স্বল্পভাষী বা কম কথা বলা মানুষের উত্তম গুণগুলোর অন্যতম। কম কথা বলার কারণে মানুষ বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন বিপদ থেকে বেঁচে যায়। পক্ষান্তরে বেশি কথা বলা বা অহেতুক কাজের কারণে মানুষ বিভিন্ন বিপদে পড়ে। চুপ থাকার মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি পাওয়া যায়। চুপ থাকাটা পরিশ্রমহীন এক উত্তম ইবাদত। হজরত সুলাইমান আ: বলেন, ‘কথা বলাটা যদি রূপা হয়, তাহলে চুপ থাকাটা হবে স্বর্ণ।’ তাছাড়া চুপ থাকার উপকারিতা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা:-এর অসংখ্য হাদিস রয়েছে।
আমাদের সমাজের হানাহানি মারামারি হিংসা বিদ্বেষের যদি কারণ খুঁজতে যাই, তাহলে যেটি পাবো সেটি হলো, আমরা অনর্থক কথাবার্তা ও কাজে জড়ানোর কারণে সেটি হয়। অনিয়ন্ত্রিত লাগামহীন কথাবার্তা আমাদের ঝগড়াঝাটির মূল কারণ। জীবনে যারা অনর্থক কথাবার্তা ও কাজ থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে, তারাই পেরেছে সব ধরনের ফেতনা থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে।
ইমাম আহমদ, দারেমি ও বায়হাকি থেকে বর্ণিতÑ রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে চুপ থাকে সে নাজাত পায়’। (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ, দারেমি)। অন্য হাদিসে হজরত আনাস বিন মালিক রা: থেকে বর্ণিতÑ রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে নিরাপদ থাকতে চায়, তার চুপ থাকাটা আবশ্যক’ (মুসনাদে আবি ইয়ালা, মুসনাদে আনাস বিন মালিক)।
তা ছাড়া চুপ থাকাটা নফল ইবাদত। নফল ইবাদতের মাধ্যমে বান্দাহ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে। অহেতুক কথামালা ও অনর্থক কাজের চেয়ে চুপ থাকাটা অধিক উত্তম ও উপকারী। হজরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে, সে যেন উত্তম কথা বলে, না হয় চুপ থাকে’ (বুখারি ও মুসলিম)।
একবার একজন সাহাবি রাসূলুল্লাহ সা:কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমার ব্যাপারে যে বিষয়ে আশঙ্কা করেন এর মধ্যে বেশি আশঙ্কা করেন কোনটি? রাসূলুল্লাহ সা: তাঁর জিহ্বায় ধরে বললেন, জবানের হিফাজত (সুনানে তিরমিজি)।
দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের কথা ভেবে ইসলাম মানুষকে চুপ থাকার প্রতি উৎসাহিত করেছে। তা ছাড়া সব মানুষ অহেতুক ও অনর্থক কথাবার্তা শুনতে পারে না। এতে তার কষ্ট হয়। অহেতুক ও অনর্থক কথাবার্তার মাধ্যমে আমরা শুধু নিজেরই ক্ষতিসাধন করি না, অন্যকেও কষ্ট দেই। এ ব্যাপারেও আমাদের সচেতন থাকাটা উচিত।
হজরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিতÑ রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হলোÑ অনর্থক কাজকর্ম পরিহার করা’ (সুনানে তিরমিজি)।
আমাদের সামজিক জীবন বিশ্লেষণ করলেও প্রতীয়মান হয় যে, কম কথা বলা বা অনর্থক কাজকর্ম থেকে বিরত থাকাটা আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ সাধনে সহায়ক হবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কম কথা বলা ও অহেতুক অনর্থক কাজকর্ম পরিত্যাগ করার মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমীন। লেখক: আলেম, প্রাবন্ধিক