জেলার কেশবপুর উপজেলার বিল খুকশিয়ায় মাছের ঘেরের বেড়িতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের ভালো ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।চাষিরা গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।এখানে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে ভাগ্য বদল হয়েছে অনেক কৃষকের।মাছ চাষের পাশাপাশি তরমুজ চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে অনেক চাষি লাভবান হয়েছেন বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রথমবারের মত মাছের ঘেরের বেড়িতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের আবাদে ভালো ফলন পেয়ে বেশ লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে গ্রীষ্মকালীন এ তরমুজ। গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে লাভবান হওয়ায় অনেক কৃষক নতুন করে এ আবাদে ঝুঁকছেন। কৃষি কর্মকর্তারা তরমুজ আবাদ পরিদর্শন করে চাষিদের এ আবাদে উদ্বুদ্ধ করছেন।কেশবপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে শ্রীহরি নদীর তীরে অবস্থিত বিল খুকশিয়া। এ বিলের ৬ হাজার ৩৭৫ বিঘা ফসলি জমি দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর যাবত জলাবদ্ধ থাকায় কৃষকেরা ঠিকমত ফসল ফলাতে পারতেন না। বিলের জলাবদ্ধতা নিরসন করে ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে ২০০৫ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড শ্রীহরি নদীতে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে এবং বিল খুকশিয়ার তলদেশ উঁচু করার জন্য জোয়ার-আঁধার টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ করে। কৃষকরা বিলটিতে মাছের ঘের তৈরি করেন এবং মাছের ঘেরের বেড়িতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ শুরু করেন।চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে তরমুজ চাষ করে কৃষকরা ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন।
সূত্রে জানা গেছে, বিল খুকশিয়ায় বেশির ভাগ ঘেরের বেড়িতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে।এ বিলে তরমুজ চাষ করা কৃষক আব্দুল কুদ্দুস জানান, তিনি ৭বিঘা জমির ঘেরের পাড়ে মান্দা তৈরি করে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। চাষি মহসিন উদ্দিন বলেন, তিনি ১৩ বিঘা মাছের ঘেরের বেড়িতে ১ হাজার ৪০০টি তরমুজের মান্দা তৈরি করে ইতোমধ্যে ফলন পেয়েছেন ২৭৫ মণ।তিনি প্রতি মণ তরমুজ ১ হাজার ২০০ টাকা করে বিক্রি করছেন। সর্বোচ্চ ১২ কেজি ওজনের তরমুজ পেয়েছেন তিনি। কাকবাঁধাল গ্রামের আব্দুল হালিম বলেন, তিনি ১২০টি মান্দা তৈরি করে তরমুজের চাষ করেছেন।উৎপাদিত তরমুজ ট্রাকে করে নিয়ে সাভারের আশুলিয়ায় পাইকারি বিক্রি করে থাকি। চাষিরা জানান, এ সময়ে তরমুজ চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে সম্মৃদ্ধ হচ্ছি। উৎপাদিত তরমুজ যশোর, কালীগঞ্জ, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, বিল খুকশিয়ায় মাছের ঘেরের বেড়িতে তরমুজ চাষ এ এলাকার কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করছে।কানাইডাঙ্গা,কাকবাঁধাল ও ডহুরী গ্রামের এ বিলে এবছর প্রায় ২শ’ চাষি তরমুজ চাষ করেছেন।এখানে সর্বোচ্চ ১৪ কেজি ওজনের তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে।তরমুজ চাষিদের তরমুজ ন্যায্যমূল্যে বিক্রির জন্য সভারের আশুলিয়ায় মার্কেটিংয়ের ব্যাপারে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে। এশিয়ান-১, পাকিজা সুপার, ব্লাক কিং, ব্লাক কুইং জাতের তরমুজ এখানে বেশি আবাদ করা হয়েছে। তরমুজ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, কেশবপুরের বিল খুকশিয়ায় মাছের ঘেরের বেড়িতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের দৃষ্টি নন্দন চাষ হচ্ছে।এখানকার তরমুজ চাষিরা বর্তমান সময়ে ভালো দাম পেয়ে খুশি।উৎপাদিত গ্রীষ্মকালীন তরমুজ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যশোর জেলা শহরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।