্রম আর অল্প পুঁজিতে অধিক গুণ সম্পন্ন ফসলে খুশি আব্দুর রাজ্জাক। পেশায় কৃষক না হলেও চাষাবাদে রয়েছে অন্যরকম ভালো লাগা।
আব্দুর রাজ্জাক একজন স্বাস্থ্যকর্মী। গঙ্গাচড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। পেশাগত ব্যস্ততা রয়েছে। তারপরও অবসর সময়ের অপচয়ে নারাজ তিনি। এ কারণে নিজের একখ- জমিতে মসলা ও সবজি জাতীয় ফসল চাষ করছেন। এক ক্ষেতের চার ফসলে লাভে রয়েছেন।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বড়বিল ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক। সেখানকার ঠাকুরাদহ গ্রামের বাড়ির পাশে তার ওই চার রকমের ফসল ক্ষেত। বাড়ির জৈব সার দিয়ে চলছে ওই জমিতে চাষাবাদ। অফিস শেষে বাড়িতে ফিরে ক্ষেতের পরিচর্যা করেন। তার সঠিক পরিচর্যায় ক্ষেতের চারাগুলো সবল হয়ে উঠে। মরিচ, আদা, ঢ্যাঁড়স আর বেগুনের ফলনে খুশি আব্দুর রাজ্জাক। নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিলি করছেন উৎপাদিত ফসল। কখনো আবার মরিচ, ঢ্যাঁড়স, বেগুন বিক্রি করে তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।
আলাপচারিতায় আব্দুর রাজ্জাক জানান, ক্ষেত থেকে এক মাস ধরে ঢ্যাঁড়স ও বেগুন উত্তোলন করছেন। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে তা আত্মীয়-স্বজনদেরও দিচ্ছেন। কিছুদিন আগে এক ব্যবসায়ীর কাছে দেড় হাজার টাকাতে ক্ষেতের ৮০ কেজি বেগুন বিক্রি করেছেন। মরিচের ফলনও ভালো হয়েছে। বাড়িতে রান্নার প্রয়োজনে উত্তোলন করছেন। তবে এখনো বিক্রি করেননি।
বাড়ির পাশের ১৫ শতকের কম পরিমাণের ওই ক্ষেতে আট হাজার টাকার আদা কিনে রোপন করেছেন আব্দুর রাজ্জাক। আদা ছাড়াও ক্ষেতে ১০০ বেগুন চারা ২০০ টাকায়, ৭৫টি মরিচ চারা ৭৫ টাকায় এবং ৫ টাকার ঢ্যাঁড়স বীজ কিনে ৫০টা ঢ্যাঁড়সের চারা রোপন করেন। এসব রোপন করতে চারজন শ্রমিককে ১ হাজার ছয়শ টাকা মজুরি দেন তিনি। আর জমির হালচাষ করতে তার খরচ হয়েছে ৪০০ টাকা। স্প্রে বাবদ খরচ হয়েছে ৮০০ টাকা। এছাড়া ক্ষেতে বেড়া দিতে দিনমজুরসহ খরচ হয়েছে ৩ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে তার এ জমিতে চাষাবাদে বিনিয়োগ হয়েছে ১৪ হাজার ৮০ টাকা।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পরিকল্পনা মোতাবেক ওই এক সঙ্গে আদা, বেগুন, মরিচ ও ঢ্যাঁড়সের চারা রোপন করেছি। এতে খুব বেশি খরচ হয়নি। অল্প পুঁজি, স্বল্প জমি। তবে নিয়মিত পরিচর্চা করেছি। সঠিক সময়ে স্প্রে করছি। এখন আর তার কোনো খরচ নেই। শুধু পরিচর্যা করতে হবে। ইতোমধ্যে ঢেড়শ, বেগুন, মরিচ উত্তোলন করে বাড়ির পুষ্টির চাহিদা মিটানোসহ আত্মীয়-স্বজনদের দিয়েছি। আরো কিছুদিন ঢ্যাঁড়স উত্তোলন করা যাবে। এছাড়া আদা ক্ষেতের চারদিকে লতা জাতীয় সবজি রোপন করেছি। কয়েকদিনের মধ্যে সবজিও খেতে পারব।
বর্তমানে ক্ষেতে যে পরিমাণ বেগুন রয়েছে, তা আরো ৪-৫ মাস বিক্রি করতে পারবেন। এছাড়া ঢ্যাঁড়স ও মরিচ উত্তোলনও চলছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করায় ফলন ভালো হয়েছে। বাড়ির চাহিদা মিটিয়ে এসব ফসল থেকে চারগুণ বেশি লাভ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি আরও জানান, আদার গাছ সবল হওয়ার পর রোপনকৃত আদা (পিলাই) মাটি থেকে তোলে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। ইতোমধ্যে বেগুন বিক্রি করে দেড় হাজার টাকা পেয়েছেন। আরো প্রায় ৫ মাস বেগুন উত্তোলন করে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে। এতে তার বিনিয়োগ উঠেও লাভ হবে।
এছাড়া অন্যান্য সবজিতে প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে শুধু আদা বিক্রি করে করে ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় করতে পারবেন বলে বিশ্বাস আব্দুর রাজ্জাকের। মাত্র ১৪ হাজার ৮০ টাকার পুঁজি বিনিয়োগ করে চার রকমের ফসল থেকে তার প্রায় ৬০ হাজার টাকা লাভ হবে। আগামীতে আরো বড় পরিসরে এমন রকমারি ফসলের চাষাবাদ করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। এ ব্যাপারে গঙ্গাচড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, আধুনিক চাষাবাদে কৃষক ও নতুন উদ্যোক্তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বাড়ির আশপাশের জমিতে চাষাবাদ বেশি লাভের। অল্প পুঁজিতে লাভবান হতে হলে সঠিক পরিচর্যা ও পরিকল্পনা জরুরি। স্বাস্থ্যকর্মী আব্দুর রাজ্জাকের মতো অনেকেই এখন একই জমিতে বিভিন্ন রকম ফসলের চাষাবাদ করছেন। একই জমিতে একসঙ্গে পুষ্টি ও মসলা জাতীয় বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন।