জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন একজন। আপাত বর্ণনায় খুব সাধারণ দৃশ্য হলেও তাতে কিছুটা বিশেষত্ব ছিল। কারণ হাতের ছবি তোলার যন্ত্রটি ছিল একটি ফিচার ফোন। আর লুঙ্গি পরিহিত ‘শখের ওই ফটোগ্রাফার’ ছিলেন মোহাম্মদ সুরুজ ওরফে সোহেল, পেশায় রিকশাচালক। তার ছবি তোলার ওই দৃশ্য একজন ভিডিও করে আপলোড করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মাত্র দুই মিনিট সাত সেকেন্ডের ভিডিওটি মন ছুঁয়ে যায় নেটিজেনদের, নজর এড়ায়নি ওয়ালটনেরও। নিজেদের প্রতিষ্ঠানের ওই ফিচার ফোনটির গ্রাহক সুরুজকে পুরস্কৃত করেছেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম মুর্শেদ। তাকে দেওয়া হয়েছে নগদ অর্থসহ স¤প্রতি বাজারে আসা ওয়ালটনের ফ্ল্যাগশিপ ফোন ‘প্রিমো জেডএক্সফোর’।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওয়ালটন জানিয়েছে, মোহাম্মদ সুরুজ পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে। রিকশা চালিয়ে করা আয়েই চলে তার ৮ সদস্যের সংসার। ঘরে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী এবং ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে। বর্ণিল এ শহরের বিভিন্ন দৃশ্যের ছবি তুলতে ভালোবাসেন তিনি। সেসব ছবি সন্তানদের দেখান। সন্তানদের মুগ্ধতা ছুঁয়ে যায় তাকেও। শত অভাবের মাঝেও তার মুখের হাসি ফুরায় না। সংসদ ভবনের ছবি তোলার সময় সুরুজের ভিডিওটি ধারণ করে ফেসবুকে আপলোড করেন মাজহারুল হক মুহাজির নামে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার এক শিক্ষার্থী। তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ৩য় বর্ষে পড়ছেন। ভিডিওটি ফেসবুকে আপলোড হতেই তা ছড়িয়ে পড়ে অসংখ্য প্রোফাইলে। ওয়ালটন ফিচার ফোনের ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলোর ফ্রেমিংয়ের মুগ্ধ নেটিজেনরা। অনেকেই সুরুজের কম্পোজিশনের প্রশংসা করছেন। অনেকেই তাকে আখ্যায়িত করেছেন ‘একজন সুখী ফটোগ্রাফার’ হিসেবে। একটি স্মার্টফোন পেলে তার ফটোগ্রাফির শখ যে আরও পূর্ণতা পাবে, সেটাও উল্লেখ করেন অনেকেই। ভিডিওটি নজরে আসে ওয়ালটন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মুর্শেদের। তিনি ওয়ালটন ফোনের ওই গ্রাহককে খুঁজে বের করে পুরস্কৃত করার দায়িত্ব দেন ব্র্যান্ড ম্যানেজার জীবন আহমেদকে। ওয়ালটনের আরেক কর্মকর্তা বিধান হালদারের মাধ্যমে ভিডিও আপলোডকারীর কাছেই ভাইরাল রিকশাচালকের খোঁজ পায় ওয়ালটন। বুধবার ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ রাজধানীর বসুন্ধরায় ওয়ালটন করপোরেট অফিসে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ওয়ালটনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার হাতে বিশেষ উপহার তুলে দেন।
সে সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটনের চিফ মার্কেটিং অফিসার ফিরোজ আলম, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আদনান আফজাল, ডেপুটি অপারেটিভ ডিরেক্টর মাহবুব-উল হাসান, ভিডিও আপলোডকারী মাজহারুল হক মুহাজির প্রমুখ। ওয়ালটন হাই-টেকের এমডি গোলাম মুর্শেদ বলেন, মোহাম্মদ সুরুজ ওয়ালটনের একজন সম্মানিত গ্রাহক। তার ফটোগ্রাফির শখ পূরণের উপলক্ষ্য হতে পেরে আমরা আনন্দিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে যারা সবার কাছে তুলে ধরেছেন, আমি তাদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। মোহাম্মদ সুরুজের মতো মানুষেরা আছেন বলেই ওয়ালটন আজ সবার পছন্দের ব্র্যান্ড হতে পেরেছে। রিকশাচালক মোহাম্মদ সুরুজ জানান, ১৮ বছর ধরে তিনি ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন। নিজের ছবি তোলার শখ পূরণে একটি ফিচার ফোনও কিনতে পারেন নি। বোনের দেওয়া ফোনটিই ছিল তার সম্বল। ওয়ালটনের এমডি তাকে কোম্পানির সবচেয়ে দামি স্মার্টফোনটি উপহার দিয়েছেন। এই ফোনটি তার এবং সন্তানদের অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ করলো। তাছাড়া ওয়ালটনের এমডির দেওয়া নগদ অর্থ তার পরিবারকে সহায়তা করবে।