চলমান কভিড-১৯ মহামারীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। এক জরিপের তথ্যে দেখা যায়, কভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করতে ঋণগ্রস্ত হয়েছেন ৬৭ শতাংশ পোশাক শ্রমিক, যা প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় বেশি। গতকাল এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশ এবং ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক: ভবিষ্যৎ চিন্তা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে পোশাক খাতের জন্য কী কী পরিবর্তন আনা জরুরি, সে বিষয়গুলো নিয়েও ওয়েবিনারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর পংকজ কুমার, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সাবেক সভাপতি এবং মালেক স্পিনিং মিলের এমডি এ মতিন চৌধুরী, বিজিএমইএর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি এবং মোহাম্মদী গ্রুপের এমডি রুবানা হক, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, শ্রমিকদের পরিশ্রমেই বাংলাদেশের অর্থনীতি চলছে কিন্তু প্রয়োজনের সময় তারাই আর্থিক সুরক্ষা পেল না। শ্রমিকদের সামাজিক অধিকার, ভবিষ্যৎ সুরক্ষার নিশ্চয়তা, আয়বহির্ভূত সুবিধা এবং বিশেষ করে নারীদের শ্রমশক্তিতে আরো কার্যকরভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, মহামারীর ফলে শ্রমিকরা নানা ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্য পড়েছেন। যে কারণে রাষ্ট্র, গার্মেন্ট শ্রমিক, উদ্যোক্তা, গবেষক ও নাগরিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে নেতৃত্ব দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি শ্রমিকদের জন্য বীমাসংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। এ মতিন চৌধুরী বলেন, আগামী কয়েক বছরে পোশাক রফতানি বাজারে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার একটি বড় সুযোগ আছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে কেন্দ্র করে আলোচনায় রুবানা হক বলেন, শ্রমিকদের আসন্ন পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে এবং নতুন ধরনের শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তাসলিমা আখতার মনে করেন, শ্রম আইন অনুযায়ী এখন মজুরি মূল্যায়নের কথা চিন্তা করতে হবে। কারণ শ্রমিকরা সর্বক্ষণ এ নিয়ে হুমকির মুখে থাকেন।
অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা যেহেতু পণ্য রফতানি করছি, উৎপাদনশীলতা কমে গেলে এর অভিঘাত শ্রমিকদের ওপরই বেশি পড়বে। পংকজ কুমার সংলাপে সমাপনী বক্তব্যে বলেন, আমরা শুধু পোশাক খাত নিয়েই কথা বলি। কিন্তু পোশাক খাতের অন্যান্য বাহ্যিক বিষয়, যেমন উন্নয়ন ও অগ্রগতি এবং তা কীভাবে হচ্ছে, সেসবের ওপরও আলোকপাত করা উচিত।