রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৮ অপরাহ্ন

বিশ্ববিদ্যালয়ে ইচ্ছেমতো নিয়োগে লাগাম টানতে আসছে নীতিমালা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যার সেঞ্চুরি পার হলেও এখনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে নেই কোনো নীতিমালা। এ কারণে ইচ্ছেমতো জনবল নিয়োগ, চাকরিচ্যুতি, যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন না দেওয়া, বেতন কমিয়ে দেওয়াসহ নানা ধরনের অভিযোগ বাড়ছে। এসব অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) একটি উপযোগী নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু করেছে। শিগগির এটি চূড়ান্ত করে তা কার্যকর করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সারাদেশে অনুমোদিত ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসবের মধ্যে ৯৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান। প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় এক লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত। তবে যেসব পদে তারা কর্মরত, সেসব পদে নিয়োগে নেই কোনো বিধি বা নীতিমালা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো বিধিমালা না থাকায় অধিকাংশ পদে তদবিরে নিয়োগ দেওয়া হয়। যোগ্য ব্যক্তিরা চাকরির জন্য এলেও তাদের নিয়োগ দেওয়া হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় স্যাররা আমাদের সঙ্গে যখন-তখন অশোভন আচরণ করলেও তার কোনো বিচার করা হয় না অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্মীদের কারণে-অকারণে চাকরিচ্যুতি, অল্প বেতনে নিয়োগ, যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন ধার্য না করা, দীর্ঘদিন চাকরি করেও অবসরে কোনো সুবিধা না দিয়ে বিদায় দেওয়া হয়। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অশোভন আচরণেরও অভিযোগ রয়েছে।
এসব বিষয় আমলে নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা দিতে গাইডলাইন হিসেবে ‘বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা’ প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে ইউজিসি।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অ্যাডমিশন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো বিধিমালা না থাকায় অধিকাংশ পদে তদবিরে নিয়োগ দেওয়া হয়। যোগ্য ব্যক্তিরা চাকরির জন্য এলেও তাদের নিয়োগ দেওয়া হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় স্যাররা আমাদের সঙ্গে যখন-তখন অশোভন আচরণ করলেও তার কোনো বিচার করা হয় না। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে একদিকে আমাদের বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অকারণে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাদের অনেককে এখনো পাওনা টাকা দেওয়া হয়নি। টাকা চাইলে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিদায় করে দেওয়া হচ্ছে। পাওনা টাকা না পেয়ে অনেকে চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে চলে যাচ্ছেন। দেশ-বিদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে এখানে চাকরি করতে এলেও চাকরিচ্যুত হওয়ার ভয়ে দিন পার করতে হয়। করোনা পরিস্থিতিতে একদিকে আমাদের বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অকারণে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাদের অনেককে এখনো পাওনা টাকা দেওয়া হয়নি। টাকা চাইলে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিদায় করে দেওয়া হচ্ছে। পাওনা টাকা না পেয়ে অনেকে চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে চলে যাচ্ছেন। দেশ-বিদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে এখানে চাকরি করতে এলেও চাকরিচ্যুত হওয়ার ভয়ে দিন পার করতে হয়
ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে একটি নীতিমালা তৈরি করা হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো গাইডলাইন বা বিধিমালা নেই। এ বিষয়ে নীতিমালার খসড়া তৈরিতে গত ২২ আগস্ট পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ দত্তকে আহ্বায়ক করা হয়েছে এবং অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর (প্রশাসন) ও ইউজিসি সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামানকে সদস্য করা হয়েছে। কমিটি সূত্রে জানা যায়, এ কমিটি গঠন হওয়ার পর সব সদস্য মিলে বৈঠক করেছেন। এ সংক্রান্ত একটি খসড়া তৈরির কিছু দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হচ্ছে। এটি চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
জানতে চাইলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির বলেন, ইউজিসি কর্মকর্তা-কর্মচারী নীতিমালা তৈরি করছে, কিন্তু বিষয়টি আমাদের অবগত করেনি। কোনো কিছু করা হলে তা আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী আমাদের নিশ্চিত করেছেন। তাই বিষয়টি চূড়ান্ত করার আগে আমাদের মতামত নেয়ার সুপারিশ জানাই।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজেদের নিয়ম মোতাবেক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়। যোগ্যদের যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাই ঢালাওভাবে অভিযোগ তুলে কিছু চাপিয়ে দিলে তা কাজে আসবে না। জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য ও কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ পদ্ধতি ও যোগ্যতা নির্ধারণ, বেতন কাঠামো নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে একটি ইউনিক গাইডলাইন নির্ধারণ করতে নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। এটি চূড়ান্ত হলে সে অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। একই সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালাও যুগোপযোগী করে তোলা হবে। ‘বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী-কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা, বেতন কমিয়ে দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে এ বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। আগামী এক মাসের মধ্যে খসড়া তৈরির কাজ শেষ হবে।’- জাগো নিউজ




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com