বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৫ অপরাহ্ন

পরিবেশবান্ধব নতুন প্রযুক্তিতে শর্তমুক্ত প্রবেশাধিকার চায় বাংলাদেশ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২১ আগস্ট, ২০২১

আগামী নভেম্বরে স্কটল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হবে জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৬। এবারের সম্মেলনটি নানা কারণে বাংলাদেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র ‘প্যারিস চুক্তিতে’ ফিরে আসায় পর আটকে থাকা জলবায়ু ফান্ড নতুন করে শুরু হবে। জার্মানি, কানাডাসহ উন্নত দেশগুলো জলবায়ু তহবিলে ১০০ কোটি বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় উন্নত দেশের নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে শর্তমুক্ত প্রবেশাধিকার চায় বাংলাদেশ। এসব কারণে এবার সম্মেলনে বাংলাদেশ অনেক কিছু পাবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৫ সালের প্যারিসে ঐতিহাসিক চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (সবুজ জলবায়ু প্রকল্প) অর্থায়ন আটকে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডা, জার্মানিসহ অন্য উন্নত দেশগুলোও জলবায়ু ফান্ডে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। ২০২১ সালে জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে সম্মেলন করার ঘোষণা দেন। তাই আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তিতে ফিরে আসায় বাংলাদেশ লাভবান হবে।
সম্মেলনে আগে ফলোআপ হিসেবে গত ২২ ও ২৩ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে ‘দ্যা জুলাই মিনিস্ট্রিয়াল’ শীর্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, রাশিয়া, চীন, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যে, সৌদি আরব, ভারত, তুরস্কসহ বিশ্বের শীর্ষ ৪০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানরা ভার্চুয়ালি যোগ দেন। সম্মেলনে জলবায়ু ফান্ডে (১০০ বিলিয়ন ডলার) অর্থায়ন করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আসন্ন কপ-২৬ সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চার-পাঁচটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এর মধ্যে অন্যতম ক্লাইমেট ফান্ডিং। যেটা গত কয়েক বছর ধরে স্থবির হয়ে ছিল। যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তিতে ফেরায় এ বিষয়টি নিয়ে এবার বাংলাদেশ বেশি তৎপর থাকবে। এছাড়াও অবিলম্বে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে নামিয়ে আনার কার্যকর প্রতিশ্রুতি, জলবায়ু তহবিলের ১০০ কোটি বিলিয়ন ডলার ঝুঁকি প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মাঝে সমানভাগে বরাদ্দ করা, জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সৃজনশীল প্রকল্পে প্রধান অর্থনীতির দেশ এবং আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী সংস্থাগুলোর বিনিয়োগ এবং উন্নত দেশগুলোর পরিবেশ থেকে বের হয়ে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি বিনিময়ে জোর দেওয়া হবে। ‘দ্যা জুলাই মিনিস্ট্রিয়াল’ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. আশরাফ উদ্দিন।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসন্ন জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। এপ্রিল মাসে যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে শীর্ষ সম্মেলনে আমি যোগ দিয়েছিলাম। সেখানে উন্নত দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নে ঐকমতে পৌঁছেছেন। তারা আলোচনার টেবিলে আসায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশে হিসেবে আমাদের নেগোসিয়েশন করতে সুবিধা হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন অনুবিভাগ) মো. মিজানুল হক চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তিতে ফেরায় জার্মানি, কানাডাসহ উন্নত দেশগুলো এখন জলবায়ু ফান্ডে অর্থায়ন করতে আগ্রহী হয়েছে। তাই এবারের সম্মেলনটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আলোচনার টেবিলে বাংলাদেশের কী কৌশল হবে, কী কী এজেন্ডাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে তার জন্য কয়েকটি কমিটি কাজ করছে। আগামী মাসের মধ্যে চূড়ান্ত কৌশল ঠিক করতে পারব।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত সচিব মো. মিজানুর রহমান বলেন, পরিবেশ দূষণ রোধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সবাই এখন নতুন নতুন প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছে। এক্ষেত্রে আসন্ন সম্মেলনে এ প্রযুক্তি শেয়ারিং বিষয়ে যাতে অগ্রাধিকার পাই সে চেষ্টা চালাব। তিনি বলেন, উন্নত বিশ্ব এখন পরিবেশবান্ধব সোলারের পাশাপাশি বাতাস থেকে জ্বালানি উৎপাদনের দিকে যাচ্ছে। এসব নতুন নতুন প্রযুক্তি জলবায়ু চুক্তির আওতায় আমরা যেন পাই সেই চেষ্টা করা হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, জলবায়ুর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ডেঙ্গু এবং গত দুই বছর আগে চিকুনগুনিয়ার জন্য জলবায়ু ব্যাপকভাবে দায়ী। জলবায়ুর জন্য উপকূলীয় অঞ্চল থেকে শহরগুলোয় অভিগমনের মাত্রা বেড়ে গেছে। এবারের সম্মেলনে জনস্বাস্থ্য ও অভিগমনের বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচনা করা হবে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কপ-২৬ সম্মেলনের আগে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) গ্রুপে থাকা ৪৬টি দেশ নিয়ে ঐকমতে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে বাংলাদেশ। সেখানে ক্লাইমেট ট্রেড নিয়ে আলোচনা হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নিয়ন্ত্রিত কার্বন নির্গমনের জন্য বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে চাপ তৈরি করতে হবে। এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার (জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন) জাকির হোসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তিতে ফিরে আসায় এবারের সম্মেলনটি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন করে অর্থায়ন হবে, এটা মোটামুটি বুঝা যাচ্ছে। তবে তা যেন অনুদানভিত্তিক হয় সেটি আলোচনা করতে হবে। ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তিতে ‘সবুজ জলবায়ু প্রকল্প’ থেকে যে অর্থায়ন করার কথা ছিল সে অর্থ এখন পর্যন্ত ছাড় হয়নি। কবে ছাড় হবে তা পরিষ্কার করতে হবে। -ঢাকা পোস্ট




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com