নাটক না করে অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে না দিলে সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তিনি। গতকাল শনিবার (২৮ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক ঐক্য ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, দেশের সব ছাত্র সংগঠন, সব শিক্ষক সমাজ, অভিভাবকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে বলছেন। অভিভাবকদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে তাদের ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখা করে না। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকে, কি করে জানা যায় না। তাদের মন মেজাজ ভাল না, তাদের সাথে কথা বলা যায় না। এতে কিশোর শিক্ষার্থীরা বিপথে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সম্ভবত একমাত্র দেশ যেখানে করোনার কারণে দেড় বছর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবিতে আসছি। আমি বলছি, আজকে এই মুহূর্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। তালিবালি করে লাভ নাই। সরকার বলছে, টিকা দিয়ে স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া হবে। টিকা তো দিচ্ছেন না। টিকা আপনাদের কাছে নাই। মান্না বলেন, সরকার বললো- গণটিকা দেবে, একদিন নাটক করার পর বললো টিকা আমাদের কাছে নাই। দুনিয়ার সব বড় বড় টিকা উৎপাদনের প্রতিষ্ঠান বলছে- বিক্রি করার মতো টিকা আমাদের কাছে নাই। তাহলে সরকার টিকা পাবে কোত্থেকে। তিনি বলেন, আজ পত্রিকায় ছেপেছে- সরকার সারাদেশে শতকরা মাত্র ৪ জন লোককে দুই ডোজ টিকা দিতে পেরেছে। আবার কবে থেকে টিকা দেবে তার কোন খবর নাই। তাই ওই ধান্ধা বাদ দিয়ে আজকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিন। আসলে আন্দোলনের ভয়ে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে না। সারা দেশের লোক ছিঃছিঃ করছে। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ১৭ই অক্টোবর কেন, আজকে খুলে দেন। নাহলে সারাদেশের লাখো ছাত্র রাস্তায় নেমে আসবে। অবিলম্বে যদি আমরা জবাব না পাই তাহলে সেপ্টেম্বর থেকে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের বৃহত্তর আন্দোলন শুরু হবে। তবে তিনি আন্দোলনের তারিখ ঘোষণা করেননি। মান্না বলেন, দুনিয়ার বুকে বাংলাদেশের সম্মান নাই। তারা বলছে, আমরা পদ্মা ব্রিজ বানাই, ফ্লাইওভার বানাই। বাংলাদেশ নাকি উন্নয়নের রোলমডেল। সারা বিশ্ব নাকি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। তিনি বলেন, এক মন্ত্রী বলেছেন ওপর থেকে তাকালে নাকি বাংলাদেশকে লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো দেখা যায়। আমি বলছি- লস অ্যাঞ্জেলেস নয় ‘লস্ট বাংলাদেশ’ দেখা যায়। সারা দেশে ২ কোটি মানুষ দরিদ্র হয়ে গেছে। সব জিনিসের দাম বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। কারণ যে কথা দিয়েছিলেন তার একটাও ঠিক রাখতে পারেননি। সমস্ত সেবাখাত লুট করে নিয়ে গেছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, সরকার ছাত্র-শিক্ষক এবং অভিভাবক সবাইকে নিজেদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে নিয়েছে। তারা মনে করছে, ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকরা হচ্ছেন সরকারের শত্রু। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া মানে হচ্ছে সরকারের বিপদ ডেকে আনা। এইজন্য তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না। অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, শিক্ষক নেতা দেলোয়ার হোসেন, মহাসচিব জাকির হোসেন বক্তব্য রাখেন।