শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ধনবাড়ীতে আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে শুরু প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্ত যুদ্ধ দিবস পালিত মাধবদীতে জ্যান্ত কই মাছ গলায় ঢুকে কৃষকের মৃত্যু বদলগাছীতে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী কালীগঞ্জে কৃষক মাঠ দিবস ও কারিগরি আলোচনা লতিফ মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন নড়াইলের কালিয়া উপজেলার শ্রীনগর গ্রামে ভ্যানচালককে পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন বরিশালে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী মেলার উদ্বোধন হাতিয়ায় দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার ক্যাম্পাসে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বেলায়েত স্মৃতি কর্ণার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আমিরুল ইসলামের পক্ষে ছাত্রলীগের গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ

‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন’ বিরুদ্ধ মত নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হতে পারে: টিআইবি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

প্রস্তাবিত ‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনের’ খসড়ায় ব্যক্তিতথ্য সুরক্ষার নামে বিরুদ্ধ মত নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া ও স্বাধীন মতপ্রকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি করছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে টিআইবি এই উদ্বেগ প্রকাশ করে।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ব্যক্তিজীবনে যেভাবে ডিজিটাল স্পেসের গুরুত্ব বাড়ছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসব প্ল্যাটফর্মে দেওয়া তথ্যের সুরক্ষায় ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এ জাতীয় আইন করা হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইনটির মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, জনগণের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যক্তি যেন ভার্চুয়াল জগতে নিরাপদ বোধ করেন, তার ব্যবস্থা করা। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে, হতাশাজনক হলেও সত্য যে, ইতিপূর্বে প্রণীত ‘নিরাপত্তা’ ও ‘সুরক্ষা’ শব্দযুক্ত আইনগুলো মোটাদাগে নিবর্তনমূলক হিসেবেই প্রমাণিত হয়েছে।’
‘পাশাপাশি, বিদ্যমান বিতর্কিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ প্রণনয় পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজন যে সকল আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, পরবর্তী সময়ে তার আক্ষরিক প্রতিফলন ঘটেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘নিরাপত্তার’ পরিবর্তে স্বাধীন মতপ্রকাশ ও সরকারের সমালোচনাকারীদের কণ্ঠরোধ করার পাশাপাশি সরকারের অবস্থান সংহত করতে আইনটির যথেচ্ছ ব্যবহার আমরা লক্ষ্য করছি। সময়ের প্রয়োজনে অন্যান্য দেশের আদলে ‘পারসনাল ডেটা প্রোটেকশন আইন’-এর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই সত্যি, কিন্তু শঙ্কার বিষয় হলো আমাদের শাসকগোষ্ঠীর মানসিকতা, প্রবণতা ও উদ্দেশ্য! তাই, প্রস্তাবিত আইনটি যাতে অধিকতর জনবান্ধব, ব্যক্তিতথ্যের সুরক্ষা এবং স্বাধীন মত ও ভাব প্রকাশের সহায়ক হয়, তা নিশ্চিতে বৃহৎ পরিসের সকল পক্ষের অংশগ্রহণে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে আইনটি করায় সরকারকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘তথ্যসূত্রগুলো বলছে আইনের খসড়াটি ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলেও কোনো এক অনির্দিষ্ট কারণে তা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমন লুকোচুরির কারণ ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন রেখে ড. জামান বলছেন, ‘এ পদক্ষেপ আইনটি নিয়ে সাধারণের মধ্যে আলোচনা ও মতামতের সুযোগকে বঞ্চিত করার প্রয়াস বলা যায়, যদিও সাধারণের বৃহত্তর কল্যাণে আইনটি প্রণয়ণের কাজে হাত দিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে সকল সংশয় দূর করতে শিগগির খসড়া আইনটি সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশের মাধ্যমে সর্বসাধারণের মতামতের জন্য উন্মুক্ত করতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।’
‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রস্তাবিত আইনে জনসাধারণের তথ্যের দেখভাল করার জন্য ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ও একজন সরকারি কর্মকর্তাকে ‘মহাপরিচালক’ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হবে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, ‘বিভিন্ন সময়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির পারিবারিক ও ব্যক্তিগত অডিও এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটলেও বিদ্যমান আইনি কাঠামোতে ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়নি। এরকম একটি অবস্থায় প্রস্তাবিত আইনে সংশ্লিষ্ট মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘সরল বিশ্বাসের’ কর্মকা-কে নিষ্কলঙ্ক ও বিচার বহির্ভূত রাখার অসাংবিধানিক বিধান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পাশাপাশি সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদালতের দ্বারস্ত হয়ে ন্যায়বিচার ও প্রতিকার চাইতে পারবে না মর্মে প্রহসনমূলক ধারার অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হয়েছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সমাজের আইনের অংশ হতে পারে না।’
তিনি বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘সময়ের প্রয়োজনে আইনটি যদি প্রণয়ন করা হয়, তাহলে সেটা দেখভাল করার দায়িত্ব মহাপরিচালকের অধীনে কোনো এজেন্সির হাতে নয় বরং একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের মাধ্যমে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির স্বার্থ সুরক্ষাসহ ব্যক্তি গোপনীয়তা ভঙ্গকারী অভিযুক্ত যে কোনো পক্ষকে যাতে আইনের আওতায় আনা যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে, প্রস্তাবিত আইনে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের ‘ডেটা নিয়ন্ত্রণ’ করার উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা’ নির্ধারণ ও মহাপরিচালকের প্রতি তার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার কথা বলা হচ্ছে। যা, গবেষণা ও অধিপরামর্শমূলক কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের কাজকে ভীষণভাবে বাধাগ্রস্ত করবে।’
‘বাংলাদেশ সরকার ফেসবুক ও ইউটিউবের কাছে যত তথ্য চেয়েছে, তার মাত্র ৪০ শতাংশ দিয়েছে’ একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রীর উদ্বৃত্তি উল্লেখ করে ড. জামান বলছে, ‘প্রস্তাবিত আইনটির মাধ্যমে সরকার কি সামাজিক যোগযোগমাধ্যমের শতভাগ নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়! শত প্রতিকূলতার মাঝেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসমূহের কল্যাণে কিছুটা হলেও জনমত তৈরি ও প্রতিবাদমুখর হতে দেখা যায়।’
‘গণমাধ্যমে যেভাবে তথ্য এসেছে, তাতে আইনটির মধ্যে অনেক নিবর্তনমূলক ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে করে স্বাধীন মতপ্রকাশ ও সরকারের সমালোচনাকারীদের নির্বিচারে একহাত নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। ২০১৮ সালে মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে মিথ্যা বলে বিটিআরসির তথ্য সংগ্রহের উদাহরণ, নতুন আইনের অধীনে তা আরও সহজে করার শঙ্কা পুরো মাত্রায় রয়েছে, যার রাজনৈতিকভাবে অপব্যবহারের নতুন সুযোগই বাড়াবে। আর ব্যক্তি তথ্যের সুরক্ষার নামে এমনটা ঘটলে দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্র পিছিয়ে পড়বে, জনকল্যাণ, বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার চর্চা আরও পিছিয়ে যাবে, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ বিরোধী। তাই প্রস্তাবিত আইনটি প্রণয়ন করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানাই’, বলেন ইফতেখারুজ্জামান।
এছাড়া টিআইবি জানিয়েছে, আইনটি জনসাধারণের তথ্যের সুরক্ষার পরিবর্তে কোনোভাবেই যাতে সরকারের বিতর্কিত কর্মকা-, দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে জনমত সৃষ্টি এবং ব্যক্তির মতপ্রকাশ ও বাকস্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করার মাধ্যমে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহৃত না হয়। এ জন্য সরকারকে স্বচ্ছতার সঙ্গে আইন সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনকে একসঙ্গে নিয়ে বৃহৎ পরিসরে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে একটি প্রাগ্রসর এবং সময়োপযোগী জনবান্ধব আইন প্রণয়নের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com