মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিক জীবনযাপনে মানুষ একা থাকতে পারে না। জগৎ সংসারে তাকেও সবার সাথে মিলেমিশে চলতে হয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন, সবকিছু একা করার যোগ্যতা বা শক্তি তিনি আমাদের দেননি। একজনকে যেটা দিয়েছেন অন্যজনকে সেটা দেননি। তাই জীবন চলার পথে আমরা পরস্পর একে অন্যের মুখাপেক্ষী।
আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যে নিজেকে অন্যের উপকারে নিয়োজিত রাখতে পারে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে।’ (সূরা আলে ইমরান-১১০)
মানুষের শ্রেষ্ঠ গুণগুলোর অন্যতম হলো পরোপকার। রাসূলুল্লাহ সা: ছিলেন পরোপকারীর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যা রাসূলুল্লাহ সা:-এর ওহি লাভের হাদিস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। নবীজী সা:-এর উপর যখন ওহি অবতীর্ণ হলো, তখন তিনি হজরত খাদিজাতুল কুবরা রা:-এর কাছে এসে বললেন, ‘আমাকে কম্বল দিয়ে আবৃত করো। আমি আমার জীবনের আশঙ্কা করছি।’
তখন খাদিজা রা: তাঁকে অভয় দিয়ে বললেন, ‘আল্লাহ পাক কখনো আপনার অমঙ্গল করবেন না। কারণ, আপনি আল্লাহর সৃষ্টির সেবা করেন, গরিব-দুঃখীর জন্য কাজ করেন, অসহায়-এতিমের ভার বহন করেন, তাদের কল্যাণের জন্য নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।’ (বুখারি-৪৫৭)
ইসলাম সহানুভূতির ধর্ম। ইসলাম মানুষকে সহানুভূতির শিক্ষা দেয়। পরোপকারে ইসলামে অনেক উপকার রয়েছে। হাদিস শরিফে আছে, নবী করিম সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমার ভাইয়ের চেহারায় তাকিয়ে মুচকি হাসাও তোমার জন্য একটি সদকা। সৎকাজের প্রতি আদেশ এবং অসৎকাজ থেকে বাধাপ্রদানও সদকা। পথ হারানো কাউকে সঠিক পথ দেখিয়ে দেয়াটাও তোমার জন্য সদকা। দৃষ্টিশক্তি দুর্বল- এমন কাউকে সহযোগিতা করাও তোমার জন্য সদকা। রাস্তা থেকে পাথর, কাটা আর হাড্ডি সরিয়ে দেয়াও তোমার জন্য সদকা। ভাইয়ের বালতিতে তোমার বালতি থেকে একটু পানি ঢেলে দেয়াও তোমার জন্য সদকা।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস-১৯৫৬)
ইসলাম ধর্মে সব ধরনের ভালো কাজে রয়েছে মহাপুণ্য ও বিশেষ ফজিলত। পরোপকারে মানুষের নিজের কল্যাণ সাধিত হয়। পরোপকার মানুষকে সম্মানের চূড়ান্ত আসনে আসীন করে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘অবশ্যই দান-সদকা মানুষের হায়াত বৃদ্ধি করে। অপমৃত্যু থেকে বাঁচায় এবং অহঙ্কার দূর করে।’ (আল মুজামুল কাবির-১৩৫০৮)
মানুষ একে অপরের সহযোগিতা ছাড়া চলতে পারে না। যে সমাজে পরোপকারিতা নেই সেখানে কোনো শান্তি নেই। পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান শ্রদ্ধা নেই সেই সমাজে। একে অন্যকে সহায়তা করার মাধ্যমে সমাজে শান্তি পরস্পর ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি হয়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, যে ক্ষেত্রে তারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে, তাদের প্রতিদান বর্ধিত করা হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান।’ (সূরা হাদিদ-১৮)
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের জাগতিক সমস্যাগুলোর একটি সমাধান করে দেয়, আল্লাহ তায়ালা তার আখিরাতের সঙ্কটগুলোর একটি মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ গোপন করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখিরাতে দোষ গোপন রাখবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে।’ (সহিহুল মুসলিম-২৬৯৯) উপরোল্লিখিত কুরআনের আয়াত এবং হাদিসের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে, পরোপকার যেভাবে ব্যক্তির জাগতিক জীবনে মর্যাদা বৃদ্ধি করে, তেমনিভাবে পারলৌকিক জীবনের কল্যাণ সাধন করে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পরোপকারের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফিক দান করুন। আলেম, প্রাবন্ধিক