প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, বাংলাদেশের প্রতি তার সমর্থন ও ভালোবাসার জন্য আমরা তাঁকে স্মরণ করব। প্রথম মুখার্জি স্মারক বক্তৃতায় প্রচারিত একটি ভিডিও বার্তায় গত ৩১ আগস্ট তিনি বলেন, প্রণব দাদা ছাড়া এক বছর অতিবাহিত করা কঠিন ছিল। তিনি বাংলাদেশের একজন সত্যিকারের বন্ধু এবং উপমহাদেশের একজন মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তার মৃত্যুবার্ষিকীতে এই মহান ব্যক্তিত্বের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
প্রণব মুখার্জি লিগ্যাসি ফাউন্ডেশন (পিএমএলএফ) ভারতরত্ন প্রণব মুখার্জির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে এবং তার দায়বন্ধতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে নিবেদিত ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু করতে এই বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি এম ভেঙ্কাইয়া নাইডুও অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক এবং ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংও এই উপলক্ষে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শ্রী প্রণব মুখার্জির মৃত্যু উপমহাদেশে বুদ্ধিভিত্তিক তথা রাজনৈতিক অঙ্গনে শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। তিনি (মুখার্জি) আমাদের এই অঞ্চলের আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।’
প্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে তাকে বক্তব্য রাখার আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ‘প্রণব মুখার্জি লিগ্যাসি ফাউন্ডেশন’ বিশেষ করে শর্মিষ্ঠা মুখার্জিকে ধন্যবাদ জানান। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, প্রণব দাদার বাংলাদেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা ছিল। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবদান কখনই ভোলা যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন তরুণ সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি আমাদের সমর্থনের জন্য সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশের স্বীকৃতির জন্য ১৯৭১ সালের জুন মাসে রাজ্যসভায় একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। বাংলাদেশের জনগণ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তার সমর্থনের কথা স্মরণ করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ছিল প্রণব মুখার্জির গভীর সম্মান ও শ্রদ্ধা। তার অবদানের জন্য ভারত সরকার তাকে ভারতরত্ন প্রদান করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অমূল্য অবদানের জন্য ২০১৩ সালে তাকে আমাদের পক্ষ থেকে মর্যাদাপূর্ণ সম্মান ‘মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ প্রদান করা ছিল আমাদের সম্মানের বিষয়।
তিনি বলেন, ভারতরত্ন প্রণব মুখার্জি একটি বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন এবং তিনি তার অসাধারণ প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। তার বহুমুখী প্রতিভা দিয়ে তিনি দক্ষতার সঙ্গে ভারত সরকারের অর্থ, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার অসাধারণ গুণাবলীর কারণে তিনি শেষ পর্যন্ত দেশের প্রথম নাগরিক এবং ভারতের প্রথম বাঙালী রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। স্মৃতিচরণ করে তিনি বলেন, প্রণব মুখার্জী ও তার স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জী সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল এবং অনেক স্মৃতি রয়েছে। শুভ্রা মুখার্জী বাংলাদেশী ছিলেন। প্রণব দাদা এবং শুভ্রা দিদি আমার এবং আমার বোন শেখ রেহানার প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে পরিবারের ১৮ জন ঘনিষ্ঠ জন হত্যার পরে ভারতে আমাদের কঠিন দিনগুলোতে তারা অভিভাবক এবং পারিবারিক বন্ধু হিসাবে আমাদের পাশে ছিলেন। তার চলে যাওয়া ছিল ব্যক্তিগতভাবে আমার এবং আমার পরিবারের জন্য ক্ষতি এবং আমি তাদের দুজকে সবসময় স্মরণ করব।