বাংলাদেশ সরকারের অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত বৃহৎ প্রকল্পের মধ্যে কক্সবাজারের মহেশখালী মাতারবাড়িতে চলমান দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দরটি অন্যতম। গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রমে ইতোমধ্যে নতুন করে গতিও ফিরে পা”েছ। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করার আগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি উ”চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল আজ (২৮ সেপ্টেম্বর) প্রকল্পটি পরিদর্শনে আসছে। দেশের গভীর সমুদ্র বন্দরের অভাব ঘুচাতে নেওয়া এই প্রকল্পের কার্যক্রমে যাতে কোনো ধরণের বাঁধা বা সংকট তৈরি না হয় সেজন্য উ”চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল প্রকল্পটি পরিদর্শনে আসছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। একাধিক সূত্রে জানিয়েছেন, দেশের চাহিদার যোগান দিতে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতার প্রায় পুরোটাই ইতোমধ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। ২০৪৩ সালে দেশের চাহিদা ১ কোটি ৪০ লাখ টিইইউএস কন্টেনারে উন্নীত হবে। সেই বিশাল চাহিদা মেটানো চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষে অসম্ভব। দেশের ভবিষ্যত চাহিদা মেটানোর জন্যই মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর দ্রুত গড়ে তোলা জরুরি। এই জরুরি প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত একটি প্রকল্প। প্রকল্পটি পরিদর্শনের জন্য (২৮ সেপ্টেম্বর) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ১৩ সদস্যের একটি উ”চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল নিয়ে মাতারবাড়ি আসছেন। প্রতিনিধিদলটি ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে মাতারবাড়ি আসার কথা রয়েছে। প্রতিনিধিদলে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মন্ত্রী পরিষদ সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল চীফ অফিসার, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব, পুলিশের আইজি, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সহকারী নৌবাহিনী প্রধান, ডিজিএফআইর মহাপরিচালক, এনএসআইর মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক এবং পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক থাকবেন। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) ৬ শত মেগাওয়াট করে মোট ১২শত মেগাওয়াটের দু’টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকালে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের বিষয়টি সামনে উঠে আসে। পরবর্তীতে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ থেকে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের প্রকল্পটিতে সায় দেয়া হয়। ২০১৪ সালে নেওয়া ওই উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১০ মার্চ মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প একনেকের অনুমোদন লাভ করে। এই বন্দরে অনায়াসে ১৬ মিটার ড্রাফটের বৃহৎ আকারের জাহাজ ভিড়ানো যাবে বলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জানা যায়। আর এটিই দেশের গভীর সমুদ্র বন্দরের অভাব ঘুচাবে বলেও উল্লেখ করা হয়। এদিকে মাতারবাড়ি এবং ধলঘাটা মৌজার ১০৮০ একর ভূমিতে বন্দর নির্মাণ করা হ”েছ। এই বন্দর নির্মাণে ব্যয় হ”েছ ১৮ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা। তৎমধ্যে ১৩ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা ঋণ দি”েছ জাইকা। বাকি ২ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ও ২ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা অন্যান্য সং¯’া থেকে সং¯’ান করা হ”েছ। ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জাপানের নিপ্পন কোয়ে এবং দেশীয় ডিডিসি নামের একটি যৌথ কোম্পানিকে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ পাওয়ার পর গত বছরের নভেম্বর থেকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রকল্পের যাবতীয় ডিজাইন, ব্যয় নির্ধারণ, টেন্ডার ডকুমেন্টস তৈরির কাজ শুরু করে। ইতোমধ্যে টেন্ডার ডকুমেন্টস তৈরির কাজ প্রায় শেষ করে আনা হয়েছে। আগামী নভেম্বরে এই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হ”েছ। প্রকল্পটি দুইটি পেজে সম্পন্ন করা হবে। প্রথম পর্বে ড্রেজিং, ব্রেকওয়াটার নির্মাণ, জেটি নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত নির্মাণ সম্পন্ন করা হবে। দ্বিতীয় পেজে গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রয়োজনীয় ইক্যুপমেন্ট সংগ্রহ করা হবে। আগামী নভেম্বরে টেন্ডার আহ্বান করে ২০২২ সালের মার্চ এপ্রিলের মধ্যেই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাণ কাজ শেষ হলে মাতারবাড়ি বন্দরের টার্মিনালে ৮ থেকে ১০ হাজার কন্টেনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। এতে ঘুরে যাবে দেশের অর্থনীতির নতুন চাকা। উল্লেখ্য, গেল বছরের ২৯ ডিসেম্বর সকালে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের জেটিতে ট্রায়াল হিসেবে প্রথম বিদেশেী পণ্যবাহী জাহাজ ভেনাস ট্রাইয়াম্প ভিড়ছিলো। মাতারবাড়িতে প্রথম ওই জাহাজ নোঙ্গর করার মাধ্যমে এ বন্দরের শুভ যাত্রা শুরু হয়েছিলো।