রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আজ ৮৯তম জন্মবার্ষিকী নগরকান্দায় দু’গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, ওসি, সাংবাদিকসহ আহত- ৩০ কালীগঞ্জে নানা সংকটে গ্রাম আদালত সুফল পেতে প্রয়োজন কার্যকরী উদ্যোগ কটিয়াদীতে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ মুন্সীগঞ্জে লুন্ঠিত মালামালসহ ৭ ডাকাত গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে বর্ণিল পিঠা উৎসব ছয় মাসেও উদ্ধার হয়নি নিখোঁজ অন্তঃস্বত্তা গৃহবধূ স্বপ্না হিলির রেললাইনের ধারে খেজুর রস নামাতে ব্যস্ত গাছিরা মোহাম্মদিয়া ইসলামী যুব সংঘের উদ্যোগে তাফসীরুল কোরআন মাহফিল সম্পন্ন গাইবান্ধায় ছোটবোন ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে নির্যাতিত গৃহবধূর সংবাদ সম্মেলন

রবের বিধান পালনেই সফলতা

আমিরুল ইসলাম লুকমান:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

মহান আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টির সেরা হিসেবে মানবসন্তানের প্রধান কাজ যথাযথভাবে আল্লাহর আনুগত্য করা, আল্লাহর প্রিয়পাত্র হিসেবে নিজেদেরকে প্রমাণিত করা। যিনি আল্লাহ তায়ালার প্রিয় হতে পেরেছেন, তিনি সফল, তিনি-ই সৌভাগ্যবান। আল্লাহর প্রিয়ভাজন হওয়া যায় শরিয়তের আদেশ পালন ও নিষেধ বর্জনের মাধ্যমে। আল্লাহর একত্ববাদ স্বীকার ও শিরক-কুফর পরিত্যাগ আল্লাহর নিকটভাজন হওয়ার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। সওয়াবের কাজ সম্পাদন এবং গোনাহের কাজ বর্জন মানবজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালন না করে কারোর পক্ষে আল্লাহ তায়ালার প্রীতিভাজন হওয়া সম্ভব নয়। শরিয়তের বিধানাবলি বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই মহান প্রভুর ভালোবাসার পাত্রে পরিণত হয়।
ক. ফরজ-ওয়াজিব বিধান পালন ও হারাম পরিত্যাগ হলো ঈমান আনয়নের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি বান্দার ওপর যেসব বিধান ফরজ করেছি, সেগুলো পালন করার মাধ্যমেই আমার প্রিয়পাত্রে পরিণত হয়। মানুষ নফল ইবাদত করতে করতে একপর্যায়ে আমার ভালোবাসার পাত্রে পরিণত হয়। এরপর সে আমার প্রিয় হয়ে গেলে আমি তার চক্ষু হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে, কর্ণ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শোনে, হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে কর্ম করে ও পায়ে পরিণত হই, যা দিয়ে সে চলাচল করে। সে আমার কাছে চাইলে দান করি, আশ্রয় প্রার্থনা করলে আশ্রয় দান করি’ (বুখারি-৬৫০২)। তেমনিভাবে রোজা, জাকাত, পর্দা, হালাল উপার্জনসহ আরো যত ফরজ ও আবশ্যকীয় বিধান আরোপিত আছে, সেগুলোই প্রিয়পাত্র হওয়ার মূল চাবিকাঠি। ফরজ বিধানের প্রধানতম হলো নামাজ। সময়মতো সব আহকামসহ নামাজ আদায় করা মুক্তির পথ। কিয়ামতের ময়দানে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে। নবী করিম সা: বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের ওপর ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি ফরজ নামাজ কোনো প্রকার ত্রুটি ব্যতীত সঠিকভাবে আদায় করবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন ওয়াদা রক্ষার্থে তাকে দ্রুত জান্নাতে প্রবেশ করাবেন’ (আবু দাউদ-১৪২০)।
খ. বিভিন্ন নফল ইবাদতের মাধ্যেমে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়া যায়। শারীরিক ইবাদতের মধ্যে নফল নামাজ-রোজা। একদা মুআজ ইবনে জাবাল রা:কে নবী করিম সা: বললেন, ‘আমি কি তোমাকে সওয়াবের পন্থা বলে দেবো না? রোজা হলো ঢাল। সদকা গোনাহসমূহকে এমনভাবে ধ্বংস করে দেয় যেমন পানি আগুন নিভিয়ে দেয়। আর মানুষের শেষ রাতের নামাজ’ (তিরমিজি-২৬১৬)। আর্থিক ইবাদত যেমনÑ নফল দান-সদকা। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যারা সচ্ছল অবস্থায়ও এবং অসচ্ছল অবস্থায়ও (আল্লাহর জন্য) অর্থ ব্যয় করে এবং যারা নিজের ক্রোধ হজম করতে ও মানুষকে ক্ষমা করতে অভ্যস্ত। আল্লাহ এরূপ পুণ্যবানদেরকে ভালোবাসেন’ (সূরা আলে ইমরান-১৩৪)। মুখের ইবাদত যেমনÑ কুরআন তিলাওয়াত-জিকির ইত্যাদি আল্লাহর প্রিয় ও ভালোবাসার পাত্র হওয়ার সোপান। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যখন কোনো দল আল্লাহর কোনো ঘরে একত্র হয়ে কুরআন তিলাওয়াত করে, তাদের ওপর রহমত অবতীর্ণ হয়, আল্লাহর রহমত তাদেরকে বেষ্টন করে রাখে, আল্লাহ তায়ালা নিজের মজলিসে তাদের আলোচনা করেন’ (মুসলিম।
গ. কুরআন হাদিসের সঠিক জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার প্রিয়পাত্র হওয়া যায়। ইলমের মাধ্যমেই আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় হয়। মানুষ নিজেকে সংশোধন করতে সক্ষম হয়। গোনাহ ও আমলের জন্য ক্ষতিকর যত বিষয় আছে, সব থেকে বেঁচে থাকার শক্তি অর্জন হয়। আল্লাহ তায়ালা কুরআন-হাদিসের জ্ঞানের ধারক-বাহকদের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘আল্লাহকে তো কেবল তারাই ভয় করে, যারা জ্ঞানের অধিকারী (আলেম)। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমতার মালিক, অতি ক্ষমাশীলও বটে’ (সূরা ফাতির-২৮)।
আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক আলেমদেরকে এই মহান সার্টিফিকেট দানের কারণ, মানুষের মধ্যে আলেমরাই আল্লাহর সব সত্তা-গুণাবলি সম্পর্কে অবগত থাকেন। ফলে আল্লাহর ভয় তাদের মাঝে বিদ্যমান থাকে পরিপূর্ণভাবে। সাহাবায়ে কেরাম রা: নিজেদের ইলম বৃদ্ধির জন্য দূর-দূরান্তের পথ পাড়ি দিতেন। নিজেদের ইলম বৃদ্ধির জন্য দোয়া করতেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে ও যাদেরকে জ্ঞান (ইলম) দেয়া হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন। তোমরা যা কিছু করো, আল্লাহ সে সম্বন্ধে পরিপূর্ণ অবগত’ (সূরা মুজাদালাহ-১১)।
ঘ. উত্তম চরিত্রের যাবতীয় প্রকার অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার প্রিয়পাত্র হওয়া যায়। উত্তম আখলাক এমন একটি গুণ, ঈমানের শক্তিতে যেটা অর্জন করা সম্ভব। উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিই ধর্মের পূর্ণাঙ্গতায় পৌঁছতে পারে। আল্লাহর নিকট মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হন। নবী করিম সা: বলেছেন, ‘তোমাদের ভেতর ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে উত্তম, যার আখলাক সবচেয়ে বেশি ভালো’ (বুখারি-৩৫৫৯)।
হাদিসের এই সুসংবাদের কারণ, উত্তম চরিত্রের মাঝে নবীদের চরিত্র ও পরিমিতিবোধের অনুসরণ হয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি দানের ফলে ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে মানুষ উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে পারে। উত্তম চরিত্রের মাঝে মানুষের জন্য আবশ্যকীয় অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত। যেমনÑ অপরের কল্যাণ কামনা, রাগ দমন, ধৈর্য ধারণ, কথা-কাজে সত্যাবলম্বন, ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখা, সওয়াবের কাজে পরস্পর সহযোগিতা, মানুষের প্রতি দয়াদ্র আচরণ, অপরের জন্য সাহায্য-সহযোগিতা, বিনয় প্রকাশ, দরিদ্র-অভাবীদের প্রতি ইহসান ইত্যাদি। কোন আমলের কারণে অধিকহারে মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে? এই প্রশ্নের জবাবে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহর ভয় ও উত্তম চরিত্র’ (তিরমিজি-২১৩৫)।
লেখক: খতিব, আল মক্কা জামে মসজিদ, শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com