মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ থাকার পর অবশেষে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর খুলছে দেশের সব মেডিক্যাল কলেজ। এ সময় সশরীরে ক্লাস নেয়া হবে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় তিনি জানান, আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস নেয়া হবে। মোটামুটি এ মাসের ১৩ তারিখ থেকে সশরীরে ক্লাস নেয়া হবে। হয়তো দুয়েকদিন এদিক-ওদিক হতে পারে।’ এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, প্রথম, দ্বিতীয় ও পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস আগে শুরু হবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে অন্যান্য বর্ষের ক্লাস খুলে দেয়া হবে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই আমাদের যে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, নার্সিংসহ কয়েক শ’ প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে আনুমানিক দেড়লাখের মতো শিক্ষার্থী। তাদের লেখাপড়া ফিজিক্যালি বন্ধ ছিল দুই বছর, তারা অনলাইনে ক্লাস করছে। জাহিদ মালেক বলেন, গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়েছে। লকডাউন দিতে হয়েছে কোভিড নিয়ন্ত্রণের জন্য। সেই সাথে আমাদের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হয়েছে। মেডিক্যাল শিক্ষা বিভিন্ন ক্লাস বন্ধ রাখতে হয়েছে। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম বজায় রাখতে চেষ্টা করেছি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশে কোভিডের জন্য শিক্ষাব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে এসেছে। আমাদের দেশেও বিভিন্ন কার্যক্রম নিতে হয়েছে। সবমিলিয়ে ৫০ হাজারের অধিক লোক নিয়োগ দিতে হয়েছে। চার হাজার ডাক্তার, আট হাজার নার্স নিয়োগ দিতে হয়েছে। এ কার্যক্রমগুলো চলমান আছে। ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমও পুরোদমে চালু আছে।
তিনি বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর ধরে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান বন্ধ আছে। অনলাইনে কিছু ক্লাস হলেও মেডিক্যাল শিক্ষায় সশরীরে ক্লাস নেয়া দরকার। তা নাহলে গ্যাপ পড়ে যাবে, আমরা ডাক্তার পাব না। এ কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সশরীরে ক্লাস নেয়া দরকার।’
মেডিক্যাল শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের অবশ্যই রোগীর কাছে যেতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এজন্য মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা প্রথমে নন-কোভিড রোগীদের কাছে যাবে। পর্যায়ক্রমে কোভিড রোগীদের কাছেও মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা যাবে। সবই হবে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।’ ‘প্র্যাকটিক্যালি রোগীর কাছে অবশ্যই যেতে হবে। নইলে ভালো ডাক্তার হতে পারবে না। ক্লাসে গেলে মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।’শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত হতে পারে রোববার: করোনা সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। কবে খুলতে পারে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে রোববার (৫ সেপ্টেম্বর)। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ওই দিন আন্তমন্ত্রণালয় সভা ডাকা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের খোলার বিষয়ে পর্যালোচনা করার জন্য রোববার আন্তমন্ত্রণালয় সভা ডাকা হয়েছে। কারণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত কেবল শিক্ষা মন্ত্রণালয় একা নিতে পারবে না। করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি চলছে। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি আছে। জাতিসংঘ শিশু তহবিল বা ইউনিসেফের গত ২৪ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর কারণে স্কুল বন্ধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম দেশ। দীর্ঘ বন্ধের ফলে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা স্তর পর্যন্ত চার কোটির বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রায় সবকিছু খুলে দেওয়ার পর এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। ১৮ আগস্ট সচিব সভায় করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ও টিকা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২৬ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক সভায় পরিকল্পনা করা হয়, টিকা দেওয়া দেওয়া সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেরা আগামী ১৫ অক্টোবরের পর থেকে খুলতে পারবে।
আর উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায় কি না, সে বিষয়ে করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শ নেওয়া হবে। সেদিনের সভাতেই সিদ্ধান্ত হয়েছিলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে শিগগির আরেকটি সভা অনুষ্ঠিত হবে, যা আগামী রোববার অনুষ্ঠিত হবে। এই সভাতেই বিস্তারিত আলোচনা করে খোলার সিদ্ধান্ত হতে পারে।